আস সালামু আলাইকুম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আশা করি আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আজ আবার আপনাকে বিরক্ত করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ অধম গোলাম এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আশা করি এ নগণ্য গোলামকে আপনি নিজ দয়াগুনে ক্ষমা করে দিবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঘুর্ণিঝড় 'আম্ফান' প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে। ডেঙ্গুও চোখ রাঙ্গাচ্ছে। করোনা তো আছেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। এটা কতদূর যাবে তা বলা মুশকিল। তা সত্ত্বেও এই করোনা কিন্তু স্বাধীন নয়। এটা অবশ্যই মালিকের অধীন। এর স্থিতিকাল একমাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। তবে তিনি যাকে জানান তিনিও জানেন। যারা আল্লাহ পাকের দোস্ত তাদের কাছে এর খবর থাকতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আগেই বলেছি এই করোনা এমনিতেই আসে নি। কোন দেশে কিংবা সারা বিশ্বে আল্লাহ পাক কঠিন আযাব গজব তখনই দেন, যখন কোন দেশের কিংবা সারা বিশ্বের মানুষ জালেম হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় জালেম মানুষ তখনই হয়, যখন মানুষের সংশোধন ও সতর্ক করার জন্য দয়াময় আল্লাহ পাক কোন বান্দাকে তার দোস্ত করে পাঠান আর মানুষ আল্লাহ পাকের এই দোস্তকে অস্বীকার করে, অবহেলা করে, অবজ্ঞা করে, অমান্য করে , তার ওপর জুলুম নির্যাতন ইত্যাদি করে । এই ব্যাপারে হযরত রাছুলে করিম( সঃ) বলেছেন, খবরদার! আল্লাহর খাস বান্দাদের সাথে হুঁশিয়ার হয়ে চলিও। হাদিসে কুরসীতে আছে- "আল্লাহ বলেছেন, আমার সাথে যদি কোন বান্দা আমার নাফরমানী করে, আমি তা বরদাস্ত করতে পারি। কিন্তু আমার পিয়ারা খাস বান্দার সাথে যদি কেউ নাফরমানী করে, আমার ঐরূপ রাগ হয়, বাঘের বাচ্চাকে কোন অত্যাচার করলে বাঘের যেমন রাগ হয়। ঠিক আল্লাহর পিয়ারা বান্দার সাথে যদি অবজ্ঞা করা হয় বা বিরোধীতা করা হয়, তাহলে আমারও ঐরূপ রাগ হয়।"
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ লক্ষ লক্ষ ভন্ড পীর, ফকীর, মুফতী, ওয়াজিন, ধর্মগুরু, মোহাদ্দেস, মোফাচ্ছের, মাওলানা, মুন্সী, মৌলবী, আলেম, ফাজেল, সুফী, সাধক ইত্যাদি দিয়েই কি ভরপুর থাকবে? এ দেশে কি আল্লাহ পাকের কোন ওলী বা খাস বান্দা থাকবে না, এটা কি হতে পারে? কে ভন্ড আর কে ওলী এটা চিনা অতি সহজ। কখনো কখনো দেখা গেছে একজন ওলীর কারণে একটি জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। আবার কখনো কখনো এমনো দেখা গেছে একজন ওলীর প্রতি অশ্রদ্ধা, অভক্তি ও বিরোধীতার কারণে একটি জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওলী আওলিয়ার আওয়াজে এক শ্রেনীর মানুষ কেঁপে ওঠে। বাঘের ডাক আর বিড়ালের ডাক যেমন কখনো এক হতে পারে না তেমনি ভন্ডদের ডাক আর আল্লাহ পাকের ওলী বা খাস বান্দার ডাক কখনো এক হতে পারে না। তাদের আহ্বানের ভিতরে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে। আল্লাহ পাকের এক খাস বান্দা বা ওলীর জন্যই কোন এলাকা টিকিয়ে রাখেন। যাই হোক, এখন পূর্বের ধারিবাহিক প্রসঙ্গে ফিরে যেতে চাই।
গত চিঠিতে উল্লেখ করেছিলাম যে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন,"নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এই উম্মতের দীনের সংস্কারের জন্য একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক প্রেরণ করিবেন (আবু দাউদ শরীফ)"। ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর মহাপরিচালক জনাব মোঃ আব্দুর রশীদ খান " হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী"(রহঃ) ১ম খন্ড বই এর 'মহাপরিচালকের কথা'য় লিখেছেন, ' প্রতি শতবর্ষ ও সহস্র বছরে আল্লাহ তায়ালা তার দীনকে অনৈসলামিক রীতিনীতি ও কুসংস্কারের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে সঠিকভাবে দুনিয়ার বুকে জিন্দা রাখার জন্য সংস্কারক বা মুজাদ্দিদ পাঠিয়ে থাকেন। এই ধারাবাহিকতায় হিজরী দ্বিতীয় সহস্রের মুজাদ্দিদ হিসেবে আবির্ভূত হন মুজাদ্দিদে আলফেসানী ইমামে রব্বানী শেখ সিরহিন্দ (রহঃ)। তিনি "মুজাদ্দিদিয়া তরীকা" নামে একটি নতুন ধারার তরীকা প্রবর্তন করেন। তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস( রহঃ) বলেন, " হযরত আব্দুর রশীদ গাঙ্গুহী( রহঃ) এই যুগের কুতুবুল ইরশাদ ও মুজাদ্দিদ ছিলেন। হযরত মাওলানা মহিউদ্দীন খান তার "মাসিক মদীনা" পত্রিকার ২০০১ সালের অক্টোবরের সংখ্যায় মুজাদ্দিদগণের একটি তালিকা প্রকাশ করেন । এ ছাড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতেরও মুজাদ্দিদগণের একটি আলাদা তালিকা রয়েছে। এসব তালিকায় ইমামে আযম হযরত আবু হানিফা ( রহঃ), ইমাম হযরত হাম্বলী (রহঃ), চার তরিকার চার ইমাম- হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ), হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ), হযরত বাহা উদ্দিন নকশা (রহঃ), হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী সিরহিন্দী (রহঃ) প্রভৃতি মনিষীগণ। এছাড়া হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহঃ), হযরত জালালুদ্দিন সূয়ূতী( রহঃ), ভারতের হযরত শাহ ওলি উল্লাহ দেলভী( রহঃ), হযরত সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভী (রহঃ), মাওলানা কাসেম নানুতুভী (রহঃ), হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ), হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) ও হযরত আবু বকর সিদ্দিকী ( রহঃ) প্রভৃতি মনিষীগণও মুজাদ্দিদগণের অন্তর্ভূক্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আল্লাহ পাকের বানী, " প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটি নির্দিষ্ট আযাল বা কাল আছে। যখন সেই নির্দিষ্ট আযাল বা কালের সময় হইবে তা এসে যাবে । কেউ তা এক মূহুর্ত আগেও আনতে পারবে না কিংবা এক মূহুর্ত পিছনে নিতে পারবে না (কোরআন)"এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর বানী ," প্রতি শতাব্দীর শিরোভাগে এই উম্মতের সংস্কারের জন্য আল্লাহ পাক একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক প্রেরণ করিবেন, (আবু দাউদ শরীফ)"। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এই বানী সর্বজন স্বীকৃত, গ্রহণযোগ্য ও চলমান আছে। এছাড়াও আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ওলী আওলিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন যারা এ দুনিয়াতে থেকেই ইহকাল ও পরকালের শুভ সংবাদ প্রাপ্ত হবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ওলী আওলিয়ার আগমনের কথা শোনা যায়। এই ওলী আওলিয়ার দ্বারাই শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। আমাদের এই বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের যে ইতিহাস আছে তাতে দেখা যায় ওলী আওলিয়াদের অবদান সর্বশীর্ষে। হযরত শাহজালাল (রহঃ) তার মোর্শেদ হযরত সায়িদ আহমা য়াসাবীর নিকট মুরীদ হয়ে খেলাফত প্রাপ্ত হন এবং তার মোর্শেদের নির্দেশে ইসলাম প্রচারে সিলেটে আসেন। তখন সিলেটের রাজা গৌড় গোবিন্দ। সেই সময়ে গোটা দেশে প্রায় সকলেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। হাতে গোনা কয়েকজন মুসলমান মাত্র। ১৩০৪ সালে হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ ও হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মধ্যে এক যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং গৌড় গোবিন্দ পরাজিত হয়। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেন। আস্তে আস্তে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। এভাবে হিন্দুদের কালচার, কৃষ্টি, রীতিনীতি ত্যাগ করে তারা ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিতে থাকে। আজ সেই সমাজ বদলে নতুন সমাজ হয়েছে। এ বাংলাদেশে আজ শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমান।
সেই সময়ে বঙ্গদেশের বাদশাহ শামস আল দীন ফিরোজ শাহ এর বাহিনী যে হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ এর সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়, সেই গৌড় গোবিন্দই একজন অদক্ষ, অপেশাদার ধর্মগুরুর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হল কেন? কারণ, হযরত শাহজালাল ( রহঃ) ছিলেন আল্লাহ পাকের ওলী। তাই আল্লাহ পাক তাকে সাহায্য করেছিলেন। আল্লাহ পাক যাকে সাহায্য করেন তার বিরুদ্ধে কি কেউ বিজয় লাভ করতে পারে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দ্বাদশ শতাব্দীতে কয়েকজন সঙ্গীসহ ভারতে আসেন হযরত মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহঃ)। তখন ভারতের রাজা পৃথ্বীরাজ। এই পৃথ্বীরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানের রাজা ঘোরি পরাজিত হন। কিন্তু পৃথ্বীরাজ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) ওপর প্রথমে অনেক জুলুম করে। পরে বহু নিদর্শন দেখে তাকে ভারতে থাকতে দেয়। কথিত আছে একদিন রাজা ঘোরি স্বপ্ন দেখে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) তাকে বলতেছে, " ঘোরি, আবার ভারত আক্রমণ কর"। সত্যিই ঘোরি ভারত আক্রমণ করে এবং পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করে। আল্লাহ পাকের যারা ওলী তাদের সাথে আল্লাহর নিবিড় সম্পর্ক থাকে। আল্লাহ পাকের সাহায্যে তারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভবে পরিনত করতে পারেন। ভারতে হিন্দুদের কালচার, কৃষ্টি, রীতিনীতির মধ্যেই তিনি ইসলাম ধর্মের বীজ বপন করেন। আজ সেই ভারতে বহু মুসলমান বসবাস করছে। খাজা হযরত মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহঃ) কে" ভারতের সূর্য" বলা হয়ে থাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই সব ওলী আওলিয়ার মাধ্যমে আল্লাহ পাক ইসলাম ধর্ম পৃথিবীতে টিকিয়ে রেখেছেন। এদেরকে পবিত্র কোরআনে পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই পৃথিবী যতদিন আল্লাহ পাক টিকিয়ে রাখবেন, ততদিন এই সমস্ত ওলী আওলিয়া জগতে মজুদ রাখবেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন জাগে আল্লাহ পাক কি এই সোনার বাংলাদেশে এই রূপ পাহাড়তুল্য কোন ওলী আওলিয়া পয়দা করতে পারেন না যার দ্বারা সমস্ত দুনিয়ার মানুষ ঘোর অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল আলোর জগতে প্রবেশ করতে পারে? পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যদি একাধিক ওলী আওলিয়া আল্লাহ পাক পাঠাতে পারেন, তবে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে কি দু একজন ওলী আওলিয়া পাঠাতে পারেন না?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজ আর আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না। এ গোলামের সকল ভুল ত্রুটি নিজ দয়াগুনে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পাক আপনাকে সত্য বুঝ ও সত্য বিশ্বাসের ওপর সাবেত কদম রাখুন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, ও সুখে থাকুন, আমিন।
ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন
সেক্রেটারি
বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহবায়ক সমিতি
খোলা চিঠি ৭
খোলা চিঠি ৮
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২০ রাত ২:৫১