মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আস সালামু আলাইকুম। এ অধম গোলাম আজকেও আপনাকে একটু বিরক্ত করতে চাই । আল্লাহর ওয়াস্তে নিজ দয়াগুনে অধমকে ক্ষমা করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে একটু গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে পুলিশের অনেক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যেহেতু পুলিশের করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্নভাবে সংস্পর্শে আসতে হয় তাই এদের বেশ কিছু সদস্যদের আলাদা করে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। এদের জন্য মান সম্মত পোশাক ও তা ব্যবহারের বিষয় অবগত করানো প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যথাযথভাবেই করোনা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দোয়া করি আল্লাহ পাক যেন আপনাকে এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ অধমের গোস্তাকি মাফ করবেন। রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে যেমন রোগ তাড়াতাড়ি ভালো হয় ঠিক তেমনি সমস্যার সঠিক কারণ জেনে সমাধানের দিকে এগিয়ে গেলে দ্রুত ও সঠিক সমাধান পাওয়া যায়। আমার কেন জানি মনে হয় করোনা ভাইরাসের মত গজব প্রেরণের কোন নির্দিষ্ট কারণ আছে। এক করোনা দিয়ে আল্লাহ পাক সমস্ত মানবজাতিকে অসহায় করে ফেলেছে। পৃথিবীর সমস্ত বাঘা বাঘা রাষ্ট্র ও তাদের কর্ণধারগণ অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী তো বলেই ফেলেছেন ," পৃথিবীতে করোনার কোন সমাধান নাই, এর সমাধান আছে আসমানে।" বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তো করোনার ছোবলে জম ঘর আইসিইউ পর্যন্ত সওয়ার করে এসেছে। অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ সেলফ কোয়ারেন্টাইন বরণ করে নিয়েছিলেন। পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল উপাসনালয়গুলো পর্যন্ত লক ডাউন করতে হয়েছে। ধর্মের কাজ করতে যেয়ে ভারতে তাবলীগ জামাতের অনেক লোকজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কোন এক মসজিদের ইমাম সাহেবও করোনার ছোবলে মারা গেছে। এতে কি বুঝা যে আল্লাহ্ পাক তাদের ইবাদত বন্দেগিতে রাজিখুশি আছেন? আল্লাহ পাক যদি তাদের ইবাদত বন্দেগী পছন্দ করতেন তাহলে আল্লাহ পাকের গজব করোনায় তাদের আক্রান্ত করত না। যারা এতদিন বলে আসছে মসজিদ আল্লাহর ঘর, তাহলে সেই আল্লাহর ঘরে ইবাদত করলেও আল্লাহর গজব স্বরূপ করোনা ইবাদতকারীকেও ছাড়ে না, এটা কেমন জানি বেমানান মনে হয় না? ইসলামী বক্তা আমির হামজা, মিজানুর রহমান আজহারী সাহেবেরা তো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলেছে, " ওজুর সাথে থাকলে ও নামাজ পড়লে করোনায় আক্রান্ত করতে পারবে না। এরূপ ইবাদত বন্দেগী করলেও যদি করোনায় ধরে তা হলে নাকি কোরআন মিথ্যা হয়ে যাবে।" আমাদের এ সমস্ত ফালতু ওয়াজ আর কতদিন শুনতে হবে? তাদের আর কতকাল ধর্মের উচ্চ আসনে দেখতে হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই তো কিছু সময় আগের কথা, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে আওয়াজ উঠেছিল আজীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামিকে নাকি চাঁদে দেখা গেছে। এটা কি ধোকাবাজি নয়? এ রকম ধোঁকাবাজি যারা ছড়িয়ে দেয়, তারা কি আদৌ ধার্মিক? তারা কি সত্যিই আল্লাহতে বিশ্বাসী? মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে যারা কোন ফায়দা হাসিল করতে চায় তারা কি আল্লাহর শক্তিতে বিশ্বাসী? এদের এই প্রতারনামূলক কথা শুনে আমাদের পরম শ্রদ্ধাষ্পদ ভাইজান বললেন," চাঁদ তো অনেক দূরে। এতই যদি বুজুর্গি থাকে তো লাল দালানের দেয়াল টপকে যাক না। চাঁদে নিজকে দেখানোর দরকার কি। আসলে ঠন ঠন।" আমরা একবার নীলফামারী এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব মোনাজাত ধরলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন, " হে আল্লাহ তোমার যে সমস্ত প্রিয় বান্দাগণ জেল হাজতে আছে তাদের তুমি মুক্ত করে দাও ।" অনেকেই আমিন, আমিন বললেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর আমাদের সেই পরম শ্রদ্ধাষ্পদ ভাইজান আমাদেরকে বললেন, "দেখবেন, এই হুজুরের দোয়া যদি আল্লাহ পাক কবুল করেন তাহলে কোন না কোনভাবে জেল হাজত থেকে তারা থেকে মুক্তি পাবে আর তার দোয়া যদি আল্লাহ পাক কবুল না করেন তাহলে তাদের কঠিন শাস্তি হবে।" তাদের জন্য ভক্তবৃন্দরা মসজিদে মসজিদে লক্ষ লক্ষ বার দোয়া করেছে কিন্তু আল্লাহ পাকের দরবারে তা কবুল হয় নাই। ফলে তাদের ভাগ্যে যা ছিল তা-ই হয়েছে। এ সব বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ দেশের আলেম ওলামাগণ যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল তারা আল্লাহ পাকের ইচ্ছা বুঝতে পারে নাই। আল্লাহ পাক ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে আর তারা ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে অর্থাৎ আল্লাহ পাকের ইচ্ছার বিপক্ষে। কাজেই আল্লাহ পাকই তাদের অপমান, লাঞ্ছনা ও জিল্লতির মালা পরিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো আল্লাহ পাকের ইচ্ছা বুঝতে পারছিনা। আমাদের মনে যা ইচ্ছা তা-ই আমরা করি। আল্লাহ পাকের ইচ্ছা অনিচ্ছার দিকে আমরা খেয়াল করছি না। আমি সদায় ভাবি আমাদের ওপর না আবার আরো কঠিন আযাব আসে। আমি যা বলতে চাই তা এই, আল্লাহ পাক আমাদের কর্ম কান্ডে অত্যন্ত রাগান্বিত। এই অবস্থায় তিনি আমাদের কোন প্রার্থনা কবুল করছেন না। কারণ, আমরা কেউই তার ইচ্ছার দিকে আসছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনার সদয় চিন্তা ভাবনার জন্য আরো কিছু বিষয় বলতে চাই। আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করল, তখন প্রায় সকল বিশ্ব মুসলিম ও আলেম ওলামাবৃন্দ আল্লাহ পাকের কাছে নামাজে, ধ্যানে, খেয়ালে প্রার্থনা করেছে," হে আল্লাহ ইরাককে বাঁচাও, সাদ্দামকে রক্ষা কর।" কই, আল্লাহ তো কারো প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাকও ধ্বংস করল এবং সাদ্দামকেও ফাঁসি দিল। এর পর আমেরিকার নির্বাচনে সবাই আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করল," হে আল্লাহ, বুশকে ফেল করাও, জন কেরিকে নির্বাচনে পাশ করাও ।" আল্লাহ পাক কি কোটি কোটি মুসলমানের এই দোয়া কবুল করেছিলেন? তাদের দোয়ার উল্টো ফল হলো অর্থাৎ বুশ নির্বাচনে জিতে গেল আর জন কেরি ফেল করলো । এখনও প্রতিদিন কোটি কোটি মুসলমান ফিলিস্তিন , অন্যান্য ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষ করে মুসলমানদের পক্ষে সমাধান দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করছে কিন্তু কোন সুফল হচ্ছে কি? বরং জেরুজালেমকে ইসরাইল রাজধানী করলো এবং আমেরিকা তার দুতাবাস সেখানে নিয়ে গেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ সব কথা বলে আপনাকে বিরক্ত করছি এ জন্য যে, যাতে আপনি চিন্তা ভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যাদের দিকে সাধারণ মুসলমান তাকিয়ে আছে তাদের অবস্থার কিছুটা প্রকাশ করলাম যাতে সঠিক পথে চলতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, করোনা ভাইরাস এমনিতে আসে নাই। বিশ্ববাসী মানুষ আল্লাহকে শুধু ভুলেই যায় নাই, তিনি যে একজন আছেন তাও স্বীকার করতে চাইছে না । অনেক দেশেই সমকামিতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ এই সমকামিতার অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ পাক এক জনপদে হযরত লূত (আঃ)কে পাঠিয়েছিলেন । তার কথায় সতর্ক না হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক সেই জনপদ পূরোটাই উল্টে কঠিনতর শাস্তি দিলেন। পবিত্র কোরআনে এ ঘটনাটি আল্লাহ পাক বর্ণনা করেছেন। এমন সাহসী কে আছে যিনি ঐ সমস্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণকে আল্লাহ্ পাকের নাপছন্দের কাজ থেকে বিরত রখবেন? অথবা আল্লাহ পাকের নাপছন্দের কাজের জন্য শাস্তি দিবেন? পারবে এমন কেহ মুসলমান আছে? এক কথায় উত্তর নাই। তাহলে আল্লাহ পাকের হস্তক্ষেপ করার সময় কি এখনো হয় নাই? আল্লাহ পাকের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য এবং তার ইচ্ছা জানানোর জন্য যুগে যুগে যখন ইচ্ছা তিনি একজন বান্দাকে মনোনীত করেন। "বান্দায়ে খাস কুনাৎ লুতফে আম্ রা" অর্থাৎ একজন বান্দা মনোনীত করা হয় সারা জাহানের মঙ্গলের জন্য। একই যুগে আল্লাহ পাকের মনোনীত বান্দা হবেন একজন। আর আজ ঘরে ঘরে আহ্বানকারী। আল্লাহ পাকের মনোনীত দল হবে একটি আর বর্তমানে লক্ষ লক্ষ দল। মিথ্যার সাথে সত্যকে মিথ্যা মনে করা যেমন জুলুম তেমনি মিথ্যাকে সত্য মনে করাও জুলুম। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে যিনি আহ্বানকারী হন তাকে মিথ্যা মনে করা মানে আল্লাহকেই মিথ্যা মনে করা। যে আহ্বানকারী আল্লাহর মনোনীত তাকে অমান্য , অস্বীকার ও মিথ্যা বলার কারণেই আল্লাহ পাক দুনিয়াতে আযাব গজব পাঠান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সারা পৃথিবীব্যাপী এই গজব এমনিতে আসে নাই। নিশ্চয়ই কোন না কোন আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দার উপর জগতের মানুষ জুলুম নির্যাতন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে এই অধমের কথার দিকে একটু খেয়াল দিয়েন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই নালায়েকের অজান্তে কোন ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে নিজ দয়াগুনে ক্ষমা দিবেন। দোয়া করি মহান আল্লাহ পাক যেন আপনার সহায় হোন, সত্য সহজ পথে চলার তৌফিক দান করেন, আমিন।
ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন
সেক্রেটারি
বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহবায়ক সমিতি
খোলা চিঠি ১
খোলা চিঠি ২
খোলা চিঠি ৩
খোলা চিঠি ৪
খোলা চিঠি ৫
খোলা চিঠি ৬
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৪৫