জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট খোলা চিঠি ৬
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ অধম গোলামের সালাম নিবেন। আশা করি আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে ভালো আছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান সময়টা অত্যান্ত কঠিন সময়। আপনার জন্য আরো কঠিন সময়। একদিকে নিজের ও পরিবারের চিন্তা তো আছেই; অন্য দিকে দেশের প্রায় আঠারো কোটি মানুষের বোঝা আপনার মাথার ওপর। দোয়া করি আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলের মঙ্গলের জন্য যথা সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার তৌফিক দান করেন, আমিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। বর্তমানে বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষই অত্যন্ত দুঃসময় পার করছে। তবে যারা দিন আনে দিন খায় ও নিম্ন মধ্যবিত্ত তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় । এদের খাবারের চিন্তা ভাবনা তো আছেই, আরো চিন্তা স্কুল কলেজের বেতন, বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির বিল নিয়ে । এ সব ব্যাপারে আপনার কোন সহযোগিতা পেলে তাদের খুবই উপকার হবে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এসব বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনি কিছু না কিছু ভেবে রেখেছেন। এ গোলামের বেয়াদবির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবার ধর্মীয় বিষয়ে ফিরে যেতে চাই। আল্লাহ পাক প্রত্যেক মানব শিশুর মধ্যে সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত রাখেন। এই মানব শিশু যে পরিবেশের মধ্যে থাকে সেই পরিবেশেই সে বড় হতে থাকে। তার জন্য ভাষা, তাপ, আলো, শীত, বর্ষা ইত্যাদি তেমন কোন সমস্যা নয়। ইংরেজি, আরবি, উর্দু, জার্মান, ফ্রান্স যে কোন মাধ্যমে শিশুরা লেখা পড়া শিখতে পারে। তেমনিভাবে বড় হয়ে কেউ ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, কেউবা মাদ্রাসায় পড়ে মুফতী, মাওলানা ইত্যাদি হয়। যে যে বিষয়ে চর্চা করে সে সে বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। কোরআন, হাদিস, আরবি, উর্দু ইত্যাদি পড়া শুনা ভাগ্যের ব্যাপার নয়। কোরআন, হাদিস, আরবি, উর্দু ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা করলেই যে আল্লাহ পাকের নিকটে পৌঁছে যাবে এমনটা নয়। আল্লাহ পাক কোন ভাষা, ভূখণ্ডের মধ্যে আটকা নয়। তিনিই সকল ভাষা, ভূখণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। তিনি কোন নিয়ম ও বিধানের আওতাধীন নয়। বরং নিয়ম ও বিধান ভাঙ্গা ও গড়া তারই কাজ। মানুষ যখন কোন নিয়ম, নীতি, ভাষা, ভূখণ্ডের পূজারী সাজে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তখনই অধর্ম হয়। আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আমলে মক্কাবাসীদের বিশ্বাস ছিল ইব্রাহীম নবীর ছহিফা না পড়লে কিংবা না জানলে কিংবা ধন সম্পদ না থাকলে কিংবা খেজুরের বাগান না থাকলে কিংবা সমাজের উচ্চ পদস্থ না হলে কেউ আল্লাহর প্রিয় হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ পাক তাদের সে ভ্রান্ত বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন হযরত মুহাম্মদ ( সঃ)কে নবী মনোনীত করে। আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আরবি ভাষায় কোন বই পুস্তক পড়া তো দূরের কথা তার নিজের নামটি পর্যন্ত নিজ মাতৃভাষায় লিখতে পারতেন না। তিনি ছিলেন অসহায়, এতিম, প্রভাব, প্রতিপত্তিহীন , নিরক্ষর, নিঃস্ব দরিদ্র একজন মানুষ। অথচ আল্লাহ পাক তাকে বানালেন সমগ্ৰ মানব জাতির ইহকাল -পরকালের শিক্ষক ও উদ্ধারকর্তা। বর্তমান সময়ের মানুষ আল্লাহ পাকের এই গুণ ও ক্ষমতার কথা ভুলে গেছে। আসলে আল্লাহ পাকের কোন গুণাবলীর পরিবর্তন নাই। তার সকল জ্ঞান, গুণ ও ক্ষমতা তার নিজস্ব ও অপরিবর্তনীয়। সকল মানুষের সকল গুণ সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে প্রাপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী।
ঠিক সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে মক্কাবাসীদের যে ধর্ম বিশ্বাস ছিল বর্তমান যুগের লোকদের সেই একই বিশ্বাস। ধর্ম গ্ৰন্থধারীগণ ধর্ম বেশি বুঝে এটা আগেও যেমন মিথ্যা ছিল, এখনো মিথ্যা এবং ভবিষ্যতেও মিথ্যা হবে। ধর্মের মালিক আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ধর্মের জ্ঞান দান করতে পারেন। আল্লাহ পাক তার পাক কালামে বলেছেন, "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেকমত বা ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন। যাকে এই ধর্ম জ্ঞান দান করেন সে অফুরন্ত কল্যানকর জিনিস প্রাপ্ত হয় । বস্তুত জ্ঞানবান ব্যাক্তি ব্যতীত কেউ ইহা বুঝতে পারে না (২:২৬৯)"। পারস্যের এক বুজুর্গ হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি এই জ্ঞান সম্পর্কে বলেছেন, "বি-নি অন্দর খোদ উলুমে আম্বিয়া, বে-কেতাবো বে-মুয়িদো উস্তাদ।" অর্থাৎ" আল্লাহ পাক যে কাউকে কেতাব পড়া ছাড়া ও শিক্ষক ছাড়া নবী রাসুলগণের এলেম বা জ্ঞান দিতে পারেন"। যিনি এই কথা বললেন তিনি কি এই এলেম বা জ্ঞান পেয়েই বলেছেন নাকি না অনুমান করে বলেছেন? অবশ্যই তিনি এই ধরণের জ্ঞান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন। এমন এক সময় ছিল এদেশে যখন মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির কেতাব পড়া ছাড়া কেউ আলেম হতে পারতো না । তিনি এত শ্রদ্ধাষ্পদ ছিলেন যে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ লাল খয়েরী রঙের ঝুটিওয়ালা রুমি টুপি পরতো। হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি তার নিজের লেখা কেতাব "মসনবী শরীফ" এর ভূমিকায় লিখেছেন এ কেতাব পাক পবিত্র। এটা বিনা ওজুতে ছোঁয়া নিষেধ। তিনি ছিলেন সে যুগের বিখ্যাত কেতাবী আলেম। তিনি তার এক কেতাবের প্রচ্ছদে লিখেছেন," খোদ বা খোদ মোল্লা না শবী, তার গোলামী না করদেন শামসুদ্দীন তাবরেজী।" অর্থাৎ জালালুদ্দিন রুমি এত বড় আলেম হয়েও আল্লাহকে পান নাই সামসুদ্দীন তাবরেজীর গোলামী এখতিয়ার না করা পর্যন্ত । তিনি নিজে স্বীকার করেছেন যে মস্ত বড় আলেম হয়েও তিনি তার পীর সামসুদ্দীন তাবরেজীর চরণ ছাড়া আল্লাহকে পান নাই। অথচ সামসুদ্দীন তাবরেজী পেশায় ছিলেন একজন মুচি। এই যে মুচি শামসুদ্দীন তাবরেজী সে কোথা থেকে জ্ঞান পেল এবং কিভাবে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হলো? তিনি তো কোন কেতাব পড়েন নাই। যার কেতাব না পড়লে আলেম হওয়া যায় না সেই বিখ্যাত ব্যক্তি হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) এর পীর বা মোর্শেদ শামসুদ্দীন তাবরেজী ছিলেন নিরক্ষর । কিন্তু দুঃখের বিষয়, আল্লাহ পাক যে কোন মানুষকে কেতাব পুস্তক ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পড়া ছাড়াও যে জ্ঞান দান করতে পারেন কিংবা প্রিয়জন বা দোস্ত বানাতে পারেন সে বিষয় মানুষ ভুলে গেছে। ফলে যখনই জগতবাসীর ইহকাল ও পরকালের মঙ্গলের জন্য আল্লাহ পাক একজন মানুষকে আপন করে নিয়ে তাকে নিজের পক্ষ থেকে জ্ঞান দান করেন এবং তাকে মান্য করে একদল ও একনীতিভূক্ত হওয়ার আহ্বান করেন তখনই এক শ্রেনীর মানুষের গায়ে জ্বালা ধরে। তাকে স্বাগত জানানোর পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কখনো কখনো তার ঘর বাড়ি, কেতাব পুস্তক জ্বালিয়ে দেয়, আবার কখনো বা তাকে দেশান্তরী করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নবী রাসুল আল্লাহ প্রেরণ করেছেন, এমন একজন নবী রাসুল আসে নাই যার সাথে যুগের লোকেরা হাসি ঠাট্টা, জোর জুলুম, মারধর, দেশান্তরী না করেছে। আল্লাহ পাক স্বয়ং তার পাক কালামে আফসোস করে বলেছেন," আফসোস বান্দাদের জন্য! এমন কোন নবী রাসুল আসেনি যার সাথে যুগের লোকেরা হাসি ঠাট্টা, বেয়াদবি না করেছে।(৩০:৩৬)"। আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পরে সে সমস্ত খাসবান্দা, ওলী আওলিয়া এসেছেন তারাও যুগের আলেম ওলামাদের, রাজা বাদশাহ ইত্যাদি কর্তৃক অপমানিত লাঞ্চিত হয়েছেন। এ যেন যুগের মানুষের ধারাবাহিক চিরন্তন ব্যাধি। এ ধারাবাহিক ব্যাধি থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই? এই আধুনিক যুগের মানুষও যদি পুরানো ও মধ্যে যুগের মানুষের মত আল্লাহ পাকের খাস বান্দা, ওলী আওলিয়াদের ওপর জুলুম নির্যাতন করে তা হলে এ লজ্জা ঢাকার উপায় হবে কি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে অনেক বিরক্ত করলাম। দয়া করে এ অধম গোলামকে নিজ দয়াগুনে ক্ষমা করবেন। আজ এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ পাক আপনার ওপর সদয় হউন, খুশি হউন, ভাল রাখুন, আমিন।
ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন
সেক্রেটারি
বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহবায়ক সমিতি
খোলা চিঠি ১
খোলা চিঠি ২
খোলা চিঠি ৩
খোলা চিঠি ৪
খোলা চিঠি ৫