মোটর গাড়ি নির্মাতা হোন্ডা ১৯৮৬ সালে ঘরের কাজের সাহায্যের জন্য প্রথম মানবাকৃতির রোবট তৈরির কাজ শুরু করে। হোন্ডার প্রকৌশলীরা জানতেন এই রোবটকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে এটি সহজে ঘরের ভেতর ও এর চারপাশে ঘোরাফেরা করতে পারে। আর সে জন্য তাঁরা প্রথমে উদ্যোগ নেন রোবটের পা তৈরি করার। একপর্যায়ে হাঁটার যন্ত্রপাতি ছাড়াও বাহু, হাত এবং অবশেষে তাঁরা রোবটের মাথা তৈরি করে ফেললেন।
১৯৮৬—ধীরে ধীরে হাঁটা
হোন্ডা প্রথমে যে মানবাকৃতির রোবট তৈরি করেছিল তার নাম ছিল ই৩। ই৩ খুব আস্তে আস্তে হাঁটত। একটি পদক্ষেপ নিতে সময় নিত ২০ সেকেন্ড। ওজনের ভারসাম্য ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আরেক পদক্ষেপ ফেলত না।
ফলে খুব বেশি পথ এগোতে পারত না ই৩। কাজেই এ ব্যাপারে হোন্ডার গবেষণা অব্যাহত থাকে।
১৯৮৭—গতিশীল হাঁটা
ই৩ তৈরি করার এক বছরের মধ্যে হোন্ডার প্রকৌশলীরা একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন, যা রোবটকে মানুষের মতো হাঁটতে সক্ষম করল। টুকটুক করে হাঁটা শুরু করল রোবট। এই রোবটের নাম দেওয়া হয় ই১।
১৯৯১
ই১ রোবটের অনুকৃতি ই৪, ই৫ ও ই৬-এ হোন্ডার প্রকৌশলীরা রোবটের হাঁটাকে আরও যথাযথ করলেন। এসব রোবট ঢালুপথে, সিঁড়ি ও বন্ধুর পথেও স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারে।
১৯৯১—মানুষের সঙ্গে বেশি মিল
শরীর, বাহু, হাত ও মাথাসহ পরবর্তী প্রজন্মের (পি১, পি২ ও পি৩) প্রটোটাইপগুলোর অনেক বেশি মিল ছিল মানুষের সঙ্গে। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা ও ৩৮৬ পাউন্ড ওজনের এসব রোবটও স্বচ্ছন্দে সব জায়গায় হাঁটতে পারত। হাঁটা ছাড়াও এরা হাত দিয়ে যেকোনো জিনিস আঁকড়ে ধরতে পারত। পি২ রোবটকে কেউ ধাক্কা দিলে তা পড়ে না গিয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করত। পি৩ রোবট তার পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক দ্রুত ও আরও স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারত। এর উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, ওজন ছিল ২৮৭ পাউন্ড।
১৯৯৭—অ্যাসিমো
হোন্ডা তার মানবাকৃতির নতুন নাম দেয় অ্যাসিমো। এরই মধ্যে এর ব্যাপক পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হয়। এটি হাঁটতে থাকে সুন্দরভাবে এবং সব পরিবেশের সঙ্গে অ্যাসিমো নিজেকে মানিয়ে নেয়। পশ্চােদশ সংযোজন করায় এটি শরীর ঘোরাতে পারে স্বচ্ছন্দে। অ্যাসিমোকে ঘর-গেরস্থালির কাজসহ অন্যান্য কাজে লাগানোর জন্য প্রকৌশলীরা এর উচ্চতা কমিয়ে চার ফুটে নিয়ে এলেন। এ রকম উচ্চতা দেওয়ার ফলে অ্যাসিমোর পক্ষে টেবিল পরিষ্কার, লাইটের সুইচ জ্বালানো ও নেভানো এবং দরজার নক ঘোরানোসহ অনেক টুকিটাকি কাজ করা সহজ হয়ে যায়। প্রকৌশলীরা অ্যাসিমোর ওজন কমিয়ে ১১৫ পাউন্ড বা ৫২ কেজিতে নিয়ে এলেন। ‘প্রেডিক্টেড মুভমেন্ট কন্ট্রোল’ নামের একটি প্রযুক্তি অ্যাসিমোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
২০০৫—শক্তিশালী অ্যাসিমো
হোন্ডার প্রকৌশলীরা অ্যাসিমোর গতিব্যবস্থাকে আরও হালনাগাদ করেন। এর হাঁটার গতি বাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টায় ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত করেন। অ্যাসিমো এখন প্রতি ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার দৌড়াতে পারে। এর উচ্চতা দেওয়া হয়েছে চার ফুট তিন ইঞ্চি বা ১৩০ সেন্টিমিটার। তবে ওজন মাত্র ১১৯ পাউন্ড। অ্যাসিমো চলে লিথিয়াস ব্যাটারিতে। এতে সংযোজন করা হয়েছে আইসি কমিউনিকেশন কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে অ্যাসিমো লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও কথা বলতে পারে। এক যুগ পেরিয়ে অ্যাসিমো এখন অনেকটাই উন্নত।
২০১০ এর অ্যাসিমো এর কথা আর একদিন লিখব।কারণ সে এখন এতই উন্নত যে তার কথা লিখতে গেলে মহাকাব্য লেখা হয়ে যাবে।।
হোন্ডার ওয়েবসাইট অবলম্বনে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




