somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যত্তসব নাকিকান্না!

১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলেন আমরা বিবিধ আবজাব নিয়ে আমার মূল্যবান কথাবার্তা চোখ বড় বড় করে পড়ি! আমার আজকের বিষয় আমি নিজে, নিজেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে একটু দেখব, আজ নিজেকে অসম্ভব অসহ্য লাগছে, কিছু ফ্ল্যাশব্যাক আর কিছু প্যানপ্যানানি সমৃদ্ধ আমার আজকের এই প্রযোজনা!]


কয়েক বছর আগে একটা সময় ছিল যখন আমি নিজেকে পছন্দ করতাম না...কিন্তু গত কয়েক বছরে আমি অনেক বদলে গেছি...হাহাহাহাহা...আমি এখন নিজেকে অনেক লাইক করি...[নার্সিসাস টাইপ না কিন্তু...] তবে সবসময় না, মাঝে মাঝে নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে দলামোচড়া করে ডাস্টবীনে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে, মনে মনে আমি আমাকে প্রায়ই মেরে ফেলি, তাতে অবশ্য সর্বসাধারনের কিছুই হয়না, আমাকে বাইরে আস্ত দেখেই তারা খুশি, আজকালকার মানুষজন ভিতরের খবরে আর মাথা ঘামায় না, বাইরের দেখনদারিতেই [বানান মনে নাই, ভুল হলে, মাফ চাই!] তারা মহা খুশি...

আমার নিজের বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হবে যে সাধারণ মানুষের সাথে আমার পার্থক্য খালি এই যে আমার একটা অনেক পাওয়ার ওয়ালা চশমা আছে...চারিত্রিক কিছু পার্থক্যও প্রকট [উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে আমার মাথা পুরা নষ্ট...সবারতো তা না...তাইনা?]।

আমার প্রথম ভালবাসা বই...যখন থেকে পড়তে শিখলাম তখন থেকে গল্পের বই আমার নেশা...আব্বু আম্মুও মানা করেনাই কখোনও...তাই যখন মন ভাল থাকত বই পড়তাম...মন খারাপ থাকলেও বই ই আমার বন্ধু...এভাবে নিজের চারপাশে একটা জগত তৈরী করে ফেলেছিলাম... যেখানে কারো প্রবেশাধিকার নাই, আমি ছাড়া...কোন কারনে মন খারাপ হলেই একটা বই নিয়ে বসে পড়তাম, নিজের সেই জগতে আমার বইয়ের বন্ধুরা আমাকে স্বান্তনা দিত...আমি কিছু কিছু বই বার বার পড়তাম... এখনও পড়ি...অনেক বার, হাজার বার। আমার কখনই কোন ক্রিকেট খেলোয়ার বা সিনেমার নায়কের উপরে crush ছিলনা...আমি আমার জীবনে প্রথম প্রেমে পড়েছি আলেকজান্ডার বেলায়েভের উভচর মানুষ ইকথিয়ান্ডারের...ওর সাথে স্বপ্নে কত্ত সাগর যে পাড়ি দিয়েছিলাম তার কোন লেখাজোকা নাই... গুত্তিয়েরে শয়তানীটাকে ষাঁড় দিয়ে গুতিয়ে মারা বিবিধ পরিকল্পনায় অলস সময়টা ভালই পার হত!

তারপরে এল অপু...অপু আমার রোমান্টিক প্রেম...মনে আছে কতবার কতদিন আমি স্কুল থেকে এসে গোসল খাওয়া সেরেই বিছানায় লম্বা হতাম বই হাতে নিয়ে...
মা সর্বজয়ার বকা খেয়ে ছোট্ট অপু যখন মুখ গোঁজ করে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে কাঁদত তখন চুপিচুপি দূর্গাকে খবর দিয়ে আমিইতো আনতাম!
আমার অলস দুপুরের রোমান্টিক কল্পনা ছিল অপুর সংসার... অপর্ণার সাথে সাথে অপুর চিঠির জন্য আমিও যে অপেক্ষা করতাম!

তিন গোয়েন্দাও কম যায়না...কিশোরের উপরে তো বন্ধু সমাজে আমি আমার একছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই ফেলেছিলাম...কিন্তু রবিনের চার্ম বা মুসার সুইটনেস ও কম ছিলনা...কিন্তু ওদেরকে বাচ্চা বাচ্চা লাগতো... রোমান্টিসিজমটা আসতনা ঠিক... :P [আমার বরাবরই মাথা বড় {:P} মানুষজন পছন্দ!]

এদের সবার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম বার পড়ার পরই আমার জগতের প্রিয়তম একজন হয়ে গেল ফেলুদা...ঐযে যাকে বলে 'প্রথম দেখায় প্রেম'...ঐ তাই হইল আরকি...পইড়াই ধপাস কইরা আছাড় খাইলাম...আছাড় খেয়ে অবশ্য আমি খুশি...কারন ফেলুদা এক্কেবারে আমার মনের মত...তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, লম্বা[আমি লম্বা পোলাপাইন লাইক করি...নিজে বাট্টূতো তাই... :-S ]...আর লাভের উপর লাভ হল সুদর্শন...[ঐটা ফ্রী...কারণ আই হ্যান্ডছাম মাইনষের পিছে ন দৌড়াই! :|...]...ফেলুদা এখনও আমার অতি প্রিয় একজন...যখনি ওকে মিস করি ফেলুদা সমগ্রটা হাতে নিয়ে বসি...

একটা মজার ব্যাপার হল...সবসময়ই আমার বয়েসের অন্যান্যদের মত কিন্তু আমি কোন ক্রিকেট/ফুটবল খেলোয়ার বা হলিউড বলিউডের কোন নায়কের প্রেমে কখনই পড়িনাই... :( [আমার সিস্টেমে নিশ্চই কুনু বিরাট ফ্রবলেম আছে :-S ]...ছোটবেলায় আমার প্রিয় নায়ক ছিল রবিন উইলিয়ামস আর ডেনজেল ওয়াশিংটন ...আমি এদেরকে পছন্দ করতাম চাচা মামা এইধরণের বেশে...হাহাহাহাহা...আসলে হয়ত আমার কল্পনাশক্তি বেশী বলে আমার কল্পনার ফেলুদা বাস্তবের যেকোন নায়ককে টেক্কা দিত...ঐদিকে আমার বান্ধবীরা সব তখন আফ্রিদি, ভেটরী, ব্র্যান্ডন জুলিয়ান বা শুমাখারের প্রশংসায় পঞ্চমূখ, ওদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড নিয়ে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা আর আমি এককোনে বসে গভীর মনোযোগের সাথে ডুবে আছি মাইকেল স্ট্রগফ-এ ...এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার ছিল [ইয়ে মানে ঠিক ধরেছেন‌...আমি স্কুলেও গল্পের বই নিয়ে যেতাম...বলেন আমি দুষ্টু বালিকা কিনা?...]আর আমার বন্ধুদের সাথে তুমুল তর্কের বিষয় ছিল টিনটিন, ফেলুদা বা সায়নের মত বইয়ের নায়কেরা...কত ঘন্টার পর ঘন্টা যে এর পিছনে ব্যয় করছি তা আর নাই বা বলি...

মাসুদ রানাও ছিল একটা জিনিস...মামা বেদম হট...রানার প্রেমে পরলাম ক্লাস টেনে...[আমি আবার বড়দের বই বড় হয়েই পড়েছি...রানা বড়দের তা বলছিনা...কিন্তু আমার মায়ের চোখে বড়দের...infact রানার প্রথম বই আমাকে পড়তে দিয়েছিল আমার মামা...মরনযাত্রা...উফফ কি বইরে বাবা...!!!]...রানাকে আমি এখনও ভালবাসি...রানা মিয়া এখনও আমার হিরু! ...

এইসব নায়কদের প্রেমে পড়ে পড়ে একটা ব্যাপার হয়েছিল, বাস্তবের কাউকে আমার ভাল লাগতোনা। মজার ব্যাপার হল যে বাস্তবের কেউ তখন আমার ধারেকাছেও ঘেষতোনা, বেদম মোটা, কালো আর চশমাওয়ালীদের কেইবা পছন্দ করে। হয়তোবা একারনেই আমার বয়েসী কোনও ছেলেকে জানা হয়নি আমার! [ অবশ্য আমি ছোটবেলা থেকেই আশেপাশের বাড়ির ছেলেপিলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলতাম {তারা বেশির ভাগই আমার চেয়ে বড় ছিল, আর তাদের কেউ আমাকে মেয়ে হিসেবে জানত না! :| }]
মাঝে মাঝে যে দুঃখ হতনা তা নয়, তখন মনে মনে আমি আড্ডা দিতাম ফেলুদার সাথে বা শঙ্কু আমাকে বলত তার নতুন কোনও আবিষ্কারের কথা!

কিচ্ছু লিখতে ইচ্ছা করছেনা আর, আজ আমার মনটা ভীষণ খারাপ, কাঁদতেও পারছিনা একটুও, কান্নাগুলো সব গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে আছে! অনেক দিন ধরেই একটা কাজ করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আজ যখন করেই ফেললাম তখন মনে হচ্ছে জীবনটা একটা সেইভড গেইম হলে ভাল হত, ইচ্ছামত রিলোড করে খেলতে পারতাম! অতটুকু সুযোগ যখন নেই তখন আর কি করা? কি করলে কি হত বা কি না করলে ভাল হত এইসব আবজাব ভেবেই হয়ত আজ রাতটা যাবে। আমার ব্যাডলাকটাই আসলে খারাপ; কখনই কোনও কিছু ঠিকভাবে হয়না! :(


১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×