somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যাগ: নাম্বার সেভেন...

২২ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার তিনবছরের মেয়েটা সফেদা খেতে খুব পছন্দ করে। এক্কেবারে মায়ের বেটি। ল্যাবএইড থেকে বেরোবার ঠিক আগে আগে আম্মা জোর করে তাই হাতে গুঁজে দিলেন সফেদার একটা থলে, তার নানুভাইয়ের জন্যে। অরণীটার মাথায় তার মায়ের মতোই ক্যারাব্যারা আছে, দুষ্টের শিরোমণি। এই বয়েসেই এমন সব কথা বলে বসে মাঝে মাঝে, মাহফুজ আর আমি হা করে তাকিয়ে ছাড়া কিছু করতে পারি না!

ইসলামপুরের ছোট্ট বাসাটার মতোই আমাদের সংসারটাও নতুন। মাত্র চার বছর হলো মাহফুজের সাথে বিয়ের, এখনও প্রেমের মৃত্যু হয় নাই। মাঝে মাঝেই সন্ধ্যায় পরিটাকে সাজিয়েগুজিয়ে দুজনে রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়াই জাবি ক্যাম্পাসে, খোকন মামার চটপটি চেটেপুটে খাই! অরণীটার সব বিরক্তির প্রকাশ এক শব্দে, "উফফ"! চটপটির ডাল মুখে দিলে গরম হোক বা ঠাণ্ডা চোখ মুখ কুঁচকে একবার উফফ বলবেই দুষ্টটা!

অফিসের বেলী আপার ছেলে অরিত্রর সাথে মিল দিয়ে দুজনে বুদ্ধি করে মেয়েটার নাম রেখেছি অরণী। এরা দুইটা বড় হয়ে প্রেম করবে আমার আর মাহফুজের মতো। এই ভবিষ্যৎ ভাবনায় বেলী আপার সে কী হাসি! মাহফুজ আমাকে আস্তে করে বকে দেয়, বলে পাগল। আমি হাসি, দেখাদেখি পুচ্চি মেয়েটাও হাসে। ছোট্ট গোলগাল নরম চুলে ভরা মাথাটাকে বুকে টেনে নিয়ে মেয়েকে শুধাই, "কিরে বেটি, প্রেম করবি না অরিত্রর সাথে?" অরণী সংক্ষেপে বলে, "কব্বো!"

বেশ কিছুদিন ধরেই মা অসুস্থ! ল্যাবএইডে নিয়ে গেলাম আজকে থরো চেকআপ এর জন্য। অফিস ছুটি নিতে হলো। অবশ্য বেলী আপা আর কণিকাদি আছে, সামলে নিতে পারবে। শ্যামলীতে মাকে নামিয়ে দিয়ে বাসে উঠলাম। সবসময়ের মতো বাস আজও টইটুম্বুর! ঢাকায় আসতে ইচ্ছা করে না এই কারণে। ভাগ্যটা অবশ্য দেখা গেলো আজ বেশি খারাপ না! টেকনিক্যাল পৌঁছাতেই একটা সিট পেয়ে গেলাম। হেডফোনের ভলিউম ঠিক করে চোখ বন্ধ করে আকাশ-পাতালের চিন্তার খেরোখাতা খুলে বসলাম। একনাম্বারে ভাবতে হবে অফিস যাবো নাকি সোজা বাসা! অফিস পৌঁছাতে পৌঁছাতে অবশ্য লাঞ্চ আওয়ার হয়ে যাবে। ঠিক করলাম বাসাতেই যাবো। দুই নাম্বারে আছে, বাসায় গিয়ে দুপুর পার হলে মেয়েটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মনোয়ারা আপার সাথে দেখা করতে হবে। কলতান-এ দিবো ভাবছি অরণীকে এই ডিসেম্বর থেকে। বাচ্চারা কতো জলদি বড় হয়! এইতো ক'দিন আগেই জন্মালো, আর এখনই স্কুলে পড়ার বয়েস হয়ে গেছে! এরপরে হর্টাসে যেতে হবে পাতাবাহারের একটা গাছ আনতে, স্যান্ডেল সারাতে দিবো, অরণীর একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি তুলতে হবে আর আমারটার কয়েকটা প্রিন্ট দরকার। মুরগি কেনা লাগবে, আর কিছু সবজি। ওহহো! ফ্রিজে কী একটা যেন গোলমাল হচ্ছে, পানি পড়েই যাচ্ছে কদিন ধরে, মেকানিক ডাকতে হবে। ঈদ সামনে তার জন্যেও কিছু প্রস্তুতি দরকার। মোট সাতখানা কাজ, আমার লাকি নাম্বার! বেশ ক'বার লিস্টিটা আউড়ে নিয়ে চোখ বুজলাম। অফিস ছুটিটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাই আজ!

বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম, তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাংলো! কান থেকে হেডফোন, হাত থেকে ব্যাগ ছিটকে কই গেলো কে জানে। বাসের সিট থেকে সেই সাথে আমিও। প্রচণ্ড শব্দ, জানালার কাচ ভাঙা, মানুষের চিৎকার, একগাদা পাগলপ্রায় শরীরের সাথে বাড়ি খেতে খেতেও বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে! খুব শখ ছিলো নাসায় গিয়ে জিরো গ্র্যাভিটি অনুভব করার, সেরকম কেমন নিরালম্ব ভাব হলো যেন। হাত পা ভারহীন, শরীরটা পালকের মতো। ভয়াবহ শব্দের সাথে বাসটা গড়িয়ে যেতে লাগলো নিচে। বাসটা উলটে যাচ্ছিলো, ভিতরের যাত্রীরা তালগোল পাকাচ্ছিলো জীবন্ত ময়দার দলার মতো, দুমদাম বাক্স-প্যাটরার বাড়ি খেতে খেতেও একটা বাচ্চা হঠাৎ কোথা থেকে যেন ছিটকে এসে আমার বুকে ধাক্কা খেলো। অরণীর বয়েসি! ঐ সাংঘাতিক অবস্থাতেও বাচ্চাটার জন্যে হাত বাড়িয়েছিলাম! পানিতে পরার আগে এক মহিলার তীব্র চিৎকার শুনেছিলাম মনে হয়, মনে হচ্ছিলো চিৎকারটা বেজে চলছে একনাগাড়ে, আমার মস্তিষ্কের ভিতরে। নিউরনে অনুরণন চলছে টানা!

মৃত্যুর ঠিক আগে আগে নাকি মানুষের পুরো জন্মের স্মৃতিচারণ হয়ে যায়? আমি তো অরণীকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না! অজানা সেই ছোট্ট মা-টাকে বুকে চেপে ধরে ভাবছি আমার মেয়েটার কথা। মা আমার, তোকে কি আর বুকে নিতে পারবো?

এনাম মেডিক্যালের বারান্দায় সার বাধা লাশের মাঝে মাঝ কুড়ির একটা মেয়ের লাশ। শাড়ি পরা, ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে সুতা দিয়ে বাঁধা ছোট্ট একটা ট্যাগ, তাতে লেখা, নাম্বার সেভেন, লাকি নাম্বার!

-------------------------------------------------------------------------
কিছুদিন আগে জাতীয় দৈনিকগুলোতে একটা খবর এসেছিলো বড় করে। সেদিন গুলিটা বলা যায় আমার কানের একেবারে পাশ ঘেঁষে গিয়েছে। ক্লাস ছিলো সেইদিন, অন্যদিনের মতো সেদিনও বৈশাখীতেই সাভার পর্যন্ত গিয়ে লোকালে চেপে জাবি যেতাম। মাত্র মিনিট খানেকের জন্যে বাসটা মিস করি। সামনে দিয়ে যখন চলে যাচ্ছিলো তখন মেজাজ ছিলো তুঙ্গে, ক্লাসে লেট হবো ভেবে। আমিন বাজার পার হবার সময় পরে বুঝি যে যে আমি ডি-লিঙ্ক-এ চড়ে এখন যাচ্ছি তার এটা বোনাস লাইফ!
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×