অ্যানিমিয়া নামটির সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিতি। এর অর্থ রক্ত স্বল্পতা। রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা পর্যাপ্ত কম থাকলেই সেটাকে অ্যানিমিয়া বলা হয় ।
কেন হয় ঃ
মোটামুটি ৩ ভাগে অ্যানিমিয়া হবার কারণকে ভাগ করা যায় ।
১। শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যাওয়া
২। রক্তের উৎপাদনে কমে যাওয়া ।
৩। রক্ত হচ্ছে কিন্তু বেশি মাত্রায় খরচ হয়ে যাচ্ছে । প্রথম কারণটিতে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের সেনোপজ চলাকালীন ও সন্তান জন্মদানের সময় অনেক রক্ত বেরিয়ে যায় । যদি ছেলেদের ক্ষেত্রে হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাকস্থলী বা অস্ত্রের কোন অসুখ আছে। ছোট ছেলেমেয়েদের কৃমির কারণেই এটি বেশি হয়। দ্বিতীয় কারণটি কেন হয় দেখা যাক । লোহিত কণিকা তৈরী হয় বোনম্যারো থেকে, ভিটামিনের অভাবে বা অন্য কোন কিছুর জন্য যদি বোনম্যারো কাজ না করে তাহলে লোহিত কণিকা তৈরীতে বিঘিœত হয় । ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক এসিড রক্ত তৈরীর জন্য খুব জরুরী । অ্যানিমিয়ার ৩য় কারণটি হল হিমোলাইসিস। রক্ত যেটা তৈরী হচ্ছে সেটা মজ্জার মধ্যে খরচ হয়ে যায় ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় ।
অ্যানিমিয়ার উপসর্গ ঃ অ্যানিমিয়ায় মুখ্য উপসর্গ বলতে নিঃশ্বাসের কষ্ট রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দূর্বলতা পা ফোলা ও বুক ধড়পড় করা। অ্যানিমিয়া যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে সে জন্য বছরে একবার রুটিন চেক আপ করা দরকার।
অন্য রোগের পূর্বাভাস ঃ যখন অ্যানিমিয়া অন্য জটিল রোগের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা পড়ে তখন তাকে বলা হয় সেকেন্ডারী অ্যানিমিয়া। সেকেন্ডারী অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে রেনাল ফেলিওর, টিউবার ফিউলোসিস, এইডস রিউমাটয়েড র্আথ্রাইটিস, সিস্টেমিকলুপাস, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ম্যালেরিয়া শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার প্রভূতি রোগের উপসর্গ রূপে ।
কাদের বেশি হয় ঃ অ্যানিমিয়া হওয়ার নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই । সদ্যজাত শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যে কোন বয়সে অ্যানিমিয়া দেখা যেতে পারে। পরিসংখ্যান গত দিক দিয়ে দেখা গেছে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অ্যানিমিয়ায় বেশি ভোগেন। এর কারণ মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় ও সন্তান জন্মদানের সময় অনেক রক্ত হ্রাস ঘটে যা ক্রমাগত পূরণ করার মতো বাড়তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়া খাদ্য লোহা ও প্রোটিনের সুষম বন্টনের অভাব। তাই ক্রমাগত অপুষ্টির ফলে সহজেই রক্ত স্বল্পতা দেখা যায় ।
অ্যানিমিয়া রোগীর খাবার ঃ অপুষ্টি জনিত অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিকল্পিত খাদ্য তালিকা প্রয়োজন।
প্রাতরাশ ঃ দুধ চিনি দিয়ে কর্মফ্লেফস, দুটো ডিম ওমলেট টোস্ট বা হাতে গড়া রুটি জেলি বা মাখন লাগিয়ে দুধ চা বা কফি কমলা লেবু, খেজুর কলা ইত্যাদি।
মধ্যাহ্ন ভোজ ঃ ভাত বা হাতে গড়া রুটি পালংশাকের তরকারী আলুভাজা মুসুরের ডাল মাছ বা মাংস ইত্যাদি ।
বিকালের খাবার ঃ এক কাপ দুধ, চা বিস্কুট ও একটা কেক ।
রাতের খাবার ঃ ভাত অথবা রুটি ডাল কাঁচামাল বেগুন গাজরের তরকারী ইত্যাদি ।
অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা ঃ যে কারণে অ্যানিমিয়া হয়েছে তা জেনে চিকিৎসা করতে হবে। না জেনে ঔষুধ খাওয়া ঠিক নয় । এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা মোটামুটি করা হয় ভিটামিন বি-১২, ফলিক এসিড ও আয়রন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন দিয়ে । ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা নয়। এটা করা হয় রোগীদের সাময়িক ভাবে সামলানোর জন্য যদি হঠাৎ শরীর হোকে অনেক রক্ত বেরিয়ে যায় বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কমে যায় । ঔষুধেল পাশাপাশি সুষম খাবার চালিয়ে যেতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




