somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আলকোরানের দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব এবং তার পূনরাবির্ভাব “

০৮ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ সামুর এক বন্ধু ব্লগারের একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো। আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব এব তার পূনরাবির্ভাব এই বিষয়গুলো নিয়ে একটি পোষ্ট দেওয়া উচিত। আপনার এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি। দোজখ রুপক শব্দ। আমরা তো বলতে পারি না দোজখ কেমন হতে পারে অথবা এর প্রকৃত রুপ কি? প্রিয় পাঠক আমি যতটুকু জানি দোজখ শাস্তি কেন্দ্র মানুষের মৃত্যুর পর সেখানে রাখা হবে। ও বেহেস্ত পূন্যের প্রতিদান প্রাপ্তি কেন্দ্র। কিন্তু এই দোজখ বেহেস্ত যে চিরন্তন বিষয় ঠিক তা নয়। এই মহাবিশ্ব যতদিন টিাকে থাককে ততদিন দোজখ বেহেস্ত থাকবে। মহাবিশ্ব ধ্বংশের পর দোজখ বেহেস্তের অস্তিত্ব থাকবে না। লক্ষ্য করুন আল কোরআন বলে “যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তাদের জন্য আছে হা-হুতাশ আর আর্ত চীৎকার। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান। নিশ্চয় তোমার রব তা-ই করে যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে, তারা জান্নাতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান, অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ। ” সূরাঃ হূদ আয়াতঃ ১০৬-১০৮ । অতএব দোজখ বেহেস্ত চিরন্তন বিষয় নয়। যদি তাই হয় তাহলে মানুষের পাপাচারের শাস্তি স্বরুপ দোজখ এবং পূন্যকর্মের জন্য বেহেস্ত। কিন্তু এখানেই কি শেষ? এরপর কি কিছু নেই?

এখানেই তো আমাদের নির্বাকতা। থমকে যাই। মহাবিশ্ব ধ্বংশ হয়ে যাবে। এখানেই কি শেষ ? না এখানেই শেষ নয়। এই মহাবিশ্ব আবার সৃষ্টি হবে। মানুষের আবারও পুনরুত্থান ঘটবে। এ বিষয়ে আল কোরআন বলছে “যিনি আদিতে সৃষ্টি করেন তিনি আবারও সৃষ্টি করিবেন” (২৭:৬৪) তাহারা কি লক্ষ্য করে না কিভাবে আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করিয়াছেন তিনি অনুরুপ সৃষ্টি করিতে সক্ষম। তিনি উহাদের জন্য স্থির করিয়াছেন একটি কাল। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।” (১৭:৯৯) “সেইদিন আকাশকে গুটাইয়া ফেলিব যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করিয়াছিলাম, সেইভাবে পূনরায় সৃষ্টি করিবো।” (২১:১০৪) এই আয়াত গুলো দিয়ে প্রমানিত হয় এই মহাবিশ্ব একটি সময়ের চক্রে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং তিনি এই মহাবিশ্ব আবারও সৃষ্টি করিবেন একই রুপে একই রকম। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো আসমান জমিন আবার কেনো সৃষ্টি হবে? মানুষ বিহীন তো আসমান জমিন হয় না। তাহলে মানুষ সৃষ্টি আবার হতে হবে। আল কোরআন বলে “আমি উহাদের আঙ্গলের ছাপও পুঙ্খানুপুংখ সৃষ্টি করতে সক্ষম।” আবার ও বলছে “ উহাদের একজনের পুনরুত্থান উহাদের সকলের পুনরুত্থানের অনুরুপ। যেহেতু আল কোরআন আবার মানুষ সৃষ্টির কথা বলছে অতএব মানুষ আবার সৃষ্টি হবে। ‘যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশসমূহকে’ (ইবরাহীম ৪৮)।



বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিচার করলে দেখা যায় সব সময় কিছু না কিছু ছিলো। অথাৎ বিগব্যাংগই সৃষ্টির মূল কারন নয়। এর পূর্বে কিছ ছিলো। এবং আমাদের মহাবিশ্ব ও তার অর্ন্তভুক্ত সকল কিছুই সেই কিছুর বিবর্তিত অবস্থা মাত্র যা সদা সর্বদা বিবর্তনশীল? এটা পরির্স্কার আধুনিক বিজ্ঞানের মতে স্পেস টাইমে চরম শুন্যতা থাকতে পারে না। কোন না কোন কারন বা বিষয় স্পেস টাইমে চরম শুন্যতা সৃষ্টি হতে বাধা দিচ্ছে ? এই বাধা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে মহাবিশ্ব বারেবার সৃষ্টি হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে এটা ভেবে নিতে হয় যে আমরা একটা সাইক্লিক মহাবিশ্বে বসবাস করছি। যা পূন:পূনিক: মিলিয়ে গিয়ে পূনরায় বিগব্যাঙের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে? ঠিক সাইক্লিক নয়, একটি মহাবিশ্ব যা নিরাকারে মিলিয়ে গিয়ে সেই মহাবিশ্বের হিসেবের উপর ভিত্তি করে নতুন মহাবিশ্বের আত্মপ্রকাশ। বিশিষ্ট বিজ্ঞানি ভিলেংকিন সহ অনেকেই কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি এই কনসেপ্ট নিয়ে গবেষনা করছেন। তাদের সকলেই প্রায় একই বেসিক কনসেপ্টের মধ্য দিয়ে ভাবছেন। তাদের প্রস্তবনাটা হলো আমাদের এই মহাবিশ্বটা কোয়ান্টাম টানেলিং নামক প্রক্রিয়ায় অপর একটি মহাবিশ্ব থেকে উদ্ভুত হয়েছে। যে মহাবিশ্বের টাইম axis আমাদের উল্টা। পূর্বের মহাবিশ্বের ওয়েভ ফাংশন যেটা শুন্যতায় মিলিয়ে গিয়ে নতুন মহাবিশ্বের স্পেস টাইমকে আর্বিভ’ত করে। এই বেসিক কনসেপ্টটি একটি মহাবিশ্ব থেকে আরেকটি মহাবিশ্বের transition। তাহলে তার পূর্বের মহাবিশ্বটি কোথা থেকে এলো? এ ক্ষেত্রে আমাদের মেনে নিতে হয় পূর্বের মহাবিশ্বটি তারও পূর্বের একটি মহাবিশ্ব হতে উদ্ভুত। এই ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে একটি মহাবিশ্বের হিসাব নিকাশ তথা পাপ পূন্যের উপর ভিত্তি করে আবার সৃষ্টি হবে। পরের মহাবিশ্বের আবির্ভাব ঘটে।

এমনটি যদি হয় তবে আপনার এ জগতের পাপ পূন্যের উপর ভিত্তি করে আপনার আগামীর মহাবিশ্বর এবং আপনার আগামীর জীবন গঠিত হবে। সেই জগতে আপনার অসহায়ত্ব আপনাকে কষ্ট দিবো। হয়তো জীবনটা চরম কস্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হবে। অথবা হবে চরম সুখের।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের চূড়ান্ত কিছু সীদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে চক্রাকার মহাবিশ্ব নামক একটি তত্ত্ব। পল স্টেইনহার্ট ও নেইল টুরকের চক্রাকার মহাবিশ্ব নামক একটি তত্ত্বে বলেছেন এই মহাবিশ্ব বারে বার সৃষ্টি এবং ধ্বংশ হয়। ষ্ট্রিং তাত্তিকদের উদ্ভাবিত মেমব্রেন এই সৃষ্টি ও ধ্বংশের কারন। তারা তাদের “Endless Universe” বইয়ের মাধ্যমে এসকল তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে এ মহাবিশ্বের কোন শুরু নেই শেষ ন্ইে। এ এক চলমান বিষয়, অনন্ত, অফুরন্ত। সৃষ্টি এবং ধ্বংশের চক্রে আবদ্ধ। এই মহাবিশ্ব যেমন একদা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং আবারও তা হবে; শুরু করবে নতুন চক্রের। আজ থেকে ট্রিয়ন বছর পর আবারও শুরু হবে নতুন চক্রের। ঘটবে নতুন সূচনা। একেকটি চক্র একেকবার মহাবিশ্বকে সৃষ্টি এবং ধ্বংশ করে। শুধু টিকে থাকে একটি চিরন্তন সত্ত্বা।মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর ধ্বংশ হয় কিন্তু ধ্বংশের পর জীবনের মূল সত্ত্বাটি ধ্বংশ হয় না। তা টিকে থাকে অন্য কোন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার মধ্য দিয়ে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে এ বিষয়টি মেনে নিতে হয় মহাবিশ্ব ধ্বংশের পর একটি বিষয় টিকে থাকে যা চিরন্তন যা কখনও ধ্বংশ হয় না। টিকে থাকে চক্রের পর চক্র ধরে। যাকে আমরা অভিহিত করি সৃষ্টির মূল কারন আদি কারন। যার কোন ধ্বংশ নেই চিরন্তন এক সত্ত্বা। যে চেতনার প্রকাশ ঘটে শক্তি ও জ্ঞানের মহা সম্মিলন রুপে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:১৬
১৬টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×