বিবর্তনবাদ নিয়ে আমার দীর্ঘ দিন ধরে কিছু প্রশ্ন আছে? যদিও আমি বিবর্তনের একটি অংশ অথাৎ মাইক্রো এভ্যুলেশন মানি কিন্তু ম্যাক্রো এ্যাভুলেশনটা আমার কাছে কেমন যেনো বেমানান। যদি বিবর্তনবাদই ইদানিং কিছু মৌলবাদী গোড়া বিজ্ঞানমন্স্কদের বিশ্বাসবোধে পরিনত। কিন্তু কিভাবে মাইক্রো ম্যাক্রোতে পরিনত হতে পারে যার সঠিক কোন এ্যাভিডেন্স নেই। আছে অনুমান। জাস্ট সো স্টোরি।
একটি বিষয় আলোচনা করি। প্রকৃতিতেঅসংখ্য ভারী অনু রয়েছে, তবে তাদের মধ্যে প্রাণ নেই। বিজ্ঞান বলছে, কোন বায়ো অণুকে প্রাণ অণু সংগঠনের জন্যে তার নিজের প্রতিলিপি তৈরী করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই প্রতি লিপি তৈরী করার ক্ষমতাকে প্রকারান্তরে জন্মদান ক্ষমতা বলা যেতে পারে। আপনি বলতে পারেন। কারন এককোষি প্রানি নিজে থেকে আলাদা হয়ে দুটিতে পরিনত হয়। সকল প্রাণি দেহে এরকম প্রতিলিপি তৈরীকরণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভারী অনুগুলোই নতুন অনু জন্মদিতে পারে ও নিজে বিবর্র্ততি হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল এই প্রতিলিপি তৈরীকরণ ক্ষমতা ভারী অনুর মধ্যে কিভাবে আসে তার উত্তর আজকের বিজ্ঞানের কাছেও নেই। প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানীরা একে প্রকৃতির নির্দেশণা বা নিয়ম বলে চালিয়ে দিয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন, যদি কোন জৈব অনুর মধ্যে প্রতিলিপিকরণ ক্ষমতা থাকতো তবে প্রকৃতিতে সংশ্লেষণের মাধ্যামে একটি অণু তৈরী হওয়াই যথেষ্ট, নতুন অনু সৃষ্টির জন্যে কাঁচামালের প্রয়োজন হতনা, প্রথমটির প্রতিলিপি করণও ভাঙন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি বায়ো অনুতে ভরে যেত ,কিন্তু এমনটা বাস্তবে দেখা যায়না; এমনকি প্রাণকোষস্থিত বায়ো অনু ছাড়া প্রকৃতিতে অন্যান্ন অসংখ্য বায়ো অণুর কোনটাই স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের প্রতিলিপি তৈরী করতে পারেনা। বিজ্ঞান বলছে, বর্তমান কালের কোষে নির্দেশণা দানকারী দুই প্রকার ভারী অণু তথা নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন রয়েছে, যাদের মধ্যে নিউক্লিক এসিড নিজের প্রতিলিপির নির্দেশণা দানের ক্ষমতা রাখে। নিউক্লিক এসিডে পরিপূরক নিউক্লিওটাইডের (সূত্রক) মধে খাড় জোর থাকার ফলস্রুতিতে তার নিজের সংশ্লেশনের নমুনা প্রদান করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে আর এন এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। একই ভাবে এটি একদিকে যেমন প্রতিলিপিকরণের নমুনা প্রদান করে অন্যদিকে প্রতিলিপিকরনকে ত্বরাণ্বিত করে। এই আর এন এ কে মনে করা হয় বংশানুক্রমিকতার প্রাথমিক উপাদান। আরও মনে করা হয়ে থাকে জৈব রাসায়নিক বিবর্তন আর এন এ অনুর উপর ভিত্তি করেই শুরু হয়েছিল। আর এন এ ও এমাইনো এসিডের মধ্যে নির্দেশিত পারস্পরিক বিক্রিয়ায় (Ordered অনুমুদিত/ নির্দেশিত interactions) সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান বংশানুক্রমিকতার কোড ডি এন এ, যা ক্রমে ক্রমে আর এন এর স্থান দখল করেছে। আর এন এর কার্যোকারিতার ধারণা আধুনীক বিজ্ঞানের পর্যোবেক্ষণ ও পলীক্ষা লব্দ ফলাফল, কিন্তু বিজ্ঞান গলদগর্ম হয়েও এই আর এন এ তৈরীর কৌশল বলতে পারছেনা যেটুকু বলছে তা পর্যোবেক্ষণ লব্দ ধারণার সাথে অনুমানের মিশ্রণ।আমরা এই আলোচনায় বৈজ্ঞানিক অনুমানটুকু যদি মেনেও নেই তাহলে নতুন যে ধারণার সৃষ্টি হয়অতা হল, প্রকৃতিতে বিবর্ততনের মাধ্যামে যেই মাত্র ভারী অনু আর এন এর রূপ ধারণ করল আর অমনি তার অনুরূপ বাচ্চা প্রসব করতে শুরু করল, তাতে দিনে দিনে প্রকৃতি আর এন এ তে ভরে গেল।
প্রকৃত পক্ষে আর এন এ কিন্তু কোন প্রাণ কোষ নয়, এটি প্রাণকোষস্থিত একটি অনু। তা হলে আরও ধরে নিতে হবে যে, আর এন’র মধ্যেও বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিস্ক রয়েছে যেটি চিন্তাভাবনা করে কোষ গঠনের বাকী অনুগুলোকে সংশ্লেষিত করে এক আদর্শ প্রাণকোষ গঠন করতে পারে। বিজ্ঞান কিন্তু এ কথা স্বীকার করেনা; এমন কি প্রকৃতিতে কোন চিন্তাশীল স্বত্তা আছে বলেও বিজ্ঞান স্বীকার করেনা। তাহলে যৌক্তিকভাবেই স্বীকার করতে হচ্ছে প্রকৃতিতে আপনা আপনি প্রতিতিলিপি করণ ক্ষমতা সম্পন্ন কোন বায়ো অনু সৃষ্টি হতে পারেনা। তার জন্যে প্রয়োজন নীল নকশা ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান।
উপরের আলোচনায় আমরা যে বিষয়টা বুঝতে পারলাম তা হল, পৃথিবীর আবহমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টি হয়েছে সরল প্রকৃতির বায়ো অনু যা ক্রমে ক্রমে সংশ্লেশিত হয়ে তৈরী হয়েছে ভারী অণু, এই ভারী অণুগুলেই সৃষ্টি করেছে জীবনের বিল্ডিং ব্লক আর এন এ, আর এন এর মধ্যে ‘কোন উপায়ে’ প্রতিলিপিকরণের নির্দেশণা সংশ্লিষ্ট হয়েছে। বিজ্ঞান এই উপায়টাকে খুঁজে পাচ্ছেনা। অতএব বায়ো অনু এক্ষমতা পেলো কোথা থেকে? উত্তর একটিই একটি কনসাসনেস। মহাজাগতিক কনসাসনেস যিনি আরএনএ ও ডিএনএকে গঠন করেছেন নির্দেশনা দান করেছেন। বায়ো অনু গঠন করেছেন নির্দেশনা দান করেছেন।
প্রতিলিপি তৈরীকরন ডিএনএ আকারে সাধারণত ডাবল হেলিক্স হয় বা জোড়ায় জোড়ায় হয়ে ( উপরের ছবিটা দেখুন)। হেলিক্স-এর একটা ফিতে অন্য ফিতেটার সাথে জোড় বেঁধে থাকে। এই জোড় বাঁধতে পারার ফলেই কোষ তার মধ্যে থাকা ডিএনএ-র প্রতিলিপি বানিয়ে ফেলতে পারে। ডিএনএ-র কোন একক কার সাথে জোড় বাঁধবে, সেটা বাঁধা আছে: একটা ফিতের T অন্য ফিতের A-এর সাথে জোড় বাঁধে, আর G জোড় বাঁধে C-এর সাথে। তাই যখন প্রতিলিপি বানানোর সময় আসে, তখন একটা ফিতের থেকে অন্য ফিতেটার ছাড়াছাড়ি হয় বটে, কিন্তু একেকটা ফিতের মধ্যেই যথেষ্ট তথ্য থাকে অন্য ফিতেটার মতো আর একটা ফিতে বানিয়ে ফেলতে। এক কথায়, এক একটা ফিতে “ছাঁচ”-এর মতন কাজ করে। এই জটিল ব্যাপারটা এক ঝটকায় হয় না, ধাপে ধাপে এগোয়। অর্থাৎ, ডিএনএ-র দুটো ফিতে ধীরে ধীরে আলাদা হয় এবং তারপরই একেকটার প্রতিলিপি তৈরী হয়। অন্যভাবে বললে, একেকটা ফিতের ছাঁচে মুক্ত ডিএনএ-র একক (free base) গিয়ে জমা হয় এবং এককগুলো একে একে জুড়ে অন্য ফিতেটা তৈরী করে ফেলে। অতএব ডিএনএ হলে সেই প্রতিলিপি তৈরীকৃত মেশিন যা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ডিএনএ হলো দ্বিতন্ত্রী আর আরএনএ হলে একতন্ত্রী।
আল কোরআনে একটি আয়াতে বলছে- "সকল মহিমা তারঁ যিনি জোড়া সৃষ্টি করেছেন---পৃথিবী যা উৎপন্ন করে তার মধ্য হতে সব কিছুর, আর তাদের নিজেদের মধ্যেও এবং তারা যার কথা জানে না তাদের মধ্য হতেও।" (৩৬:৩৬) অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক প্রানি আছে যারা জোড়া ব্যতিরেকে সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরন স্বরুপ ওপ্পিয়েলা নোভা নামের এক প্রানি। নাস্তিবদের এই দাবী বোধগম্যতার অভাববোধ বলা যেতে পারে। ওপ্পিয়েলা নোভা নামের এই প্রাণি কোন জোড়া নেই। কীভাবে যৌনতা ছাড়াই কীভাবে প্রানিটি বংশবৃদ্ধি করছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাণীটি প্রকৃতির সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কেননা এই প্রজাতির প্রাণীর কোনো পুরুষ নেই। কেবল নারীর মাধ্যমে বংশরক্ষা করে প্রাণীটি টিকে আছে হাজার হাজার বছর। তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো পার্থেনোজেনেসিস প্রজনন। এটি একটি অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়া যেখানে ডিম্বানু শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত হওয়া ছাড়াই ভ্রুণে পরিণত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই ওপ্পিয়েলা নোভা নিয়ে গবেষণা করে আসছিলেন। তাদের মতে, এই প্রাণীর প্রজনন প্রক্রিয়া আমাদের জানা নেই। পুরুষ প্রজাতি ছাড়া বংশরক্ষা বিরল ব্যাপার। একই সঙ্গে এটি প্রকৃতির অপার রহস্যের অন্যতম। তাহলে পৃথিবীতে প্রতি টি প্রানি যে পুরুষ নারী তা নয়। এক লৈঙ্গিক প্রাণিও আছে।
নাস্তিকদের এই হাসিও মিলিয়ে যাবে। আসলে অর্থ তো অন্য কোথাও।
এখন আপনি বলেন তো আল কোরআনের এই আয়াত কিসের নির্দেশ দান করে। যাকে বলে ডিএনএ অণু যা পৃথিবীর সকল প্রাণীর এবং উদ্ভিদের বিকাশে ব্যবহৃত জিনগত নির্দেশাবলিকে বহন করে। ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ইংরেজি: Deoxyribonucleic Acid) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে। সকল জীবের ডিএনএ জিনোম থাকে। অথাৎ পৃথিবীর উৎপাদিত সকল প্রাণির বলতে (বহু কোষি) যাদের বডি স্টাকচার আছে। আল কোরআন এই জোড়া বলতে প্রাণির অভ্যন্তরস্থ্য দ্বিতন্ত্রী ডিএনএ কেই বুঝিয়েছে। ডিএনএ ছাড়া পৃথিবীতে কোন প্রাণি নেই। আমাদের আরো গবেষনা করা উচিত। সঠিক সত্য জানতে বিজ্ঞান প্রযোজন। আল কোরআন বলে নিজের সম্পর্কে -ইহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। কিন্তু তাকে বুঝতে হবে। আমরা তাকে বোঝার চেষ্টায় লিপ্ত হই বিজ্ঞান দিয়ে এবং নাস্তিকদের মুখে কালি মারি।
(ধারাবাহিকভাবে চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:১৮