“একান্ত নিরুপায় হয়েই এই স্ট্যাটাস দিতে হচ্ছে: মা'র ক্যান্সার থামছে না, উন্নত চিকিৎসায় যেতে হবে দেশের বাইরে, চাই অন্তত প্রায় ১৫ লাখ টাকা। আর আমি নি:স্বপ্রায়। গত দেড় বছর ধরে অনেক চেষ্টাই তো করলাম.. পারলাম না.. হবে না এভাবে... তাই হাত পেতে দিলাম.... সবাইকে সাথে নিয়ে হয়ত এই আমার শেষ চেষ্টা...”। সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকের দেয়ালে আমাদের সহকর্মী, টেলিভিশন সাংবাদিকতার তরুন তুর্কি রাফে সাদনান আদেল শনিবার এই স্ট্যাটাস লিখেছে। অর্থের কাছে হার মেনে মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসায় শেষ পর্যন্ত সবার কাছে এই হাত বাড়িয়ে দেয়া। একজন মাকে বাঁচাতে একান্ত বাধ্য হয়েই চাওয়া সবার কিছু কিছু আর্থিক সহযোগিতা। দিন কয়েক আগে আদেল ফেসবুকে লিখেছিল, “মায়ের জন্য দোয়া চাই। রক্ত কণিকায় ক্যানসার মার্কার কমছে না কিছুতেই... পেটে চলে আসছে পানি... কাল সকালে নিয়ে যাবো হাসপাতালে... সবার দোয়াই আমার শেষ সম্বল ”। এই স্ট্যাটাসের ঠিক দুদিন আগে লিখেছিল, “গত দেড় বছর ধরেই মা'র মলিন মুখ দেখে প্রতিদিন আমার জীবন সংগ্রামের শুরু ...আমি হাল ছাড়ি নাই.. ছাড়বো না..কারণ আমার মলিন মুখের মা মনে করেন তার ছেলে সব পারে। ক্যান্সারও জয় করবো মা.. একটু ধৈর্য্য ধরো...”। গত দেড় বছর ধরে আদেল তার মায়ের জন্য সবার কাছে কেবল দোয়াই চেয়ে গেছে। প্রচন্ড ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন আদেলকে বহুবার আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন কিনা। সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছে আদেল। নিজে নিজে একা লড়াই করে গেছে মা’কে বাঁচাতে।কিন্তু আর না পেরে অবেশেষে প্রায় ১৬কোটি মানুষের কাছে আদেলের অসহায় আত্মসমর্পন, হাত বাড়িয়ে দেয়া।
আদেলের মা মনোয়ারা বেগম; বয়স ৪৭ বছর। দেড় বছর ধরে ভুগছেন ওভারিয়ান (জরায়ু) ক্যান্সারে। প্রথম দফায় ৬ বার কেমোথেরাপি দেয়ার পর প্রায় সুস্থ হয়ে পাঁচ মাস কাটাতেই আবারো ফিরে আসে এই কঠিন ব্যাধি। এবার শতগুন বেশী মাত্রায়। এরপর আরো তিনটি সব মিলিয়ে নয়টি কেমোথেরাপির পরও কমছে না তাঁর রক্ত কণিকায় ক্যান্সারের পরিমান। বর্তমানে বড় হেয় গেছে লিভার, পানি এসেছে পেটে। নতুন করে যোগ হয়েছে ডায়াবেটিকসও। সব মিলিয়ে সংকটাপন্ন এই পরিস্থিতি। রাজধানীর মহাখালী ক্যান্সার রিসার্স সেন্টার থেকে শুরু করে বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালে এরই মাঝে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছে, এই ক্যান্সার থামাতে চাই উন্নত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। কিন্তু ব্যয়বহুল এই চিকিৎসায় প্রয়োজন আনুমানিক প্রায় ১৫ লাখ টাকা। দেড় বছর ধরে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার বহন করে মনোয়ারা বেগমের পরিবার প্রায় নি:স্ব। এই পরিবারে একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যাক্তি মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে একটি বেসরকারি টেলিভিশন রিপোর্টার রাফে সাদনান আদেল। আদেল বলে, “ দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা করি, এখন এই বিপদে তাই দেশের মানুষের কাছেই সাহায্য চাই। মাকে বাচাঁতে এই মুহুর্তে এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নাই। আমার বিশ্বাস আমার দেশের মানুষই আমার মাকে ক্যান্সারমুক্ত করতে পারবে।”
আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক রাফে সাদনান আদেলের রক্তে মিশে গেছে সাংবাদিকতা। বেশকয়েকবার বেশ ভালো বেতনের বেশ কয়েকটি চাকরির অফারই ফিরিয়ে দিয়েছে সাংবাদিকতা করবে বলে। মানুষের জন্য কিছু করার, সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরার জন্য এর চেয়ে ভালো কোন মাধ্যম তার চোখে পড়ে না। আমাদের এই বন্ধু সহকর্মী, সাংবাদিকতা করেছে বেশ কয়েকটি গনমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেই। এবিসি রেডিও দিয়ে শুরু করে, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, এটিএন নিউজ, সময় টেলিভিশন, একাত্তর টেলিভিশন হয়ে এখন কাজ করছে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে। প্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তরিক, আর পেশার প্রতি দায়বদ্ধ ছেলেটি কেবল মায়ের জন্যই ছুটে বেড়ায় এখানে ওখানে। ফেসবুকে, ব্লগে, নিজের প্রতিবেদনে বহুবার বহুজনের সাহায্যের জন্য তুলে নিয়েছে নিজের অস্ত্র হিসেবে সাংবাদিকতাকে।বদলে দিতে চেয়েছে অসহায়ের অসহায়ত্ব, সমাজ সংস্কৃতির সঙ্কটকে। খোদ গনমাধ্যমের অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতেও বাধেনি আদেলের।দারুন স্পষ্টভাষী এই ছেলে বিপন্ন মানুষের পাশে থাকার আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে নিজের কর্মে। প্রচন্ড শীতে ছুটে গেছে দূরের শীতার্তে কাছে। কেবল কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে নয়, প্রতিবেদন তৈরি করতে জীবনের ঝুকিঁ নিতেও কার্পন্য করেনি আদেল। কাজের প্রতি, নিজের দায়িত্বের প্রতি যে ছেলেটি ভীষন রকম সচেতন, যে ছেলেটি প্রায়ই বলে, “দেখিস, একদিন আমরাই পারবো সব অসঙ্গতি দূর করে সমাজকে বদলে দিতে” আজ সেই ছেলেটিই অসহায়। যে ছেলেটি কোটি কোটি টাকার দুর্নিতীর রিপোর্ট প্রকাশে কখনো পিছপা হয়নি, সেই ছেলেটি মাত্র ক’লাখ টাকার জন্য হাত পেতেছে। যে ছেলেটি, মাদক নিয়ে রিপোর্ট করতো কেবল দেশের অসংখ্য তরুনের কথা ভেবে, সেই ছেলেটির তারুন্য আজ হার মানতে বসেছে। প্রিয় মাকে বাঁচাতে আজ আদেল পথে নেমেছে।যে জন্মদাত্রী মা আদেলকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, শিখিয়েছে মানুষের জন্য কাজ করাই জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন সেই মায়ের জন্যই, সেই মাকে বাঁচাতেই আদেলের এই নিরন্তর চেষ্টা। আদেলের এই চেষ্টা কি বৃথা যাবে ? আদেল, আদেলের মা, মাকে বাঁচাতে এই প্রানান্ত চেষ্টা কি মাত্র ক’লাখ টাকার কাছে হার মানবে ? এদেশ কিংবা দেশের মানুষ দরিদ্র কিন্তু তাই বলে মাত্র ১৫ লাখ টাকার জন্য একজন গনমাধ্যমকর্মী তাঁর প্রিয় মা’কে বাঁচাতে পারবেনা? একজন সাংবাদিক চাইলেই অল্পকদিনে ধনী হতে পারে। কিন্তু তার জন্য তাকে নিজের সৎ থাকার পরিচয়টা বদলাতে হবে। যদি অসততাকে আদেল পুঁজি করতো মায়ের জন্য আজ সাধারনের কাছে হাত পাততে হতো না তার। নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালনে, নিজের সততাকে মূলধন করে এগিয়ে যেতে চায় কিংবা মানুষের জন্য কাজ করতে চায় বলেই রাফে সাদনান আদেল আজ সবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে ১৬ কোটি মানুষের দেশে নিজের সবোর্চ্চ চেষ্টা করছে। ১৫ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্যের জন্য ১৬কোটি মানুষের সকলের সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না। ৩০ লাখ মানুষ ৫০ পয়সা করে দিলেইতো হয়। কিংবা ১৫ লাখ মানুষই দিননা একটি টাকা করে। বাংলাদেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। একদিন একটা সিগারেট না হয় কমই খেলেন। আপনার নিজের জীবন ধ্বংস কারী সেই সিগারেটের টাকায় যদি একজন মা বেঁচে যায় তবে কি এমন ক্ষতি ? মা’তো মা’ই। দুনিয়ার সব বর্ণের সব ভাষার সব দেশের সকল মা’য়ের প্রতিই তাঁর সন্তানের একই অনুভূতি। আসুননা, একটু চেষ্টা করি। হাতটা বাড়িয়ে দিই।একসঙ্গে সবাই মিলে আওয়াজ তুললে অনেক কিছুই সম্ভব। আদেলকে বলি, তুই বন্ধু একা না,সারাদেশের মানুষই আছে তোর পাশে।যাদের জন্য কাজ করিস সেই মানুষগুলোই মায়ের প্রতি তোর ভালোবাসার সম্মান জানাবে। হাল ছেড়ো না বন্ধু…। আদেলের মায়ের জন্য সাহায্যের ঠিকানা: রাফে সাদনান আদেল , ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, শান্তিনগর শাখা, ঢাকা। অ্যাকাউন্ট ১০৮-১০১-৩৯২৭১ যোগাযোগ: ০১৭৫৩০৯১২৪৯
সাইফুদ্দিন রবিন
গনমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




