somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাকে হারানোর ব্যথা

০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইবনে আরাবিকে চেনে না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ সকালে বিখ্যাত এই মুসলিম দার্শনিক আমার কামরায় হাজির হলেন। আমি খুব কষ্টে আছি। কারণ, আজই আমার প্রেমিকা একরকম বলতে গেলে আমাকে ছেড়ে আজীবনের জন্য চলে গেছে। এ জীবনে হয়ত আর শুনতে পাবো না তার সুন্দর কান্না। শুনবো না তার মাতাল করা সেই হাসি ও কমল কণ্ঠ।

আমার পরীর মতো সুন্দরী প্রেমিকাটির বিয়ে ঠিক হয়েছে ভাগ্যবান এক পুরুষের সঙ্গে। কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মৃত্যু আজ বার বার আমার দিকে উঁকি মারছে। করোনার ভেতরও বাধ্য সন্তানের মতো অফিস করছি। অফিসে অনেক মানুষ আসছে, যাচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কাও আমাকে ভীষণবাবে পেয়ে বসেছে।

আমার মা বলেন, কী লেখালেখি করিস বাবা? ওসব বাদ দিয়ে অন্যকিছু কর। বাবাও আমার ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার দেখেন।

মন খারাপ করে বসে আছি। ঘুম ঘুম আসছে। একটু পর অফিসে যাবো। ঠিক এমন সময় দুয়ারে ঠক ঠক শব্দ হলো। দরজা খুলে দেখি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। তিনি কবিতা শুনাতে এসেছেন, আমি তাকে দুয়ার থেকেই তাড়িয়ে দিলাম। বললাম, কবিতা শুনতে ইচ্ছা করছে না। তিনি ফাগুনের গান শোনাতে চাইলেও আমি না করলাম। কারণ, কোনও পুরুষের কণ্ঠে গান আমার ভালো লাগে না।

কিছুক্ষণ পর ইবনে আরাবী নামের বিখ্যাত মানুষটি এলো। বন্ধ দুয়ারের ভেতর দিয়ে তিনি কীভাবে প্রবেশ করলেন আমি জানিনা। তিনি নামাজের মতোই দু হাঠু বিছিয়ে বসলেন। আমি শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে তাকে বলতে চাইলাম, প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আমার এখন কিছু শুনতে ইচ্ছা করছে না। এমনিতেই একটু আগে কবিগুরু আমাকে বিরক্ত করে গেছেন। কিন্তু বলতে পারলাম না।

আচ্ছা বাংলায় বললে আন্দালুসিয়া এই মানুষটি কিছু বুঝবেন কি?

আমার অনিচ্ছা উপেক্ষা করে তিনি তার সেই পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বলতে শুরু করলেন, বাছা! সবর করো, তাতে প্রশান্তি লুকিয়ে আছে।হয়ত বিধাতা তোমার জন্য এরচে ভালো কিছু রেখেছেন। তিনি সর্বদা মানুষের কল্যাণই করেন। জগতের কোনোকিছুই তার অনুমতি ব্যতীত হয় না। যা চাইবে তার নিকট চাও, মন থেকে বলো। সাহসী হও এবং লড়ে যাও, ভীতুর জন্য লজ্জাই অপেক্ষা করছে। আল্লাহর জমিন প্রশস্ত। যা হারিয়েছো তার জন্য আক্ষেপ করো না। ঘটে যাওয়া বিষয়কে ভাগ্য ও বাস্তবতা ভেবে মেনে নাও। মনে রেখো ভাগ্য মানুষের কষ্ট অনুযায়ী হয়।

আমি আবারীকে বললাম, আপনি কি জানেন, আমি সাংবাদিক, আমার ভবিষ্যৎ অনুজ্জল এবং ইনকাম কম হওয়ার জন্য আমার প্রেমিকাকে আমি হারিয়েছি।

তিনি কথা পূর্বের ভাবগাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, তবে শোনো বাছা, এটা ব্যর্থতা নয়, ঈশ্বর ছাড়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেউ ধারণা রাখে না।

তিনি বললেন, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ যাবৎ অনেক ধনী ও বিত্তবানদের আগমন ঘটেছে। যাদের কেউ আজ নেই। অনেকের সম্পদ এতো বেশি ছিলো যে, সম্পদ রক্ষণের কামরাগুলোর চাবি বহন করতে সত্তুরটি উট লাগতো। তারা সবাই আজ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তুমি অঢেল সম্পদের মালিক হও বা না হও মৃত্যু তোমার আসবেই। তোমার শরীর মাটিতে খাবে, আর তোমার সম্পাদ খাবে অন্যরা। মাঝখান দিয়ে তুমি শুধু কষ্টই করে যাবে। তোমার আজকের দিনের যারা অঢেল সম্পাদের মালিক আছে তারাও একদিন চলে যাবে। দেখো না, সামান্য করোনাভাইরাসের কারণে কী নাজেহাল অবস্থায়ই না হয়েছে পৃথিবীটার। বেঁচে থাকার জন্য খাবে, খাওয়ার জন্য বাঁচবে না। তবে হ্যা, যদি মানুষের জন্য কিছু করতে পারো তা অবশ্যই করবে। সর্বদা ঈশ্বরের সরণাপন্ন হবে। ঈশ্বরই একমাত্র প্রশান্তি দান করতে পারেন। আর মনে রাখবে পরিশ্রমী ব্যক্তিকেই সবাই মনে রাখে এবং তা সফলতা এনে দেয়।

প্রেমিকা হারানের শোকে আমি তার কোনও কথাই মন দিয়ে শুনতে পারলাম না। তিনি চলে যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এতো মহান হলেন কীভাবে?

তিনি তার বিখ্যাত উক্তিটি শোনালেন, ‘আমার একাকীত্ব যাপন শুরু হতো ফজরের সময়, যখন সূর্যকিরণ ধীরে ধীরে সব অন্ধকার দূর করে দিতে থাকে। তখন ‘গায়েবি’ (অদৃশ্য) জগতের রহস্যগুলো আমার কাছে একে একে জট খুলত। ১৪ মাস আমি নির্জনে ধ্যান করেছি, সেগুলো দেখেছি আর লিখেছি।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আমাকে ধ্যান করতে বলছেন? আমি তো বিখ্যাত ওইপন্যাসিক হতে চাই, লেখক হতে চাই।

তিনি বললেন, ‘জ্ঞান আহরণ করো, কারণ অজ্ঞ ব্যক্তি তার অজ্ঞতা সম্পর্কেও অজ্ঞ। সে তার অজ্ঞতায় প্রতিনিয়ত অবগাহন করে চলে! জ্ঞানী ব্যক্তিও তার জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানী নয়। কারণ সে প্রতিনিয়ত তার জ্ঞানের আলোয় অবগাহন করে চলে! আর যে ব্যক্তি আল্লাহর একক অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে, একটি গাধাও তার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে বলে সে প্রমাণ করে।

আরাবি চলে গেলেন, তখনও আমার মুখের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছো তুমি।

অফিসে বসে কাজের ফাঁকে দ্রুত লিখেছি, কোনো ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×