সকালে আধো ঘুম আধো জাগরণে..ভয় পেয়ে বিছানা ছাড়লাম...ভয়-ভয় লাগছে
...আশংকা নিয়ে মায়ের ঘরে গিয়ে দেখলাম; মা ঘুমিয়ে। মায়ের পায়ে হাত দিয়ে বুকে ছোঁয়ালাম। আল্লাহ!
আজও মঙ্গলবার... ১টা ৩০ মিনিট...আজও রোজার ঈদের পরদিন।
আজও বাসায় সবার দাওয়াত। রান্না-বান্না চলছে... কিছু উপকরণ চুলায়...কিছু কাঁটাকাঁটি চলছে...
পার্থক্য ৩ বছরের... কারো মনে আছে কিনা কে জানে? ২০২০ আর ২০১৭
একজন নেই!!! অবশ্য আমার অভাব অনুভূত হয়না।
আগের মতোই মাথায় হাত বুলিয়ে দেন...বাম ঘারের দিকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন।
সত্যিকার অনুভুতি। কারো কাছে অবিশ্বাস্য লাগলেও...আমার কিছুই বলার নেই।
২০১৭, মঙ্গলবার, রোজার ঈদের পরিদিন একই রকম আয়োজন-বাসায়; ভাই-বোনদের দাওয়াত।
২০১৩ সালের ১১ জুন রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ছোট্ট ফুটফুটে দু’টো বাচ্চা রেখে
আমার কোলে মাথা রেখে
বাচ্চাদের ‘‘মা’’ কেয়া আল্লাহর কাছে চলে যাবার পর থেকে
আমরা ৩জন মা-আব্বার কাছে থাকি।
২০১৭
যে প্রসঙ্গে ছিলাম; সকালে নামাজ পরে আসলাম...মা -আব্বাকে সালাম করলাম।
আমার রুম এ এসে ...বিছানায় গড়া-গড়ি করলাম।
আবার আব্বার কাছে গিয়ে ঘন্টা খানেক প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনী অনেক কথাই বললাম আর মাথা...হাত-পা টিপে দিলাম। আমার যা অভ্যাস।
আবার আমি আমার রুমে এসে ওয়াসরুমে গিয়ে গোছল করলাম...আধা ভেজা টাওয়েল পরেই ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
এরই মধ্যে আব্বা গোছল করলেন মনির ভাই সাথে ছিলেন.. যোহরের ওয়াক্ত।
হঠাৎ আমার বড় মেয়ের শ্রাবণ এর চিৎকারে আমি ভেজা টাওয়েল পরেই আব্বার রুমে গেলাম...
ছোট মেয়ে বর্ষন ছটফট করছে আর বলছে,‘‘ বাবা; দাদা যেন কেমন করছে?’’
ছোটবোন শিউলি রান্নাঘর থেকে দৌরে আসলো
নুর মোহাম্মদ ভাই আব্বার পায়ের কাছে, দোয়া পড়ছেন।
আব্বার ডান হাত আমার বাম হাত দিয়ে ধরলাম আর আব্বার বাম হাত আমার ডানহাত দিয়ে ধর
...মাথার কাছে আমার সেজো আপা বিউটি... আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন...
‘‘আল্লাহ তুমি আমার আব্বাকে কষ্ট দিওনা...আমার আব্বাকে মাপ করে দাও।’
আমার যতটুকু মনে পরে
লিয়ন যথারিতি বুকে হাত দিয়ে বেদনাভরা মুখ করে ওর নানার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
সাগর- সোহান দাদা- দাদা বলে চিৎকার করতে করতে ছুঠে আসলো
আর মনির ভাই বললেন,‘‘ আব্বাকে হাসপাতালেও নিতে পারবোনা?
সেজো ভাবী...আব্বা -আব্বা ও আব্বা বলতে লাগলেন।
সেজো দুলাভাই মনির ভাইয়ের বাসা থেকে ছুঠে আসলেন
কিন্তু
১মিনিটও হবেনা... বেলা ১টা ৩০ মিনিট ২০১৭ মঙ্গলবার..রোজার ঈদের পরদিন...
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজিবি কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ার আল্লাহর কাছে চলে গেলেন।
আমার মা জাহানারা খাতুন অপলক চোঁখে চেয়ে রইলেন।
৬৬ বছরের সংসারের অবসান!!!
_____________________
বাবাকে বাস্তবে দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু আমি অনুভব করিনা বা ভুলে যাই...এখনো ক্রিকেট খেলা দেখতে চাই বাবার সাথে
মনেই থাকেনা।
আগের মতোই মাথায় হাত বুলিয়ে দেন...বাম ঘারের দিকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন।
সত্যিকার অনুভুতি। কারো কাছে অবিশ্বাস্য লাগলেও...আমার কিছুই বলার নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৪৬