somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত সন্তান!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ: বিচার মানি তালগাছ আমার এবং
চানাচুর কে।
(১)
খিলখিল হাসি দেখেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলাম। রেষ্টুরেন্টে সবাই মেপে মেপে কথা বলে, মেপে মেপে হাসে এবং মার্জিত ভাবে খায়। কিন্তু মেয়েটির কোন বালাই নেই। বান্ধবীর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। শুধু আমি না, অন্যেরাও তার দিকে তাকাচ্ছে ওর তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।

এই মেয়েটি এখন আমার বউ ওর নাম ইরা। এখন আর ওর খিল খিল হাসি নেই। সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে। আমাদের প্রথম বাচ্চা হাওয়ার দুদিন পরে বাচ্চাটা মারা গেল। ডাক্তার বলেছিল বাচ্চা একদম ফিট। কিন্তু এর পরেও কিভাবে কি হলো বুঝলাম না। ফুটফুটে আর
ধবধবে সাদা দেহ কিন্তু গলার দিকে লালচে ছিল লাশের। ইরা কান্নাকাটি জুড়ে দিলে আমি ডক্টর কল দেই। ডক্টর স্বাভাবিক মৃত্যু বলে। গলার লালচে ভাবটাও স্বাভাবিক। মরা লাশের নীল, লাল, ফ্যাকাসে, কালো এসব হওয়া নাকি স্বাভাবিক।

এর পর থেকে ইরা আর হাসে না। বাড়ি থেকে কোথাও বের হয়না। আমি অফিস করে এসে সারাদিন ওকে নিয়েই থাকি। ওর পছন্দের খাবার নিয়ে আসি মাঝে মাঝে। আমার সাথে কথাটথাও খুব একটা বলে না।

অথচ বিয়ের সময় রাত দুইটা অবদি ও বকবক করেই যেত। এর বিরুদ্ধে নালিশ ওর বিরুদ্ধে নালিস। আমি ব্যাপারটা খুব ইনজয় করতাম।
কিন্তু এখন সব শূন্যতা। আমি এ নিয়ে ওকে কিছু বলিনা। প্রথম বাচ্চা মারা গেছে ধকলটা সহ্য হচ্ছে না হয়তো।

(২)
আমাদের ২য় বাচ্চা হবে। এবারও ছেলে হবে আর চেকাপ করে জান গেল সব ঠিকঠাক। ইরা যদিও এখন কথা কম বলে কিন্তু চোখে মুখে এখন একটু আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। রোজ আয়নার সামনে একটু বেশি সময় নিয়ে সাজে আজকাল।

আমরা হসপিটালে, ইরার পেইন উঠেছে। আমি বড্ড ছটফট করছি কি হয় না হয়। রাত ঠিক ২:৩৭ মিনিটে জানতে পারলাম আমি বাবা হয়েছি আর ওরা ঠিক আছে। আমি কেবিনে ঢুকে বাচ্চার দিকে না তাকিয়ে ইরার দিকে তাকালাম। বড্ড হাসি-খুশি দেখাচ্ছে ওকে। বাচ্চার পা থেকে মাথা পর্যন্ত অদ্ভুত ভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

রাত তিনটার দিকে এম্বুলেন্স করে আমরা বাসার দিকে আসছিলাম। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল। সারারাতের ধকলে। আমি আমার বাচ্চাটাকে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম এম্বুলেন্সেই।

(৩)
বাসায় এসে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। এত্ত ঘুম পাচ্ছে। ইরা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ওলে বাবুতা, বাবু আমাল,,,, এরকম বাচ্চাদের মত বলে যাচ্ছে। আমি অদ্ভুত ভাবে ইরার দিকে তাকিয়ে আছি। মোবাইল দিয়ে বাচ্চাটার একটা ছবি তুললাম। ফেসবুকে সবাইকে জানাব বলে। কিন্তু না পোষ্ট করিনি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

সকালে ইরার কান্না শুনে ঘুম ভেংগে গেল। এই বাচ্চাটাও মারা গেছে। সারা দেহ ফ্যাকাসে সাদা গলার দিকটা কিছুটা লালচে এবং নীলচে। আমার চোখে কোন পানি নেই। আমি ইরার মত কান্নাকাটি করতে পারছি না। বুকে শক্ত একটা পাথরের মত অনুভব করছিলাম। উফ আমিকি পাগল হয়ে গেলাম?

পরদিন সন্ধ্যায় দেখলাম ইরা আয়নার সামনে সাজুগুজু করছে। সন্তান হারানোর বেদনা একদম নেই। অদ্ভুত ভাবে ইরার মুখটা জ্বলজ্বল করছে। এত রুপবতী লাগছে বলার মত না। এবং খেয়াল করলাম ওর চুল কাধ পর্যন্ত ছিল সেটাও কোমর পর্যন্ত চলে এসেছে। তবে কি ও অমরত্ব লাভ করে ফেলেছে? যেমনটা ওর ডায়রিতে লেখা ছিল?

ও আপনাদের তো বলাই হয়নি। আমাদের ২য় সন্তান হওয়ার সময় হাসপাতালের বেডে ওর ডায়রি গোপনে আমি পড়ে ফেলেছিলাম। সেখানে বলিদান আর অমরত্ব লাভের ব্যাপারটায় সুন্দর করে লেখা ছিল। ইরা যুগ যুগ বেঁচে থাক। এমন রুপবতী বউ ভাগ্য কজনার আছে?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×