somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতেই ঘটনা মেটাতে চেয়েছিলেন রেলমন্ত্রী!

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাতেই ঘটনা মিটিয়ে ফেলতে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দফায় দফায় ফোন করেছিলেন বিজিবি’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের। দ্রুত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে গভীর রাতে বিজিবি কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন কয়েকজন বিশেষ সহকারীকেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গোপনে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা যায়নি গাড়িচালক আজম খানের জন্য। কারণ তিনি বিজিবি সদর দপ্তরে গাড়ি ঢুকিয়ে ফেলার পরপরই ৩ জন সিনিয়র সাংবাদিককে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে বিজিবি কার্যালয়ে যেতে বলেন। চিৎকার করে বিজিবি কার্যালয়ে দায়িত্বরতদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন। চিৎকার শুনে তাদের ৪ জনকে আটক করে বিজিবি। ওদিকে গতকাল দিনভর চালক আজম খানের খোঁজ মেলেনি। তাকে নিউ মার্কেট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে- এমন কথা শোনা গেলেও নিউ মার্কেট থানা পুলিশ বিষয়টি স্বীকার করেনি।
গভীর রাতের বৈঠক: বিজিবি কার্যালয়ে গভীর রাতে হাজির হন বেশ ক’জন শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে বিজিবি মহাপরিচালক ওই বৈঠকে হাজির হননি। একজন কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে বৈঠক বসে। ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকের মাঝে কয়েক দফা ফোন করেন মন্ত্রী সুরঞ্জিত। বিজিবি’র পদস্থ কর্মকর্তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতেই ওই চার ব্যক্তিকে ছেড়ে দেননি। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ টাকার বিষয়টি নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন তারা। টাকাগুলো জব্দ করা হবে কিনা তা নিয়েও দ্বিধায় পড়েন তারা। গতকাল বিজিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, রাতে একবার সিদ্ধান্ত হয় টাকাগুলো জব্দ করা হবে। কিন্তু পরে টাকাগুলো আর গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। মন্ত্রীর লোকজনদের নিয়ে বৈঠকের পর বিজিবি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা আবার বৈঠকে বসেন। সিদ্ধান্ত হয় তাদের ছাড়ার আগে টাকাগুলো জব্দ করে থানায় জমা করা হবে। এছাড়া ৪ ব্যক্তির নামে থানায় জিডি করা হবে। গভীর রাতে বিজিবি সদর দপ্তরে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হবে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরে অজ্ঞাত কারণে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় ভোরে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু সকালেও কোন সিদ্ধান্ত আসছিল না। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর ৪ ব্যক্তিকে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে গোপনে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। খুব ভোরে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিজিবি সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন এমন কথা গতকাল বিজিবি কার্যালয়ে শোনা যায়। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য জানান খুব ভোরে সাদা একটি প্রাইভেট কার পিলখানার ৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে। গাড়িতে মন্ত্রীর মতো একজনকে দেখা যায়। অন্তত ২৫ মিনিট অবস্থান করেন ওই ব্যক্তি বেরিয়ে যান বলে জানান বিজিবি সদস্য। এরপরই ওই চার ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিজিবি। একজন সুবেদার মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা হেলমেট পরিয়ে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে ৪ ব্যক্তিকে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদের বের করার আগে সিসি ক্যামেরায় দেখা হয় কোন কোন গেটে সাংবাদিকরা আছেন। দেখা যায় ৫নং গেট খালি। ওই চার ব্যক্তিকে ৫নং গেট দিয়ে বের করা হয় বলে জানিয়েছে সূত্র।
আমি সাংবাদিক: বিজিএসইউ’র সদস্যরা ৪ ব্যক্তিকে আটক করার পর মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি তার সহকর্মী দাবি করে বেশ ক’জন সিনিয়র সাংবাদিকের নামও বলেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অবশ্য তিনি মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, টাকাগুলো তার শ্যালকের। আরেকবার তিনি বলেন, বিদেশী কিছু মুদ্রা ভাঙিয়ে পাওয়া টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিতে ভুলে গেছেন তিনি। ভোরে জমা দেবেন। সেদিন রাতে বিজিবি সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিজিএসইউ’র লে. পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। তিনিই প্রথম সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য গাড়িটির কাছে এগিয়ে যান। গাড়ির অন্যতম যাত্রী রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের কমান্ড্যান্ট এনামুল হক বলেন, গাড়িটি ৩ নং গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন অনেক রাত। গেটে আর্মিরা দায়িত্ব পালন করছিল। একজন অফিসার আমাদের গাড়ির কাছে এসে পরিচয় জানতে চায়। তখন আমরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। রাতভর অভ্যর্থনা কক্ষে: ওই কর্মকর্তার সামনেই চালক আজম খান চিৎকার করে বলতে থাকেন গাড়িতে অনেক অবৈধ টাকা আছে। গাড়ির পেছন দিক খুলে দেখেন। এরপরই বিজিবি’র ওই কর্মকর্তা সবাইকে হাত উঁচু করতে বলেন। সবার দেহ তল্লাশি করা হয়। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় অভ্যর্থনা কক্ষে। কমান্ড্যান্ট এনামুল হক বলেন, আমরা ৩ জন ছিলাম অভ্যর্থনা কক্ষে। গাড়িচালককে অন্য ঘরে রাখা হয়। সারারাত সেখানেই বসে ছিলাম। এর মধ্যে বিজিবি’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে সেটা আনুষ্ঠানিক কোন জিজ্ঞাসাবাদ নয়। আমাদের পরিচয় পাওয়ার পর তারা আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল ব্যবহার করেছে। এনামুল বলেন, রাতে রেলওয়ের কর্মকর্তারাও বিজিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি।
গাড়িটি মন্ত্রীর এপিএস-এর: যে গাড়িটি বিজিবি সদর দপ্তরে ঢুকেছিল সেটি একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস। নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৭৯৯২। গতকাল বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা ওমর ফারুক তালুকদারের নামে। তার পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম তালুকদার। ২০১০ সালে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
গাড়ি বদল: পথে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল হক গাড়ি বদল করেন। কমান্ড্যান্ট এনামুল হক বলেন, আমি আর জিএম স্যার শাহজাহানপুরে পাশাপাশি থাকি। রাতে জিএম স্যার আমাকে ফোন করে বলেন, একটু ধানমন্ডি যাবো। আমার সঙ্গে চলেন। আমি স্যারের গাড়িতে উঠি। ওই গাড়িতে টাকা ছিল কিনা তা আমি জানি না। স্যারের নিরাপত্তার জন্য আমি যাইনি। আর টাকা বা স্যারের নিরাপত্তার জন্য আমাকে নেয়া হলে গানম্যান নিতাম। এমনকি আমার ব্যক্তিগত রিভলবারটিও নিয়ে যাইনি। কোথায় এবং কেন গাড়ি বদল করলেন জানতে চাইলে এনামুল বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে পৌঁছলে জিএম স্যারের কাছে ফোন করেন মন্ত্রীর এপিএস। তিনি তাকে ধানমন্ডিতে যেতে বলেন। আমরা ধানমন্ডি গিয়ে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিয়ে এপিএস-এর গাড়িতে উঠি। সেখান থেকে মন্ত্রীর বাসার দিকে রওনা দিই। কিন্তু পথে ড্রাইভার গাড়ি বিজিবি সদর দপ্তরের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এনামুল বলেন, আমি সামনের সিটে বসা ছিলাম। চালককে বললাম এই ভেতরে ঢোকাচ্ছ কেন? তখন সে আমাকে বলে, আপনি নেমে যান। হেঁটে বাসায় চলে যান। কিন্তু আমি না নেমে চালককে ধমক দিই। কিন্তু তখন তাকে খুবই উগ্র দেখাচ্ছিল। সে গাড়ি বিজিবি সদর দপ্তরের ভেতরে ঢুকিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাতে থাকে। একবার এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ৩ জনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। কিন্তু আমার ফোনটি সে নেয়নি। চালক ৩নং গেটের কাছে গাড়ি থামিয়ে কয়েকজনের কাছে ফোন করে। আপনি কারও কাছে ফোন করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে এনামুল কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।
সূত্র:এখানে
২৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×