প্রসঙ্গটা হয়তো একটু আঁতলামি হয়ে যাবে কিন্তু এই জাতীয় বিষয়গুলোর প্রতি আমার এত অস্বাভাবিক আগ্রহ যে লেখার ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। বরাবরই এগুলো খুব ভালো লাগে, আর তারওপরে আবার কয়েকদিন আগে গ্রুপ মেইলে একটা লিঙ্ক পেয়ে লোভটা আবার বেশ চাগিয়ে উঠেছে। আগেই বলে রাখি এটা শতকরা ১০০% কপি পেস্ট পোস্ট, নেটে যেখানে যা পেয়েছি সেটাই মোটামুটি সোজা বাংলায় পড়ার মত করে লিখেছি, যথারীতি কিছু আলগা ভংচং সহ।
আগ্রহটা হচ্ছে পৃথিবীতে সমুদ্রতলদেশের গভীরতম স্থানটি নিয়ে।
সমুদ্র জিনিসটার প্রতি এমনিতেই আমার (শুধু আমার না সম্ভবতঃ অনেকেরই) খুব অদ্ভুত একটা আকর্ষণ আছে। মানুষকে বোধহয় সেই জিনিসই সবচেয়ে বেশি টানে যেটা তার ধরাছোঁয়ার বাইরে, এই কথাটা সমুদ্রের ক্ষেত্রে অনেকাংশে মিলে যায়। যে জিনিসটা ওপর থেকেই দেখতে এত রহস্যময়, তার তলায়, অনেক অনেক গভীরে, না জানি আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে! টিভিতে যখনই কোথাও সমুদ্রের তলায় গহীন অঞ্চলগুলো দেখাতো, একেবারে ক্যাবলার মত হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। কেমন যেন ভয় ভয় করতো, আবার ভালোও লাগতো। ছোটবেলায় পড়া বইগুলোতে লেখা থাকতো, সমুদ্রের তলায় নাকি নিকষ কালো অন্ধকার, সূর্যের আলো পৌঁছায় না। আমার খালি মনে হতো একে তো ওরকম অন্ধকার, তায় কত ভয়ঙ্কর সব প্রাণী ওঁত পেতে আছে, মানুষের কিভাবে যাওয়ার সাহস হয় ওখানে! তারপর দেখতাম টিভি ক্যামেরা পানির ভেতর নিচে নেমেই যাচ্ছে নেমেই যাচ্ছে... গভীরে... আরও গভীরে... তখন মনে হতো এই গভীরতার কি কোনও শেষ নেই? থাকলে সেটা কোথায়? দেখতে কেমন? কি আছে ঐ জায়গাটায়? আচ্ছা পানির চাপ কত সেখানে? মানুষ কি আদৌ খুঁজে পেয়েছে ঐ জায়গাটার সন্ধান? কেউ কি যেতে পেরেছে সেখানে? একবারও?...
তারপর একদিন জানলাম, হ্যাঁ, মানুষ অনেক আগেই খুঁজে পেয়েছে সেই অদ্ভুত রহস্যে ভরা অন্ধকারময় আর বিপুল পরিমাণ পানির চাপময় সেই জায়গাটা।
তো হয়ে যাক এক চক্কর, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে!
আচ্ছা প্রথমে এটার ভৌগলিক অবস্থানটা একটু দেখা যাক।
ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম ভাগে এর অবস্থান (অঙ্কের ভাষায় বলতে গেলে ১১°১৯’ উত্তর [অক্ষাংশ] এবং ১৪২°১৫’ পূর্ব [দ্রাঘিমাংশ] এরকম একটা জায়গায় সে আছে। ফিলিপাইন থেকে মোটামুটি সোজাসুজি আর চীন, জাপান আর ইন্দোনেশিয়া থেকে একটু কোণাকুণি গেলেই তাকে পাওয়া যাবে। এমনিতে জায়গাটার নাম মারিয়ানা ট্রেঞ্চ হলেও সবচেয়ে গভীরে যে বিন্দুটি রয়েছে (গভীর বলতে প্রায় অবিশ্বাস্যরকম গভীর) আদর করে তার নাম দেয়া হয়েছে চ্যালেঞ্জার ডীপ (এই নামটা অবশ্য অতটা সুন্দর না)।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এতটা গভীর একটা জায়গার সৃষ্টি হলো কিভাবে। ভূগোল (ঠিক ভূগোল না অবশ্য, ভূতত্ত্ববিদ্যা) তো তেমন বুঝি না, তবে এটা নিয়ে একটু খোঁচাখুঁচি করে জানা গেলো এটা হয়েছে অতি দীর্ঘ সময়ের Subduction এর কারণে (কেউ কি একটু ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবেন? আছেন কি হৃদয়বান ও ভূতত্ত্ববিদ্বান কেউ?) ব্লগার রেজোওয়ানা আপা আমার এই আহবানে সাড়া দিয়েছেন এবং খুব সুন্দরভাবে সহজ ভাষায় ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিয়েছেন (কমেন্ট নং ৪৬ দ্রষ্টব্য)।
এবারে আসল কথায় আসা যাক, সেটা হলো যে গভীরতা নিয়ে এতক্ষণ ভ্যানভ্যান করলাম সেইটা কত, অর্থাৎ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ জায়গাটা কতখানি গভীর। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, এর গভীরতা হচ্ছে ১০, ৯১৬ মিটার, অর্থাৎ সাকূল্যে প্রায় ৩৫, ৮১৪ ফিট! অর্থাৎ পুরো মাউন্ট এভারেস্টকেও যদি তুলে এনে এই জায়গায় ডুবিয়ে দেয়া হয়, তাও তার মাথার ওপর আরও মোটামুটি ২,০৭৬ মিটার জায়গা বেঁচে যাবে! (আরও একটা এভারেস্টের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বসিয়ে দেয়া যাবে!)
সবচেয়ে বড় রকম তব্দা খেলাম নিচের ছবিটা দেখে।
একটু খেয়াল করে দেখুন, কি অদ্ভুত লাগছে না দেখতে? বেশ কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে সত্যি সত্যি মনে হয় পানির একেবারে তলায় ঠিক ঐ জায়গাটায় চলে গেছি, ঐ যে একটা ছোট্ট বাতির মতন জ্বলছে... ওটাই সেই জায়গাটা। আর সেখানে পানির চাপ হলো ১০৮.৬ মেগাপ্যাস্কেল, অর্থাৎ প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রায় ১৫,৭৫০ পাউন্ড (যেটা সমুদ্র্র পৃষ্ঠে স্বাভাবিক বায়ুর চাপেরও প্রায় ১০০০ গুণেরও বেশি)!
অনেক বড় শক্তিশালী জাহাজও যদি ওরকম জায়গায় ডুবে যায়, মুহূর্তেই ভয়াবহ পানির চাপে ডিমের খোলার মত ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে!
ছবিতে জায়গাটা খানিকটা পাহাড়ের উপত্যকার মত লাগছে দেখতে, আসলেও মনে হয় তাই (আমি কিন্তু ঐখানে গেসিলাম, তবে স্বপ্নে)। অবশ্য ছবিতে যত অপ্রশস্ত দেখাচ্ছে আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়, অতটুকু একটা জায়গা অথচ তার দৈর্ঘ্য হলো ২৫৫০ কিলোমিটার (প্রায় ১৫৮০ মাইল)! চওড়া অবশ্য অত নয়, এই টেনেটুনে ৬৯ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) হবে।
এবারে এই এলাকার অদ্ভুত বাসিন্দাদের সাথে একটু পরিচিত হওয়া যাক। অনেক বাসিন্দা আছে এখানকার, তারা সংখ্যায় যেমন অনেক, তেমনি বৈচিত্র্যেও কম না। এনাদের কেউ কেউ আছেন যারা দেখতে মোটামুটি ভদ্রস্থ (আদর করতেও ইচ্ছে করতে পারে), আবার কেউ কেউ আছেন যারা দেখতে অতীব বিভৎস! ছবি পেয়েছি অনেকেরই কিন্তু সবারটা দিলাম না কারণ তাতে পোস্ট বিশালাকার ধারণ করতে পারে (যদিও তারা আমাকে তাদের সবার ছবি দেবার জন্য খুবই পীড়াপীড়ি করছিলো!)।
ভালো চেহারার দু’একজন হলো এরাঃ
১.
বেশ ফুলের মত না দেখতে?
২.
চোখ মনে হচ্ছে একটা, কিন্তু চেহারা নেহাত খারাপ না, কি বলেন?
আর চরম বদখত চেহারার দুএকজন হলো এরাঃ
৩.
বাবারে!
৪.
এই খোমা তো একবার দেখলে দ্বিতীয়বার দেখার সাধ মিটে যাওয়ার কথা!
বেশ কয়েক ধরণের অক্টোপাসও আছে এখানে, তার মধ্যে এদের সাথে আপনার দেখা হয়ে যেতে পারেঃ
৫.
দেখে মনে হচ্ছে দু’টো শিং গজিয়েছে!
৬.
এনার নাম নাকি টেলিস্কোপ অক্টোপাস, কেমনে কি!
৭.
ইনি বোধহয় লাল জামা গায়ে দিয়ে আছেন (আহা অক্টোপাস বলে কি সাধ আহ্লাদও থাকতে নেই!)
ম্যালা প্যাঁচাল পাড়া হয়ে গেছে, আপাততঃ ক্ষ্যামা দিই।
ও হ্যাঁ, যে লিঙ্কটা দেখে এই পোস্ট লেখার কথা মাথায় আসলো সেটা হলো এটা।
আর তার সঙ্গে উইকি তো আছেই।
আপনাদেরও এরকম পছন্দের বেড়ানোর জায়গা থাকলে ঝটপট শেয়ার করে ফেলুন।