somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি এবং কবি

০৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুটো উপন্যাস। দুটো নাম- কবি এবং কবি। একটির লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অপরটির হুমায়ূন আহমেদ। তারাশঙ্করের ‘কবি’ বই আকারে প্রকাশ পায় প্রথম ১৯৪৩ সালে, আর হুমায়ূন আহমেদের কবি ১৯৯৬ সালে। আঙ্গিক বিবেচনায় দুই কবির মধ্যে অমিল অনেক। তস্করকূলের ছেলে নিতাই, তার কবিয়ালী আর ব্যক্তি জীবনের নানা দিক নানা রঙে চিত্রিত হয়েছে তারাশঙ্করের ক্যানভাসে। কাহিনীর মূল নায়ক নিতাই চরণ। গ্রামের অশিক্ষিত লোকেরা তাকে নেতাই বলে ডাকে; ঝুমুর দলের বসন্তের কাছে সে কয়লা-মানিক; নির্মলা-ললিতা তার নাম দিয়েছে বসন্তের কোকিল, আর গানের জন্য চারিদিকে নাম রটেছে কালো কোকিল। তার দেহ কঠিন, পেশি সবল, রঙ রাত্রির অন্ধকারের মতো কালো, চোখের দৃষ্টি বিনীত। পরিবারের পেশায় তার মন নেই; স্বাভাবিক-স্বচ্ছন্দ জীবন চায় সে। রবি ঠাকুর দর্শনে বাস্তবের জীয়ণকাঠি ছোঁয়ায় সে, ‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার’। বন্ধু রাজাবাবুর শ্যালিকা ঠাকুরঝিকে মনে ধরে তার। গাত্র বর্ণ ঘোর শ্যামল। কিন্তু, গাত্র বর্ণের বিচার সে করে নি।
‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো কেশে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?”

কিন্তু প্রথা আর সমাজের বেড়াজাল ডিঙিয়ে সে হাত, আর ধরা হয় নি। ঝুমুর দলের রূপজীবিনী বসন্তকে নিয়ে ঘর বেঁধেছে, কিন্তু সে সুখ টিকলো না বেশিদিন। তার আঁশ অপূর্ণই থেকে যায়ঃ

“এই খেদ আমার মনে মনে।
ভালবেসে মিটল না আঁশ- কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”

জীবণ নামক আকাশটার, নাটাই বিহীন ঘুড়ি, নিতাই কবিয়ালের মেঘের ভাঁজে ভাঁজে গোত্তা খাওয়ার অভিজ্ঞতা পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয়, কড়া পাকে তৈরি বাস্তবতার সামনে। তারাশঙ্কর গোটা উপন্যাস জুড়েই নিতাই চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন। তারই ছায়ায় বেড়ে উঠেছে অপর দুটি চরিত্র ঠাকুরঝি এবং বসন্ত। অপরদিকে হুমায়ূন আহমেদের কবির প্রধান চরিত্র নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের আতাহার। তার অপর দু-বন্ধু সাজ্জাদ আর মজিদ কবিগুণে পুষ্ট হলেও পরিপাটি জীবনের হাতছানি তাদের কবিতা ছাড়তে বাধ্য করেছে। অর্থ কষ্টে নুয়ে পরা পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র হয়েও, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ছোট বোনের বিয়ে কিংবা ভাইয়ের বিদেশ যাত্রা সব কিছু থেকেই সুকৌশলে গা বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা আতাহারের। কিন্তু তার পরও কোথায় যেন একটা দৃঢ় বন্ধনে বন্ধি সে। নিজেকে নিয়ে দুদন্ড ভাববার ফুরসত পায় না। কবিতা নিয়ে পত্রিকা অফিসে ধর্না দেওয়া, নীতুর সাথে খুনসুটি, উদ্দাম চন্দ্রবিলাস কিংবা উদ্দেশ্যহীন হেঁটে চলা তার চরিত্রটিকে নিয়ে ভ্রান্তি তৈরি করে। মায়ের মৃত্যু, বোনের বিয়ে আর ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার পর তার সঙ্গী হয়, নিঃসঙ্গতা। গৃহত্যাগী জোছনা যেন তাকে, হাতছানি দিয়ে ডাকে। উপন্যাসের শেষেও রয়ে যায় হুমায়ুনিক টুইস্ট। মৃতপ্রায় কবি, আতাহার উপন্যাসে শেষে এসে নীতুকে নিয়ে তার অব্যক্ত ভাব প্রকাশ করে। তারপরও তাদের নিয়তি নিশ্চিত নয়। ল্যান্ড ফোনের নম্বরটির পরিবর্তে স্বভাব কবির মাথায় ছোটে কবিতার ভাঙ্গা পংক্তি। প্রশ্ন জাগে, নীতুর টেলিফোনটি বাজবে তো ?



আলেয়ার পেছনে ধাওয়া করে যাওয়া নিতাই, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মুখোমুখি চরিত্র। আদি গ্রাম বাংলার সরল জীবন, যেমন বাস্তবতার বন্ধুর পথ বেয়ে উঠে এসেছে তারাশঙ্করের ‘কবি’-তে, তেমনি হুমায়ূন আহমেদের ‘কবি’-তে, উঠে এসেছে শহুরে জীবনে মুখ থুবড়ে পরা এক কবির জীবণ উপাখ্যান। গ্রাম্য মেঠো পথে হেঁটে বেড়ানো নিতাই কবিয়াল আর চন্দ্রভূক শহুরে কবি আতাহারকে বাস্তবতা হাটিয়ে নেয় একই পথে। একজন শ্রান্তি অন্বেষণে ধরেছে বৈরাগ্য সাধন, অপরজন সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার অপেক্ষায় অপেক্ষমান।

বেঁচে থাকুক কবি।
জয়তু, তারাশঙ্কর।
জয়তু, হুমায়ূন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×