
খুব ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে, বিশ্ব কি তাহলে পারমানবিক যুদ্ধের দিকেই এগুচ্ছে? রাশিয়ার মত পারমানবিক শক্তিধর একটি দেশের উপর এমন নজিরবিহীন হামলা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে।
গত রাতে রাশিয়াজুড়ে দেশটির বিমানবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইউক্রেন যে হামলা চালিয়েছে, সেটাকে তাঁদের দুঃসাহসী ও অসাধারণ কৌশল বলা হলে অতিরঞ্জন হবে না। ‘অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব’ নামক এ হামলায় রাশিয়ার অন্তত ৪০ টি অত্যাধুনিক বোমারু বিমান ধ্বংস করা হয়েছে যে বিমানগুলো পারমানবিক বোমা বহন করতে সক্ষম। এ হামলায় রাশিয়ার অন্তত ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের (প্রায় ৫২০ কোটি পাউন্ড) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের মানুষ এ ড্রোন হামলাকে আগের কিছু বড় সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করছেন। যেমন ২০২২ সালে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরে নৌবহরের প্রধান জাহাজ মস্কভা ডুবিয়ে দেওয়া, কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ, আর পরের বছর সেভাস্তোপোল বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ গণমাধ্যমকে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে, এটি এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে পরিকল্পিত ও সফল অভিযান।
১৮ মাস ধরে এ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অভিযানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু ছোট ড্রোন বিশেষভাবে তৈরি ট্রাকের ভেতর লুকিয়ে রেখে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পাচার করা হয়। এরপর সেগুলো হাজারো মাইল দূরে রাশিয়ার চারটি ভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আশপাশের বিমানঘাঁটিগুলোর দিকে ড্রোন হামলা চালানো হয়।
ইউক্রেনের টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা–বিশ্লেষক সেরহি কুজান বলেন, ‘বিশ্বে এর আগে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এমন কিছু করেছে বলে জানা নেই।’
কুজান আরও বলেন, ‘এ কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো আমাদের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম ছিল। সেখানে এ রকম মাত্র ১২০টি বিমান আছে, আর আমরা আঘাত করেছি ৪০টিতে। এটি একেবারে দুর্দান্ত একটি সংখ্যা।
তবে ইউক্রেনের সামরিক ব্লগার ওলেকসান্দর কোভালেনকো বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে রাশিয়ার সামরিক শিল্পকাঠামোর এখন যে অবস্থা, তাতে এগুলোকে শিগগিরই পুনরুদ্ধার বা মেরামত করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
এ হামলায় যেসব কৌশলগত বোমারু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে আছে টিইউ-৯৫, টিইউ-২২ ও টিইউ-১৬০। সেগুলো এখন আর তৈরি হয় না বলে পোস্টে উল্লেখ করেছেন ওলেকসান্দর কোভালেনকো। তাঁর মতে, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমানগুলো মেরামত করাটাই কঠিন হবে, আর এর প্রতিস্থাপন একেবারেই অসম্ভব। এর মধ্যে সুপারসনিক টিইউ-১৬০ হারানোর ক্ষতি সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে বলে মনে করেন কোভালেনকো।
কোভালেনকো লিখেছেন, ‘আজ রাশিয়ার বিমানবাহিনী শুধু তাদের দুটি দুর্লভ বিমানই হারায়নি, দলের দুই অনন্য সম্পদ হারিয়েছে।’
এক্সে বিজনেস ইউক্রেন সাময়িকীর একটি পোস্টে বলা হয়, ‘দেখা যাচ্ছে, সবকিছুর পরও ইউক্রেনের হাতে কিছু কার্ড ছিল। আজ জেলেনস্কি খেললেন ড্রোনের রাজা হয়ে।’
রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘ম্যাশ’ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে সাইবেরিয়ার ইরকুতস্ক অঞ্চলে কয়েকজনকে ট্রাকের ওপর উঠে ড্রোনের উৎক্ষেপণ থামাতে চেষ্টা করতে দেখা যায়।
রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সামরিক বিমানঘাঁটি থেকে পাওয়া ভিডিওতে ধ্বংস হওয়া এবং জ্বলন্ত বিমান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
মস্কো অঞ্চলের ভসক্রেসেনস্কে আগুনে পুড়ছে এমন একটি বিমানঘাঁটির ভিডিওতে এক রুশ সেনাসদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’ তাঁর পেছনে কয়েকটি বোমারু বিমান পুড়তে দেখা গেছে।
এই হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখতে বিবিসিতে ঢুঁ মারুন- Ukraine drones strike bombers during major attack in Russia
আরও পড়ুন- Ukraine's audacious drone attack sends critical message to Russia - and the West
এদিকে জার্মান প্রতিরক্ষা প্রধান General Carsten Breuer সতর্ক করে বলেছেন, Russia may attack Nato in next four years.

সব মিলিয়ে দিন দিন পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকেই যাচ্ছে- পুতিন যদি এখন মাথা গরম করে ইউক্রেনের উপর পারমানবিক হামলা করে বসে; তাহলে ইউক্রেনের মিত্ররাও রাশিয়াকে দমন করতে তাদের উপর পারমানবিক হামলা চালাবে এত কোন সন্দেহে নেই, অন্যদিকে রাশিয়ান মিত্ররাও ইউরোপের উপর হামলা চালাবে এর এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাচ্ছি।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে আরও পড়ুন - রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে নিয়েছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের ড্রোন আক্রমণে রাশিয়ার সুপারসনিক বোমার ধ্বংস
গতরাতের এ হামলা বিষয়ে আরও পড়ুন: রাশিয়ার চার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি।
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বকে কী বার্তা দিল ইউক্রেন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১০:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


