
গতকাল রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গের একটি বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়ে টিইউ-২২ নামক অত্যাধুনিক একটি বোমার যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। শব্দের গতির চেয়েও দ্বিগুণ বেগে ছুটে চলার সক্ষমতা সম্পন্ন রাশিয়ার এই সুপারসনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস করাটা ইউক্রেনের জন্য এক বড় অর্জন বলে মনের করেন বিশেষজ্ঞরা। শক্তিশালী রাশিয়ার নিচ্ছিদ্র এয়ার ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে ইউক্রেনের ড্রোন কিভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে তা ভেবে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম। বিস্তারিত: বিবিসি
গত দুই মাস ধরে ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে চোরাগোপ্তা হামলা করা শুরু করেছে, ইতিমধ্যে মস্কোয় বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলক ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। এসব ছোট খাটো হামলায় রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্র মস্কোর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে; ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মস্কোর জনগণ বিশেষ করে এলিট শ্রেণী পুতিনের উপর চরম খেপেছে এবং এই যুদ্ধ শুরু করার জন্য তাকেই দায়ী করছে। ভিতর এবং বাহির থেকে প্রচণ্ড চাপে থাকা পুতিনের জন্য ইউক্রেন এখন এক গালার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে; মাত্র দুই দিনে ইউক্রেন দখল করার তার এই উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষা এখন তার জন্য বুমেরাংয়ে পরিণত হয়েছে, সে না পারছে ইউক্রেন দখল করতে না পারছে দলবল নিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাতে; সবমিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেও তার অনুকূলে নেই ।

ছোট সামরিক শক্তিধর দেশ ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ান বাহিনী এমন নাকানি চুবানি খাবে তা পুতিন কেন দুনিয়ার কেউ'ই হয়তো কল্পনা করেনি। প্রায় দুই বছর হতে চললো এখনো নাকানি চুবানি খেয়েই যাচ্ছে; ইউক্রেন বাহিনীর বুদ্ধিদীপ্ত পাল্টা আক্রমণে একের পর এক দখল করা অঞ্চল হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ; এখন আবার মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ার মুল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামলা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহেও কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ার এক যুদ্ধ জাহাজে নির্ভুল হামলা চালিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ান সেনাদের জন্য এখন এক বিভীষিকা নাম, তাছাড়া আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইউক্রেনিয়ান স্নাইপার'রা এখন রাশিয়ান বাহিনীর জন্য এক অদৃশ্য আতঙ্কের নাম।
বেচারা পুতিন তোমার সময় ঘনিয়ে আসছে, ব্যক্তিগত সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ইউক্রেন রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে জোরদার আঘাত হানা শুরু করবে। (যদি আমেরিকা থেকে অনুমতি পায় তাহলে, এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে) সত্যিই যদি এমনটা হয় তাহলে রাশিয়ান জনগণই পুতিনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করিবে।

প্রবল শক্তিধর রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য ইউক্রেনের জনগণকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। যুদ্ধের শুরুতে দেখেছি ইউক্রেনের সাধারণ জনগণকে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ফ্রন্ট লাইন কভার করতে। দেশপ্রেম কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি তা তারা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে দেশের জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সামনে আগায় তাহলে প্রবল ক্ষমতা সম্পন্ন বহিঃশত্রুকে ধরাশায়ী করা সম্ভব (যা আমরা মুক্তিযুদ্ধে দেখিয়েছি

পুতিন ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা খুব ভালো করেই জানতো শুধুমাত্র এই জেলেনস্কি'কে হত্যা অথবা আটক করতে পারলেই ইউক্রেনের পরাজয় নিশ্চিত, যে কারণে ওরা শুরুতেই রাজধানী কিয়েভে আক্রমণ শুরু করেছিল, কিন্তু বিধিবাম!! ইউক্রেনের জনগণ রাশিয়ার সমস্ত আক্রমণ প্রতিহত করে দিয়েছে, তারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়ান বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে রাশিয়ান সেনাবাহিনী কিয়েভের ধারে কাছে ঘেষতে পারছে না। এভাবেই ইউক্রেনের জনগণ তাদের প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করেছে। আর এদিকে বাংলার নাদান ফেসবুকিয় জনগোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি'কে 'জোকার' উপাধি দিয়ে ফেসবুক গরম করে তুলছে; "দুই দিনের মধ্যেই জেলেনস্কি রাশিয়ান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে" এমন গুজব রটাচ্ছে

'জোকার' নয় বরং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি'কে 'সিসু' উপাধি দেয়া যেতে পারে। 'সিসু' হচ্ছে ফিনিশ একটা শব্দ যার যুতসই কোন ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই তবে এর মানে হচ্ছে- "ইনসেইন লেভেলের আত্মবিশ্বাস, হেরে গিয়েও হারবো না, মরেও মরবো না" এমন একটা অবস্থা আরকি।

'সিসু' এর কথা যেহেতু উঠেছে তাহলে 'সিসু' নিয়ে একটু বয়ান করি। আমার একটি পোস্টে ব্লগার রাজীব নুর আমাকে 'সিসু' মুভিটি দেখার সাজেষ্ট করেন। 'সিসু' হচ্ছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপর নির্মিত ফিনল্যান্ডের একটি মুভির নাম, এ বছর জানুয়ারিতেই মুক্তি পেয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে অনেক মুভি'ই নির্মিত হয়েছে ইতিমধ্যে, সুতরাং নতুন করে এখানে আর কি দেখার আছে, কিন্তু মুভিটি দেখার পর বুঝলাম মুভিটির মাধ্যমে ফিনিশ নির্মাতারা মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভবিষ্যতের যুদ্ধের কথা চিন্তা করে ফিনিশ জনগণকে নতুন করে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ান সেনাবাহিনী ফিনিশিয়দের কাছে ব্যাপকভাবে ধরাশায়ী হয়েছিলো, সে ইতিহাসই মূলত নতুন করে মুভিটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যাতে যে কোন ধরণের যুদ্ধে তাদের দেশের জনগণের আত্মবিশ্বাসের পারদ উচ্চ পর্যায়ে থাকে। যেহেতু চারিদিকে যুদ্ধ যুদ্ধ একটা ভাব তাছাড়া নব্য ন্যাটোতে যোগদান করা ফিনল্যান্ডের সাথে রাশিয়ার কয়েক হাজার কিলোমিটারের লম্বা সীমান্ত লাইন রয়েছে, তাই যে কোন মুহূর্তে ফিনল্যান্ডের সাথে রাশিয়ার সেই পুরোনো ক্ল্যাশ'টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে সেজন্য আগে থেকেই জনগণকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার কাজটিই করে রাখছেন ফিনিশ নির্মাতারা। তাই আমি বলবো এটি একটি সময়োপযোগী মুভি। গত সপ্তাহে আমি মুভিটি দেখেছি, রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে ফিনিশ সাধারণ মানুষের হাতে নাস্তানাবুদ হতে দেখে খুব মজা পাইসি

ভালো থাকবেন সবাই।
------------------------------------------------
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আরও পড়ুন:
পুতিনের হুমকি ধামকিতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ হবে না।
অবশেষে ন্যাটো জোটে ফিনল্যান্ডের যোগদানের চুরান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো
রুশ সামরিক নেতাদের উৎখাতের হুমকি, মস্কোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
যেভাবে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার পাঁয়তারা করছে
অবশেষে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




