
প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন- ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আমার মোটেও পছন্দ নয় কিন্তু রাজনীতি তো কারো একার পছন্দের অপছন্দের বিষয় নয়, যেখানে কোটি মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয় সেখানে আমার একার মতামতে কি'ইবা আসে যায়?
অনেকে জামাতকে পছন্দ না করার অন্যতম কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে সেই ১৯৭১ সালেই, অর্ধশতাব্দীর পুরোনো একটি বিষয় নিয়ে এত টানা হেঁচড়ার কি কোন মানে আছে? মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বাংলাদেশের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় কিন্তু তাই বলে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ করে তো লাইফ শেষ করে দেয়া যায় না, আমাদের তো সামনে এগুতে হবে।
তাছাড়া- সেই সময়ে জমায়েতের যে সকল নেতাকর্মী পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে তাদের বেশীরভাগই এখন আর জীবিত নেই এবং বর্তমানে যারা জমায়েতে ইসলামী রাজনীতির সাথে জাড়িত তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেই রাজনীতি করছে, তারা বাংলাদেশের রাজনীতিই করে; পাকিস্তানের নয়, আমি মনে করি না যে জমায়েতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে দেশ আবার পাকিস্তান নিয়ে যাবে, এগুলো মিথ্যে জুজু মাত্র।
অন্যদিকে বিএনপির উপরও সাধারণ মানুষ চরম বিরক্ত, তারা যদি ক্ষমতায় আসে প্রধানমন্ত্রী কে হবে তার'ই কোন হদিস নেই, 'আগামী মাসে তারেক জিয়া দেশে আইতিয়াসে' এই কথা আমি শুনতেছি গত দেড় বছর ধরে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে তারেক জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার পরেই কেবল সে দেশে আসবে তার আগে নয়, হায়রে আমার দেশপ্রমিক!!
সকল যুক্তি তর্ক বাদ দিয়ে যদি সহীহ গণতন্ত্রের কথায় আসি- দেশের জনগণ যদি জামাত'কে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে তাহলে আমার বা আপনার সমস্যা কি? এখানে আমার বা আপনার সত্যি'ই কি কিছু করার আছে? তারা তো আর জোড় করে ক্ষমতা দখল করছে না, ভোটের মাধ্যমেই যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে সমস্যাডা কি হেইডাই আমি বুঝতে পারলাম না।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের দিকে খেয়াল করুন- ভারতে হিন্দু জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ার সুবাদে ভারতে সবসময় হিন্দুত্ববাদ দলই সরকার গঠন করে, ইহাই গণতন্ত্রের সুফল। কাজেই বাংলাদেশে যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট একটি দেশ সেখানে তো ইসলামীক দলগুলোই ক্ষমতায় আসার কথা, গণতন্ত্রের সরল অংক তো সে কথাই বলে। তাহলে জামাত ক্ষমতায় আসতে পারে ভেবে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি করে লাভ কি? চিল্লায়া কি মর্কেট পাওন যায়?

গত জুলাই আন্দোলনে যে গণতন্ত্রের জন্য শত শত তরুণের প্রাণ গেলো, রক্ত ঝড়ালো, হাত-পা, চোখ, হারালো তাদের আত্নত্যাগের কি কোনই মূল্য নেই আপনার কাছে? তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফুঁসলিয়ে তাদের রাস্তায় নামিয়েছিলেন কেন? হাত, পা, চোখ হারানো এমন শত শত তরুণের জীবনের দায়ভার কে নেবে? আম জনতার রক্ত ঝড়িয়ে কি শুধু নিজেদের ফায়দা লুটতে চান? জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় কোন নেতা মারা গেলো না কেন? কেন শুধু আবেগী আম জনতার রক্তের উপরেই রাজনীতি করে এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো?
এখন কি তাহলে জামাত হঁটাও নামে আরেক দলকে রাস্তায় নামিয়ে তাদেরও রক্ত ঝড়াতে চান? প্রতি বছর বছর কি তাহলে আন্দোলন চলতেই থাকবে? আর এভাবেই কি রক্তের আবর্তে ঘুরতে থাকবে বাংলাদেশের রাজনীতি?
এসবের শেষ হওয়া প্রয়োজন।
------------------------------------
আরও পড়ুন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে কেন মুসলিম জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


