somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

If You Forget Me by Pablo Neruda - কবিতার কথা, কবিতার ব্যথা

০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



If You Forget Me by Pablo Neruda

পাবলো নেরুদার এই কবিতাটা আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয়, যতটা না প্রিয় তার থেকে বেশি অর্থবহ করে। কবিতাটার শুরুর দিকের কথাবার্তা অনেকটাই বেশ প্রেম বা প্রেমাপন্ন অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। শুরুর-দিকের লাইনগুলোতে কবি অনেকটা তার বর্তমান অবস্থা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন যে, আমি চাই তুমি জানো, তুমি বোঝো ব্যাপারটা আসলে কী রকম। যদি আমার জানলায় ধীরে বয়ে চলা শরৎ ঋতুর দিকে তাকাই, যদি আমার জানলায় স্ফটিক চাঁদ এর দিকে তাকাই, যদি শুভ্র এ মায়ায় ঘরের ফায়ার-প্লেসের স্পর্শাতীত ছাই ভস্ম, অথবা জ্বলন্ত আগুনের কাঠগুলোকে স্পর্শ করি- সবকিছুই আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়।

You know how this is:
if I look
at the crystal moon, at the red branch
of the slow autumn at my window,
if I touch
near the fire
the impalpable ash
or the wrinkled body of the log,
everything carries me to you,


বস্তুত যা কিছু পারিপার্শ্বিক, সুগন্ধ, আলো, বাতাস, জল, মেটাল, সবকিছুই আমাকে তোমার দিকে নিয়ে যায়। সবকিছুতেই আমি তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি।

as if everything that exists,
aromas, light, metals,
were little boats
that sail
toward those isles of yours that wait for me.


কবিতার এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। ভালোবাসাকে একজন সাধারণ মানুষ, অথবা একজন প্রেমিক ঠিক যেরকম দেখতে পায় সেভাবেই কবি পাবলো নেরুদাও দেখেছেন ভালোবাসার অস্তিত্বকে। পরের লাইনগুলো যদি দেখি, এখানেই শুরু হয় একেকজনের একেকভাবে ভেবে নেয়ার সূচনা। ঠিক যেমনটা দেখা যায় Robert Frost এর কবিতার The Road Not Taken এর শেষ লাইনগুলো নিয়ে মানুষের তর্ক বিতর্ক। কেউ কেউ ভেবেছেন

Two roads diverged in a wood, and I—
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.


এই কথাগুলো দিয়ে কবি বুঝিয়েছেন যে আমরা এমন একটা পথ বেছে নেই যে পথ আমাদের নিজের কাছে ঐ স্থানিক সময়ে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত মনে হয়, মনে হয় এই পথটাই সবচেয়ে বেশি উত্তম, মঙ্গলকর ও সঠিক। কিন্তু পরে যখন অনেকদিন পরে ভাবতে বসা যায়, তখন দেখা যায় যে- যে পথটা আমরা নিয়েছিলাম আর যে পথটা আমরা নেই নি, দুটি পথই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। যে পথটা আমরা স্বেচ্ছায় নিয়েছি, অথচ জানি নি যে কী আছে এই পথের প্রান্তে; আর যে পথটা নেই নি, সেটাও জানি না কী ছিল ঐ পথের ওপর প্রান্তে।

কিন্তু যে পথটা নিয়েছিলাম, সেটা যখন শেষ হলো, আমরা দেখতে পেলাম এই পথের শেষ। তখন আমাদের মনে আসে যে পথটি আমরা নেইনি, সে পথের কথা। ভাবতে বসি, ঐ পথে হয়ত অন্যকিছু ছিল। অথচ, আমরা একটা পথই নিতে পারি। যে পথটা নেই নি, সেটার জন্য আজীবনের দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবি Robert Frost লিখেছেন -

I shall be telling this with a sigh
Somewhere ages and ages hence


যাইহোক, ছোটোখাটো এই detour শেষ করে ফেরা যাক আমাদের আজকের কবিতা If You Forget Me এর দিকে। যেখানে পাবলো নেরুদা লিখেছেন

Well, now,
if little by little you stop loving me
I shall stop loving you little by little.


যদি তুমি অল্প অল্প করে আমার জন্য ভালোবাসা বন্ধ করে দিতে থাকো, আমিও হয়ত তোমায় অল্প অল্প করে ভালোবাসা বন্ধ করে দেবো। লাইনটা পড়ে মনে হবে, হ্যাঁ এ আর এমন কি! তুমি আমাকে ভুলে যেতে থাকলে আমিও তোমায় ভুলে যেতে থাকবো।

কিন্তু পাবলো নেরুদা নিশ্চয়ই এমন সমতল ও স্থূল চিন্তা নিয়ে লিখেন নি। পরের লাইনে তিনি লিখেছেন

If suddenly
you forget me
do not look for me,
for I shall already have forgotten you.


যদি তুমি হঠাত করে একদিন আবিষ্কার করো যে, আমাকে ভুলে গেছো; আমায় আর খুঁজতে যেও না। আমিও তোমায় ভুলে গেছি ইতোমধ্যে।

এখানে কবি এমন কিছুটা লিখতে চেয়েছেন যে, (সম্পুর্ণ আমার নিজের ভাবনা) এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিলে, এই যে একদিন হঠাত করে আমাকে তুমি ভুলে গেলে; এমনটা হলো, কেবল ও একমাত্র আমিই এটা হতে দিয়েছি, আমিই চেয়েছি যে তুমি আমায় আর ভালবাসবে না, আমিই চেয়েছি যে আমাকে তুমি ধীরে ধীরে ভুলে যাও। যদি আমি না চাইতাম যে তুমি আমায় ভুলে যাও, তুমি পারতে না আমাকে ভুলে যেতে। যদি আমি না চাইতাম তুমি আমাকে ভালোবাসা বন্ধ করে দাও, তুমি কোনোদিন পারতে না আমাকে না ভালোবেসে থাকতে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কেন নেরুদা চেয়েছেন যে তার প্রিয়তমা তাকে ভুলে যাক? কেন তিনি চেয়েছেন যে ধীরে ধীরে তার প্রিয়তমা তাকে ভালোবাসা বন্ধ করে দিক। এমনটা কি সত্যিই করা যায় যে, কাউকে ধীরে ধীরে ঘুম পাড়ানোর মতন কপালে হাতে বোলাতে বোলাতে ঘুম পাড়িয়ে দেব; আর যখন সে কোমল স্পর্শে ঘুমিয়ে যাবে আমি তখন চলে যাবো অনেক দূরে। আবার যখন তার ঘুম ভাঙবে, সে যখন দেখবে আমি নেই তার শিয়রে- তখন সে এটা সচেতনভাবেই মেনে নেবে যে, আমি ছিলাম না কখনোই তার চোখের 'পরে আঙ্গুল হয়ে।

প্রশ্ন আসতেই পারে- এমন কি সম্ভব যে- কাউকে একবার ভালোবেসে ফেললে, এমন কী হতে পারে যে আর চাইবো না সে আমায় ভালোবাসুক? যদি হয়, তাহলে এমন দহন বুকে নিয়ে কত ধীরে ধীরে নিজেকে স্বীকার করে পরে প্রিয়ার কাছে যাব আর গিয়ে তাকে নিজের অজান্তে শেখাবো কিভাবে সে আমাকে ভুলে যেতে শিখে নেবে, কীভাবে আমার ছায়া আর স্পর্শ করবে না আঙ্গিনা।

যাই হোক, লাইনগুলো যদি এবার আরেকবার পড়ি, দেখা যাক অর্থগুলো অন্যভাবে ধরা দেয় কিনা আমাদের কাছে-

Well, now,
if little by little you stop loving me
I shall stop loving you little by little.

If suddenly
you forget me
do not look for me,
for I shall already have forgotten you.


কবিতার পরের লাইনগুলো খুব সহজ - কিন্তু খুবই চমৎকার। কবি বলেছেন, কিন্তু যদি এমনটা না হতো, যদি আমাকে এমন করতে না হতো যেন, আমিই তোমাকে প্ররোচনা করছি আমাকে ভুলে যেতে; এমনটা না হয়ে যদি সুদূরপ্রসারী চিন্তায় আর যুগপৎ উন্মত্তায় ভেসে যেতে পারা যেত, যদি তুমি আমি দুজনেই প্রত্যেকদিন, প্রত্যেক মুহূর্তে ভাবতাম যে, আমরা নির্ধারিত একজন আরেকজনের জন্য, যদি অদম্য প্রেমে প্রত্যেকদিন একটা গোলাপ জন্ম নিত তোমার ঠোঁটে; তবে এমন কিছুই অসম্ভব ছিল না আমার জন্য যা আমি জয় করতে পারতাম না। এমন কোনও ভয় আমার ছিল না যা আমি কাটিয়ে উঠতে পারতাম না।

যদি এমনটা হতো, তাহলে তুমি দেখতে পেতে আমার শরীরে খেলে উঠেছে বিদ্যুৎ, এমন কিছুই নেই জাগতিক যা আমাকে নির্বাপিত করে রাখতে পারে, অথবা তুমি দেখতে পেতে আমি হয়ত ভুলে যেতাম না কিছুই, আমি মনে রাখতাম তোমার প্রত্যেকটা ক্ষুদ্র সেকেন্ডের হিসেব।

if each day a flower
climbs up to your lips to seek me,
ah my love, ah my own,
in me all that fire is repeated,
in me nothing is extinguished or forgotten


এমনটা যদি হতো, তুমি দেখতে পেতে প্রিয়, যতদিন তুমি বেঁচে থাকো, আমার ভালোবাসা, আমার এ হৃদয়ের অর্ঘ্য সমস্তকিছু তোমায় অর্পণ করাতাম তোমার দুই বাহুর উপরে, তুমিও কোমলভাবে যেভাবে শিশুকে ধরে রাখো নিজের হাতের উপরে, আমাদের ভালোবাসাও সেভাবে থেকে যেত তোমার হাতের 'পর; এবং দেখতে পেতে ভালোবাসা এত মহৎ আর উদার যে, আমাকে ভালোবাসতে হলে তোমায় আর আমাকে ছেড়ে যতে হচ্ছে না।

my love feeds on your love, beloved,
and as long as you live it will be in your arms
without leaving mine.


কবিতাটি পড়তে পড়তে ভালোলেগেছিল বলেই এতকথা, এত কিছু লেখা হয়ে গেল। আমার বুঝতে পারা, বুঝতে না পারায় নিশ্চয়ই কমতি আছে। আপনাদের মূল্যবান মতামত নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে কবিতাটি আরও ভালো করে বুঝতে।

কবিতাটি শুনতে চাইলে এখানে শুনে নিতে পারেন।

https://youtu.be/6Y3P3h4oXW8?si=qdTUt0XZrqZ_yJvn
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×