
কোনো কিছুর ভেতরে থেকেও তার অংশ না হওয়া, এটাই অস্তিত্বের নীরব বিদ্রোহ।
এই কথা শুধু একটি চিন্তা নয়, এক গভীর অস্তিত্ববাদী স্বীকৃতি। এটি সেই নিঃশব্দ প্রতিবাদ, যেখানে আমরা সমাজ, সংস্কৃতি, বা জন্মসূত্রে দেওয়া পরিচয়ের মাঝে থেকেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন, অচেনা, এমনকি প্রবাহমান অনুভব করি। এই বিদ্রোহে কোনো শ্লোগান নেই, কোনো সংঘর্ষ নেই—কেবল আছে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক নিবিড় প্রয়াস।
বৌদ্ধ দর্শনের “অনাত্মা” ধারণা আমাদের মনে করায়: আমরা যা ভাবি আমরা, তা একটি ভ্রম। অস্তিত্ব কোনো স্থির সত্তা নয়, বরং এক প্রবাহ, যেমন নদীর জল—চিরপরিবর্তনশীল। নাগার্জুনের শূন্যতাবাদ বলে, “সবকিছুই শূন্য, কারণ সবকিছুই পরস্পরনির্ভর।” আমরা সমাজে, সম্পর্কে, প্রতিষ্ঠানে থাকি, কিন্তু এই থাকার মধ্যেও একটা না-থাকার অনুভূতি আমাদের তাড়া করে। এই দ্বৈততাই আমাদের বিদ্রোহ—নীরব, অথচ অনড়।
অস্তিত্ববাদী দার্শনিক কিয়ের্কেগার্ড বলেছিলেন, “সত্যিকারের ব্যক্তি হওয়া মানে ভিড়ের মাঝে একা দাঁড়ানো।” এই একাকীত্ব কোনো দুর্বলতা নয়, বরং শক্তি। সার্ত্রের ভাষায়, “মানুষ স্বাধীনতায় অভিশপ্ত।” আমরা সমাজের দেওয়া পরিচয়ে বাঁধা পড়েও সেই পরিচয় প্রশ্ন করি, কারণ আমাদের অস্তিত্বের দায় একান্তভাবে আমাদের। এই প্রশ্নই আমাদের বিদ্রোহ: আমি কি সত্যিই এর অংশ? নাকি শুধু ভেতরে থেকেও বাইরের?
এই নীরব বিদ্রোহ শুধু দার্শনিক আলাপ নয়, এটি তাদের গল্প, যারা প্রতিদিন নিঃশব্দে ভাঙে, কিন্তু কিছুই বলে না। যেমন রিলকে লিখেছিলেন, “হয়তো সমস্ত ভয়ঙ্কর জিনিসের মধ্যেই কিছু অচেনা অপেক্ষা করে, আমাদের বোঝার জন্য।” এই বিদ্রোহ তাদের জন্য, যারা ভিড়ে থেকেও একা, যারা সমাজের ছাঁচে ঢালাই হয়েও নিজের আকৃতি খুঁজে।
অস্তিত্বের এই নৃত্যে আমরা শিখি: সত্য কোনো নির্দিষ্ট পরিচয়ে নয়, বরং প্রশ্নে, নীরবতায়, আর নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারে। এই নীরব বিদ্রোহ আমাদের মুক্ত করে—যেন আমরা প্রবাহের সঙ্গে বয়ে যাই, অথচ কখনো পুরোপুরি তার অংশ হই না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


