somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ি যুদ্ধাপরাধী: চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়

১৮ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী আদিবাসী রাজাকারদের কথা আমাদের নতুন প্রজন্ম জানেই না। আর এই সুযোগে আদিবাসী রাজাকাররা বহাল তবিয়তেই আছে। দুঃখের হলেও সত্যি, রাজাকাররা এবং তাদের বংশধররা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘেও পৌঁছে গেছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা আদিবাসী যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার করতে পারিনি কিন্তু তাদের পুরস্কৃত করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি করা কি অপমানের নয়?
ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয় এবং ১৮৮১ সালে সমগ্র জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিন সার্কেলে তিন রাজা ছিল। তাদের মধ্যে ছিল চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়, বোমাং রাজা অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং মানিকছড়ির মং রাজা মং প্রু চাঁই চৌধুরী বা (মং প্রু সাইন)। মানিকছড়ির রাজা ছাড়া অন্য দুই রাজাই ছিল যুদ্ধাপরাধী।
চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সহযোগিতায় রাঙামাটিতে গণহত্যা চলে। এই সময়ে রাঙামাটি মুক্ত করতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র এবং এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ইফতেখারসহ ৮-১০ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়।
চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তার বির্তকিত বই ঞযব Departed Melody -তে লেখে, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সকালে সে (রাজা ত্রিদিব রায়) তার ভগ্নিপতি কর্নেল হিউম, ম্যাজিট্রেট মোনায়েম চৌধুরী, মোহাম্মদ হজরত আলী এবং আরও কয়েকজন বাঙালি মুসলিম লীগ নেতাসহ চট্টগ্রামের নতুন পাড়ায় অবস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেন্টার-এর পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, ম্যাজিস্ট্রেট মোনায়েম চৌধুরী এবং রাজা ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে আসা আরও কয়েকজন বাঙালি ঢাকা থেকে আসা জুনিয়র অফিসারকে সঙ্গে করে কাপ্তাইয়ে যাবে। ঠিক সেদিনই বিকেলে কাপ্তাই থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল কয়েকটি লঞ্চ এবং স্পিডবোট নিয়ে রাঙামাটি আসে এবং বিনা প্রতিরোধে দখল করে নেয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত (ফেব্রুয়ারি-২০১১) পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস বইয়ে জামালউদ্দিন লেখেন, ...অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ওই দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। এই দলের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইফতেখার। (পৃষ্ঠা নম্বর ৩৭৯-৩৮০)
এর আগে রাঙামাটি মহকুমা সদরের এসডিও আবদুল আলী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে দুটি স্পিডবোটে করে মহালছড়ি থেকে রাঙামাটি আসেন। স্পিডবোটে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এসএম কালাম, আবদুল শুকুর, শফিকুল ইসলাম, মামুন, শামসুল হক মাস্টার এবং রাঙামাটি হাইস্কুলের তদানীন্তন হেডমাস্টার রহমান আলীর ছেলে ইফতেখার। এর মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য আবদুল আলীকে রাঙামাটিতে পুলিশ লাইনের এক ব্যারাকে আটক করে রেখে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেয়া হয়েছিল। এরপর সেসব জায়গায় লবণ দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া তাকে একটি জিপের পিছনে বেঁধে টেনে রাঙামাটির বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়েছিল। সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরবিন্দু শেখর চাকমা, (অঙ্কুর প্রকাশনী, জানুয়ারি-২০০৬ পৃষ্ঠা ২৫)।
ইফতেখার ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র এবং এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র। সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া প্রথম ব্যাচের সদস্য ছিলেন তিনি। তার বাবা যেহেতু রাঙামাটি স্কুলের হেডমাস্টার, তাই রাঙামাটি গিয়ে বাড়ির সবাইকে দেখবেন এবং যুদ্ধ করে তাদের মুক্ত করে আনবেন এমন ইচ্ছায় সে টগবগ করছিলেন তিনি। নিজের ছাত্র ইফতেখার সম্পর্কে আমার একাত্তর (সাহিত্য প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, পৃষ্ঠা নম্বর ৪৮) বইতে অধ্যাপক ডক্টর আনিসুজ্জামান লিখেছেন এই কথা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×