somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্সপিরেসি -এজেন্ট রায়ান.। (দ্বিতীয়/শেষ খণ্ড)

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম খণ্ড পড়ুন


ক্লিক শব্দে খুলে গেল লকারটা। ভিতরে একটা মাঝারি আকারের ফাইল রাখা। ফাইলটা খুলে একবার দেখে নিল রায়ান, তারপর আবার রেখে দিল আগের জায়গায়। সব তথ্য ওর মাথায় সংরক্ষণ হয়ে গেছে। রাশিয়ার এক গোপন দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো এক ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এল। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে একবার নজর বুলিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল,
-কোথায় যাবেন স্যার?
-এয়ারপোর্ট।
-ওকে স্যার।
ট্যাক্সি ছুটে চলল।
এক্সিডেন্টের দিন একটা গাড়ি হাইজ্যাক করে এনেছিল ফেলিক্স। দ্রুত রিনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা অপারেশন শেষ করে জানায় ও কোমায় চলে গেছে। কখন জ্ঞান ফিরবে, আদৌ জ্ঞান ফিরবে কিনা তার কিছুই ঠিক নেই। ডাক্তারের কথা শোনার পর একবার কেবিনের বাহির থেকে রিনিসকে দেখে বেরিয়ে এল রায়ান। সবাইকে অ্যালার্ট থাকতে বলে রাশিয়াগামি পরবর্তী প্লেনে চাপল ও। আজ দুদিন পর কাজ সেরে ফিরছে লন্ডনে, সেখানেই বাকি সবাইকে চলে আসতে বলেছে ও।
সবাই কনফারেন্স রুমে হাজির। রায়ান শুরু করল,
-রিনিসের সংগ্রহ করা তথ্যগুলো এখন আমাদের কাছে আছে। ও ভিতরের বিশ্বস্ত কারও সাহায্যে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে। এবার আমি জানাচ্ছি মোটামুটি পুরো ছকটা।
পাঁচ বছর আগে সিআইএ স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে একটা প্রজেক্ট শুরু করা হয়। যার মাথা থেকেই এই প্ল্যান বেরিয়েছে টাকে এক কোথায় কুবুদ্ধিসম্পন্ন একজন জিনিয়াস বলা যায়। ওদের টার্গেট ছিল পুরো বিশ্বকে দখল করে হাতের মুঠোয় রাখার মতো নিউক্লিয়ার বম্ব তৈরি করা। প্রশ্ন করতে পার যে ওরা তো এখনই তা পারে! হয়ত কথা ঠিক। হয়ত। তবে আমি আগেই বলেছি সুদূরপ্রসারী। ওরা নিউক্লিয়ার বম্বের ডেভেলপড ভার্সন তইরির প্রজেক্ট নেয়। এমন এক ধরনের ডিভাইস যা ওরা সম্পূর্ণ নিজেরা নিয়ন্ত্রন করতে পারে, এছাড়াও সেই ডিভাইসগুলো হবে আনট্র্যাকেবল। দুনিয়ার কোন রেইডার, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম এই নুক ডিটেক্ট করতে পারবে না। এমনকি ওরা এর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির এরিয়া, রেডিয়েশন জোন কন্ট্রোল করতে পারে। শুনতে অবাস্তব মনে হলেও, তখনও সেটা অবাস্তবই ছিল। কিন্তু সেই প্ল্যানারের উপর অনেকের আস্থা ছিল। সেই লোক তাই সেই প্রজেক্ট শুরু করে। তাঁর প্রথমেই দরকার ছিল একটা কাভার। সিআইএ সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে একাজ করতে পারে না। নিজেদের ঘাড়েও পরে কোন দোষ যাতে না আসে সেজন্য ছাগল হিসেবে তারা নজর দিল ইজরায়েলের উপর। ইজরায়েলের সাথে যৌথভাবে এই প্রজেক্ট শুরু করে তারা। যদিও বলা হয় যৌথ, তবুও প্রজেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজার মতো আচরন করতে দেয়া হয়েছে ইজরায়েলকে। ওরা যাতে ভাবতে পারে সব কিছু তাঁদের কন্ট্রোলে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায় যে কাজ শেষে ইজরায়েলের পেছনে লাথি মারতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না ওরা।
পিছনের দেয়ালের স্ক্রিনে ইজরায়েলকে হাইলাইট করে একটা ম্যাপ উদয় হল। ম্যাপের দিকে নির্দেশ করে বলল রায়ান,
-ডেথ সি। জর্ডান আর ইজরায়েলের মাঝে ভাগ করা। ডেথ সি এর পাড়ের জেরুজালেমের কাছাকাছি এক জায়গায় অবস্থিত এই প্রজেক্টের ল্যাব। এখানেই রয়েছে গত প্রায় তিন বছর ধরে ডেভেলপ করা প্রায় ২০ টি নুক। আমাদের পাওয়া তথ্য মতে নিজেদের কার্যকারিতা প্রমানের জন্য প্রথম যে মিসাইলগুলো ছাড়া হবে তার টার্গেট নির্ধারণ করবে ইজরায়েল। তাদের একটার টার্গেট হবে বাংলাদেশ সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। তাই যেকোনো মূল্যে ওদের ঠেকাতে হবে। আমাদের মিশন, এগুলো এবং ২০ জন কিডন্যাপ হওয়া বিজ্ঞানিকে উদ্ধার করা।
কারও কোন প্রশ্ন আছে?
ফেলিক্স হাত তুলল। রায়ান মাথা ঝাকাতে বলল,
-৭ জন এজেন্ট ব্যবহার করে পুরো বেস দখল করার প্ল্যানটা হাস্যকর মনে হচ্ছে না?
-আমরা বেস দখল করতে যাচ্ছি না। বেস সিকিউর করার জন্য আমেরিকার এডভান্সড ওয়েপন্স টেক ব্যবহার করছে ওরা। অটোম্যাটিক ডিফেন্সের ব্যাপারে বলছি আমি। এটার কারনে আমরা এয়ার অ্যাটাক, গ্রাউন্ড অ্যাটাক কিছুই অথরাইজ করতে পারছি না। তাই আমাদের ঐ বেসে গোপনে ঢুকতে হবে। একবার ওদের অপারেশন্স রুম, কন্ট্রোল রুম আমাদের হাতের মুঠোয় নিতে পারলেই বিজয় সুনিশ্চিত।
-এমনভাবে বলছ যেন ওরা আমাদের দাওয়াত কার্ড পাঠিয়ে বলছে আসুন আসুন, আমাদের কন্ট্রোল রুমে আপনাদের স্বাগতম...
ভ্রুকুটি করে বলল রায়ান,
-না, তা নিশ্চয়ই তুমি আশাও কর না। যাই হোক, যেভাবেই হোক আমরা ৫ জন সিকিউরিটির সম্পূর্ণ আসল আইডি জোগাড় করতে পেরেছি। কিংবা বলা যায় ৫ জনের চাকরি যোগাড় করতে পেরেছি। প্রতি মাসে ওদের সিকিউরিটি চেঞ্জ করা হয়। এই মাসে অন্যান্যদের সাথে আমাদের পাঁচজন, জেসন, হপার, এরিক, ইউসুফ, রজার যাবে।
-আমি আর তুমি তাহলে কি করব?
-ওয়েল, যেহেতু আমরা আসল কিছু পাচ্ছি না তাই আমাদের নকলই ব্যবহার করতে হবে। সিআইএ থেকে প্রতি সপ্তাহে বেস পরিদর্শনে যায় দুজন এক্সপার্ট। আমরা সেই পরিচয়েই যাব।
আঁতকে উঠল ফেলিক্স,
-কিন্তু আমি তো নিউক্লিয়ারের ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানি না! দুমিনিটে ধরা পরে যাব!
তাহলে ধরা যাতে না পর সেজন্য একটু আধটু পড়াশোনা কর। পরশু ইজরায়েল যাচ্ছে জেসন আর টীম। তার পরদিন ওরা বেসে চলে যাবে। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর আমরা যাব তেল আবিবে। সেখানে হোটেলে দুই এক্সপার্টের ব্যাবস্থা করে আমরা রওনা দেব।
জেসনের দিকে ফিরল রায়ান,
-তুমি প্রায় এক সপ্তাহ সময় পাচ্ছ। এ সময়ের মধ্যে যেভাবেই হোক কন্ট্রোল রুমের কাছাকাছি, রিজার্ভ গার্ড কোয়ার্টারের কাছাকাছি ডিউটি পার্মানেন্ট করবে তোমরা। আমরা পৌঁছানোর পর সংকেত দিলেই কাজে নেমে পড়বে। রিজার্ভ গার্ড থাকবে তাদের কোয়ার্টারে বন্দি, কেউ অ্যালার্ম টাচ করতে পারবে না। আর তার সবার আগেই কন্ট্রোলরুম দখল করে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই একটা মিসাইলও যাতে ফায়ার না হয়। বেস নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসার পরেই জর্ডান থেকে আমাদের ব্যাকআপ ফোর্স চলে আসবে। কোন প্রশ্ন?
-নো স্যার।
-তাহলে এখন বিদায়। গুড লাক টু অল।



সামনের ডেস্কে রাখা কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টগুলোর দিকে ইংগিত করল নুক বেস ডিরেক্টর। সামনে নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে সিকিউরিটি চীফ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটি চীফ। সিকিউরিটি চীফ প্রশ্ন করল,
-এগুলো আমাদেরকে দেখাচ্ছেন কেন স্যার?
-তোমাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে আমাদের বেসে একজন বিশ্বাসঘাতক আছে?
-জি স্যার। এবং আমাকে এই ব্যাপারে তদন্ত করে দেখতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা পুরো ফ্যাসিলিতি তন্নতন্ন করে খুঁজেও, সবাইকে জেরা করেও কিছু জানতে পারিনি।
-জানতে পারবেও না। কারণ বেড়ালকে মাছ পাহারা দিতে বলার মতো ভুলটা আমিই করেছিলাম।
-মানে স্যার?!?
থমকে গেল সিকিউরিটি চীফ। ডিরেক্টরের হাতে উদয় হয়েছে একটা লুগার। লুগারের লোলুপ দৃষ্টি তার দিকেই স্থির...
-বেইমানদের এখানে কোন স্থান নেই হাসিদা! তুমি জীবনের শেষ ভুলটা করে ফেলেছ আমার সাথে বেইমানি করে।
-কিন্তু...
কথা শেষ হল না চিফের। বুকে বুলেটের ধাক্কায় ছিটকে পিছনে গিয়ে পড়ল দেয়ালে।
যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে লুগারটা ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বলল ডিরেক্টর,
-তোমাকে সিকিউরিটি চীফের পোস্টটা দেওয়া হল এখন থেকে। গার্ডদের নতুন টীম আসার সময় হয়ে গেছে। তুমি গিয়ে পার্সোনালি ব্যাপারটা দেখ।
-ইয়েস স্যার।
মাথা ঝাঁকিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটি চীফ। পিছন থেকে ডেকে বলল ডিরেক্টর,
-দুজন লোককে পাঠিয়ে লাশটা সরিয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা কর।
নড করে বেরিয়ে এল নতুন সিকিউরিটি চীফ।

লাইনে দাঁড়িয়ে সবার উপর নজর বুলাল জেসন। নতুন আসা গার্ডদের আইডি চেক করা হচ্ছে। হঠাৎ উদয় হল নতুন এক লোক। সবাই এক নজর দেখেই স্যালুট দিল তাকে। লোকটাকে অদ্ভুত লাগলো জেসনের। মুখে এক বিদঘুটে মাস্ক পড়া, চেহারার প্রায় পুরোটাই ঢেকে রেখেছে। পাত্তা না দিয়ে সামনে বাড়ল জেসন। ওর আইডি চেক করছে। পিছনে একবার তাকাল। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে ওরা। আইডি এপ্রুভ করে কনায় অন্যদের সাথে দাঁড়াতে হল জেসনকে। সবার আইডি চেক হয়ে গেলে স্কয়ার ফর্মে দাঁর করানো হল ওদের। গিয়ার বিতরন করা হল। যার যার ডিউটি এবং অন্যান্য নিয়ম বলে দেওয়া হল। লাকিলি জেসন আর হপারের ডিউটি পড়ল কন্ট্রোল রুমের বাইরে। আর বাকি তিনজন ফ্যাসিলিটির বাহিরে। ওদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেল কাজটা। বাহিরেই রিজার্ভ গার্ড কোয়ার্টার। অ্যাকশন শুরু হলে মুহূর্তেই ওখানে পৌঁছে ব্যাবস্থা নিয়ে পারবে ওরা। ব্যাপারটা এতো সহজ হয়ে যাওয়ায় মনে খটকা লাগলেও তখনকার মতো পাত্তা দিল না জেসন। নিজেরদের ডিউটি করার পাশাপাশি অন্যান্য গার্ডের চাল-চলন, বিভিন্ন সুযোগসুবিধা জেনে নিতে লাগলো ওরা। এরই মধ্যে ওরা জানতে পারল পূর্ববর্তী সিকিউরিটি চীফের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে অকাল মৃত্যুর কথা। মনে তার জন্য কষ্ট হল অনেকের। বেচারা ওদেরকে তথ্য দিতে গিয়েই মরল। তবে রেগুলার গার্ডেদের এ ব্যাপারে খুশিই মনে হল। আগের চীফ নাকি ভয়ানক বদ ছিল, তার তুলনায় এখনকার চীফ অনেক ভাল।
ঠিক এক সপ্তাহ পর হাজির রায়ান আর ফেলিক্স। তেল আবিবে নেমে ট্যাক্সি করে হোটেলে পৌঁছল ওরা। আগেই জেনে নিয়েছে সিআইএ এক্সপার্টদের রুম নাম্বার। তাদের অপরদিকের রুমটাই নিয়েছে ওরা। ওরা আসার এক ঘণ্টা পরেই এসে পৌঁছল দুই এক্সপার্ট। পিক হোল দিয়ে ওদের রুমে ঢুকতে দেখে পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে এল রায়ান আর ফেলিক্স। লকপিক দিয়ে দরজা খুলে ঢুকল ওরা। শাওয়ারে একজন আর অপরজন ওদের দিকে পেছন ফিরে বসে ডকুমেন্টস দেখছে। নিঃশব্দে এগিয়ে গেল রায়ান। ঘাড়ে কসে এক বাড়ি দিতেই জ্ঞান হারিয়ে চেয়ার থেকে পড়ল পড়ুয়া। অপরজনকে টাওয়েল পেঁচানো অবস্থায় পিস্তলের মুখে বের করে নিয়ে এল রায়ান। দুজনকে নিজেদের রুমে নিয়ে এল ওরা। দুজনকে বেধে ফেলে আলাদা আলাদাভাবে জেরা করে বিভিন্ন ব্যাপারে জেনে নিল ওরা। সবচেয়ে স্বস্তিকর ব্যাপার হল ওরা দুজনেই নতুন। এর আগে আসেনি, আর কাউকে চিনেও না। এমনটাই আশা করেছিল রায়ান। জানা গেল এক ঘণ্টা পরেই ওদের নিতে গাড়ি চলে আসবে। তাই তৈরি হয়ে রইল ওরা। হোটেল বয় এসে পাশের ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে গাড়ির কথা বলে যাওয়ার দুমিনিট পরেই নেমে এল ওরা। ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ নেই। ড্রাইভার চোখ বেধে দিল ওদের। এরপর শুরু হল যাত্রা।
প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর থামল গাড়ি। চোখের বাঁধন খুলে দিতেই চোখ পিটপিট করে আল সইয়ে নিল ওরা। ওদের সার্চ করে কোন অস্র না পেয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল। ডিরেক্টরের রুমে প্রবেশ করল ওরা। ওদের দেখে তেমন কিছু না বলে ইশারায় অনুসরণ করতে বলল ডিরেক্টর। ল্যাভরেটরিতে নিয়ে এল ওদের ডিরেক্টর। বিজ্ঞানিদের সাথে যখন ওরা ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কথা বলছিল তখন টের পেল পিঠে সেটে আছে ডিরেক্টরের কড়া দৃষ্টি। তার সন্দেহের উদ্রেক না ঘটিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে গেল বিজ্ঞানিদের। প্রজেক্টের রুটিন চেক শেষ করে ডিরেক্টরের দিকে ফিরল ওরা। ডিরেক্টরের নজর তখন তার হাতের মিনি ট্যাবলেটের স্ক্রিনে। রায়ানের ডাকে ওদের দিকে তাকাল। বলল,
-কাজ শেষ? এবার?
-ডিফেন্স কন্ট্রোলের আপডেট এবং স্ট্যাটাস চেক করব।
মনে মনে খটকা লাগলো রায়ানের। ব্যাটা জানে রুটিন চেকের প্রতিটা ব্যাপার। তারপরেও জানতে চাইল কেন! ডিরেক্টর বলল,
-ও আচ্ছা! ঠিক আছে, চলুন।
তার পিছুপিছু কন্ট্রোল রুমে এসে ঢুকল। বাহিরে জেসনকে দেখে স্বস্তির পরশ টের পেল ওরা। হপারকে বাহিরের ওদের সাহায্য করতে পাঠিয়ে রয়ে গেছে জেসন। ওর দিকে না তাকানর ভান করে কন্ট্রোল রুমে ঢুকল ওরা। যন্ত্রপাতি সহ বিভিন্ন কন্ট্রোল রুটিন চেক শুরু করল ওরা। সফটওয়্যার আপডেটের নাম করে সবার অজান্তে কম্পিউটার এক্সপার্ট আনিসের তৈরি করে দেওয়া একটা ছোট সফটওয়ার ইন্সটল করে দিল রায়ান। সফটওয়্যারের মাধ্যমে বহুদুরে বসে থাকা আনিস এখন এই ফ্যাসিলিটির ডিফেন্স সিস্টেমের নিয়ন্ত্রন পেয়ে গেছে। ওদিকে হার্ডওয়ার চেক শেষ করেছে ফেলিক্স। কাজ শেষ করে দুজনে বের হবার জন্য ঘুরতেই লুগার হাতে দারান ডিরেক্টরের মুখোমুখি পরে গেল ওরা। অট্টহাসি হেসে বলল সে,
-টেকনোলজি কি অদ্ভুত এক জিনিস মিঃ যেই হন না কেন! মুহূর্তেই মধ্যে সব তথ্য হাতের মুঠোয় এসে যায়!
শ্রাগ করল রায়ান,
-তো?
-সাহস আছে আপনার। বুঝতে পেরেছেন ধরা খেয়ে গেছেন তারপরও ঘাবড়াচ্ছেন না? হা হা!
-মানে?
-মানে খুব সহজ! ফ্যাসিলিটিতে এসে এক্সপার্টরা সবার প্রথমে মিসাইল রুমে যেয়ে মিসাইলের সংখা গুনে দেখে। আমাদের প্রতি তাদের বিশ্বাসের দৌড় আমরা ওখানেই টের পাই। আপনাদের ঐ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখেই সিআইএ কে আপনাদের ফাইল পাঠাতে বলি। মুহূর্তেই মধ্যে তারা পাঠিয়ে দেয়।
হাতের ট্যাবলেট নাড়াল সে...
-আপনারা প্রথমেই ধরা খেয়ে গেছেন। হা হা হা...
নিঃশব্দে পিছনের দরজা খুলে ঢুকল জেসন। কিন্তু ওর উপস্থিতি টের পেয়ে গেল লোকটা। ঝত করে দূরে সরে গেল।
-কি ব্যাপার গার্ড? আম তো কাউকে ডাকিনি এখনও!
-না মানে এদের অনেকক্ষণ হওয়ার পরেও বের হতে না দেখে চেক করতে আসলাম। ভাল করেছ। যাও, এদের হাত বেধে ফেল।
-জি স্যার।
লোকটার পাশ কাটিয়ে সামনে আগানোর ভান করল জেসন। শেষমুহূর্তে ছোবল মারল ওর ডান হাত। লুগারের দৃষ্টি অন্নদিকে সরিয়ে দিয়েই ডিরেক্টরের নাক সই করে ঘুসি মারল। কিন্তু সাপের মতো দ্রুত ঐ লোক। ঝুঁকে ঘুসিটা এড়িয়ে গেল। এরই ফাঁকে মুক্ত হাতে জেসনের গলায় খচা মেরে বসলো। খোঁচাটা হজম করতে দম বন্ধ অবস্থায় পিছিয়ে গেল জেসন। জেসনকে অ্যাকশনে যেতে দেখেই দুইপা এগিয়েছিল রায়ান-ফেলিক্স। কিন্তু ঝট করে আবার লুগার তুলল ডিরেক্টর। বলল,
-বাহ! আরেকজন পাওয়া গেল! তোমার ব্যাবস্থাই করি আগে।
জেসনের দিকে তাক করল লুগার। ট্রিগারে আগুল চেপে বসছে। যদিও যথেষ্ট দূরে আছে তবুও আগাল রায়ান। বিনাযুদ্ধে জেসনকে মরতে দিতে পারেনা। ফেলিক্স অনুসরন করল ওকে। কিন্তু হঠাৎ ওরা টের পেল পৌঁছানোর আগেই যা হওয়ার হয়ে যাবে। লুগারের নলে দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে জেসনের। বদ্ধ ঘরে বিকট আওয়াজের বুলেটের আওয়াজ যেন বোমা ফাটাল!

প্রথমে মনে হল ভুল দেখছে! কিন্তু একি! ধীরে ধীরে ঢলে পরে গেল ডিরেক্টর! বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে পেছনে তাকাতে সিকিউরিটি চীফকে দেখতে পেল জেসন। দেখে দু’পা পিছিয়ে গেল! মনে হল ভূত দেখেছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও যে এতো বড় একটা চমক পাবে তা ওর কল্পনাতেও আসেনি। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল,
-শায়খ!
মুচকি হাসি দেখা গেল শায়খ রায়ানের মুখে। সৌরভের মুখেও সেই হাসি একবার ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল! আবার অজান্তেই জেসন বলে উঠল,
-এ কিভাবে সম্ভব!?
রায়ান জবাব দিল,
-সেসব কথা পরে জানতে পারবে। আগে কাজ শেষ কর।
রায়ানের কথায় সম্বিত ফিরে পেলেও মুখ থেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার ছাপ পুরোপুরি দূর করতে পারল না জেসন।
পকেট থেকে দুটো পিস্তল বের করে ছুঁড়ে দিল শায়খ। লুফে নিল রায়ান। একটা বাড়িয়ে ধরল ফেলিক্সের দিকে। দ্রুত কন্ট্রোল রুমের অপারেটরদের হাত-পা বেধে রেখে দেওয়া হল। নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যাকআপ -কে আসার সংকেত দিয়ে বেরিয়ে এল ওরা। দ্রুত চারজনে মিলে অন্যান্য গার্ডদের বন্দি করল। সিকিউরিটি চীফ সাথে থাকায় ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে গেল। রিজার্ভ গার্ডদের কোয়ার্টার থেকে সব অস্র সরিয়ে সেখানে বাকি গার্ডদের ঢুকিয়ে বন্দি করা হল। যথারীতি তাদের পাহারায় থাকল হপার, এরিক, ইউসুফ, রজার। প্রধান একশনে থাকতে না পারায় কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হল ওরা, তবে দায়িত্ব পালনে ঢিল দিল না। বিজ্ঞানীদের নিয়ে কন্ট্রোলরুমে ফিরল ওরা।
হঠাৎ একটা গানফায়ারের আওয়াজ শনা গেল। জেসন জানতে চাইল,
-কোথা থেকে আসল?
কথা না বলে ইয়ারপিসে বলল রায়ান,
-রিপোর্ট।
অপরপ্রান্ত থেকে হপার জবাব দিল,
-রজার ডাউন স্যার। দক্ষিনের টাওয়ারে স্নাইপার আছে। আমরা সরে আসতে বাধ্য হয়েছি। রিজার্ভ থেকে গার্ড বেরিয়ে পড়েছে।
শায়খের দিকে চাইল রায়ান,
-এরকম কোন কথা আমার জানাছিল না। হতেই পারে না।।
-হচ্ছে, ভুতে গুলি করে রজারকে মারেনি।
ইয়ারপিসে বলে উঠল হপার,
-স্যার আমরা সামনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকেছি।
-পিছনের দিকে পোস্ট নাও তোমরা। নুক ডিপো আর ল্যাব আমরা কাভার দেব।
-রজার দ্যাট।
কন্ট্রোলের সামনে থেকে বলল জেসন,
-স্যার একটা ব্যাড নিউজ আছে। রিজার্ভ গার্ডরা ওয়েপন্স ডিপো থেকে অস্ত্র নিয়ে নিয়েছে। ভেতরেও ঢুকে পড়েছে।
-দৌড়াও!
ল্যাবের দিকে ছুটল রায়ান। ওর পেছনে সবাই। বাঁক ঘুরতেই পাঁচজন গার্ড পড়ল সামনে। ওকে দেখেই গুলি করল। ঝাপ দিয়ে সামনের এক খলা দরজায় পড়ল রায়ান। অন্যরা বাঁকের ওপাশেই রয়ে গেছে। গার্ডরা টের পায়নি ওপাশে কেউ আছে। সোজা রায়ানের দিকে এগোল। প্রথমজনকে গুলি করে ফেলল রায়ান। বাকিদেরকে পেছন থেকে ব্রাশ ফায়ার করে মারল অন্যরা। বেরিয়ে আবার ছুটল রায়ান। এইবার সতর্ক আছে। সেজন্যই পরের অ্যামবুশের হাত থেকে বেঁচে গেল। একটা গ্রেনেড পিন খুলে ছুঁড়ে দিল অ্যামবুশ লক্ষ করে। সেটা ফাটতেই আবার ছুটল। তবে ওদের জন্য রয়েছে আরও চমক। গার্ডরা ওদের আগেই ল্যাবে পৌঁছে গেছে। ল্যাবে যাওয়ার পথে দুটো আলমারি ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে রেখে গেছে। রাস্তা বন্ধ!
শায়খ বলল,
-ম্যানুয়ালি মিসাইল একটিভেট করতে ২০ মিনিট লাগবে, খুলে নিতে লাগবে ৩০-৪০ মিনিটের মতো।
ফেলিক্স জবাব দিল,
-ওরা প্রথমে আমাদের দুভাগ করে নিয়েছে। এখন শুধু শিকারের অপেক্ষা!
হপার কন্টাক্ট করল,
-স্যার আরেক ব্যাড নিউজ। ওদের তিনজন বাজুকা নিয়ে ছাদে অপেক্ষা করছে। ব্যাকআপ আসতে পারবে না। সবাই মরবে!
-শিট! জেসন, শায়খ, কন্ট্রোলরুমে আছে রেডিও। ওদের কন্টাক্ট করে দূরে থাকতে বল।
-ইয়েস স্যার।
ঘুরে ছুটল ওরা।
ওরা যেতেই ওপরের এয়ার শ্যাফট দেখাল রায়ান ফেলিক্সকে। সময় নষ্ট না করে বসে পড়ল ফেলিক্স। ওর কাঁধে ভর দিয়ে লাফ দিয়ে শ্যাফটের ঢাকনার খাজে হাত ঢুকিয়ে ঝুলে পড়ল রায়ান। ওর শরীরের ওজনে খুলে চলে এল ঢাকনা। এবার রায়ান প্রথমে উঠে গেল। এরপর টেনে তুলল ফেলিক্সকে। নিঃশব্দে দুজনে এগোল ল্যাবের দিকে। ল্যাবের উপরে পৌঁছে মিনি টুলকিট ব্যবহার করে স্ক্রু খুলে ভেন্টের ঢাকনা খুলে নিল ওরা। সাবধানে উঁকি দিয়ে দেখল ল্যাবের দরজার ভেতরে দুজন গার্ড পজিশন নিয়ে বসে আছে। বিড়ালের মতো নিঃশব্দে নামল রায়ান। জ্যাকেটের হাতার ভেতর লুকিয়ে রাখা স্টিলেটো একটা ঝাঁকি দিতেই দুহাতে উদয় হল। মৃদু শিষ দিল রায়ান। ঝট করে পেছনে ফিরে ওকে দেখে জমে গেল গার্ড দুজন। যত্নের সাথে ছুঁড়ে মারল দুটো স্টিলেটো ছুঁড়ল। একজনের হৃদপিণ্ড ফুটো করে দিল অপরজনের গলা দিয়ে ঢুকে ঘাড় দিলে বের হল স্টিলেটোর ফলা।
গার্ডদের পরে যাওয়ার আওয়াজে সাবধানে ঘরে উঁকি দিল আরেক গার্ড। তাঁর মাথায় তৃতীয় নয়ন তৈরি করল ফেলিক্সের বুলেট। দরজার বাহিরে হুহুস্থুল শুরু হল। অটোম্যাটিক গানের গুলি উড়তে লাগলো ঘরে। ওদের সাথে কোন গ্রেনেড নেই। ল্যাবের মধ্যে বোমা ফাটানর সাহসও করতে পারছে না গার্ডরা। বিরতি দিয়ে গুলি করছে রায়ান ও ফেলিক্স। এরই মধ্যে আরও তিনজনকে মারতে পেরেছে। তবে দরজার ওপাশে এখনও কমপক্ষে দশজন গার্ড আছে। শেষ বুলেটটা বেরিয়ে যাওয়ায় খালি চেম্বারে বাড়ি খেল ফেলিক্সের পিস্তলের হ্যামার। রায়ানকে জিগ্যেস করল,
-তোমার কয়টা আছে?
এক মুহূর্ত ওর দিকে চাইল রায়ান। বলল,
-এনাফ।
ঝট করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গুলি করল রায়ান। গুলিটা সোজা দরজায় মরে পরে থাকা এক গার্ডের গলায় ঝোলানো গ্রেনেডে লাগলো। শক ওয়েভে ছিটকে ঘরের মাঝে এসে পড়ল ওরা। ব্যাথায় মুখ বিকৃত করে উঠতে উঠতে বলল ফেলিক্স,
-আসলেই এনাফ।
হুরমুর করে ঘরে ঢুকল ৩ গার্ড। রায়ানের পিস্তলও খালি। ব্রাশ ফায়ারের শব্দে চোখ বন্ধ করল ফেলিক্স। পর মুহূর্তে টের পেল আওয়াজ এসেছে পিছন থেকে। পিছনে তাকিয়ে ভেন্টিলেটর শ্যাফট থেকে জেসনকে সাবমেশিনসহ ঝুলে থাকতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। রায়ানকে জিগ্যেস করল,
-ঐ তিনজন আসল কোত্থেকে?
-করিডোরের অন্য মাথায় ছিল বোধহয়। গ্রেনেড ফাটার আওয়াজে এসেছে।
শ্যাফট থেকে নেমে এল শায়খ আর জেসন। ওদের দুজনকে পাহারায় থাকতে বলে বেরিয়ে এল ওরা। এর আগে দরজার কাছে পরে থাকা দুই গার্ডের কাছ থেকে সাবমেশিন সংগ্রহ করে নিয়েছে। ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ওরা। তিন কোনায় তিন বাজুকাধারি বসে সিরিঘর থেকে গুলি করেই দুজনের খুলি উড়িয়ে দিল ওরা। তৃতীয়জন বিপদ টের পেয়ে সিঁড়িঘরের দিকে তাক করে বাজুকা ছুরেছে। ঝট করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল ফেলিক্স, আর সামনের পানির ট্যাঙ্কির আড়ালে ঝাপ দিল রায়ান। বাজুকা রিলোড করতে ব্যাস্ত বাজুকাধারি। সিঁড়ি বেয়ে আবার উঠে এসেছে ফেলিক্স। ওর গুলি বাজুকাধারির প্রায় পেট থেকে গলা পর্যন্ত সেলাই করে দিল। আড়াল থেকে বের হতে যেতেই কাঁধে গুলি খেল রায়ান। হাত থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ল সাবমেশিন। ফেলিক্স আবার নিচে নেমে গেছে, স্নাইপারের নাগালের বাহিরে। পাশেই এক বাজুকাধারিড় লাশ। দ্বিধা না করে তুলে নিল রায়ান। দক্ষিনের টাওয়ার সই করে বাজুকা ছেড়ে দিল,
-আদিওস...
মুহূর্ত পরে বিস্ফোরিত হল টাওয়ার।
ইয়ারপিসে চেঁচাল রায়ান,
-কি অবস্থা হপার?
-কাজ শেষ স্যার। এখানে ২০ জনকে শুইয়েছি আমরা।
-আমরা আমরা ২১ জনকে। শায়খ, ঠিক আছে?
-ঠিক! আর কারও এন্ট্রি নেই এখানে।
রেডিওতে আবার কন্টাক্ট করা হল ব্যাকআপ টিমের সাথে।
কিছুক্ষনের মধ্যে তিনটে কপটারে হাজির হল ব্যাকআপ টীম, তাদের সাথে আনিস আহমেদও। তাদের পিছুপিছু ইজরায়েলের এয়ারফোর্সের দুটো রিপার ড্রোন আসছিল। কিন্তু অটোম্যাটিক ডিফেন্স সিস্টেম ব্যাবহার করে ওগুলোকে ফেলে দিল আনিস। ২০ বিজ্ঞানিকে সুস্থ অবস্থায় পেয়ে সবাই খুশি হল। তাদের নিয়ে একটা কপটার চলে গেল। এবার ধীরে ধীরে সাবধানে নিউক্লিয়ার মিসাইলগুলো সরানো হল গোপন নিরাপদ জায়গায়। তাদের পাহারায় রইল সাতটি এফ ৩৬ বিমান। প্রায় এক সপ্তাহ পর কাজ শেষ হল ওদের। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার শত্রুরা হামলা করে। কিন্তু প্রতিবারই তাদের নিজস্ব ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে তাদের ধ্বংস করে দিল আনিস। সব কাজ শেষে পুরো ফ্যাসিলিটিতে বম্ব ফিট করে হেলিকপ্টারে চরল রায়ান, আনিস, জেসন, ফেলিক্স, শায়খ। হেলিকপ্টার কিছুদূরে আসার পর পিছনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু হল।

বর্ডার পেড়িয়ে জর্ডানে প্রবেশ করে হাফ ছাড়ল সবাই! সবার প্রথমে মুখ খুলল জেসন,
-এবার কি তাহলে আমাদের সব বলা যায়?
বলতে শুরু করল শায়খ,
-আমাদের এনালাইজাররা যে প্যাটার্নের আবিস্কারের কথা বলেছে সেই প্যাটার্ন এতদিন পরে আবিস্কার হয়নি। সেই পাঁচবছর আগেই আবিস্কার করেছে। তখন ব্যাপারটা নিয়ে আলচনা করতে গিয়ে আমি, ভাইয়া দু’জনেই একমত হই যে আমাদের কাউকে পাঠানো উচিত ঐ প্রজেক্তে, ছদ্ম পরিচয়ে। যাতে সুযোগ পেলেই ওদের প্ল্যান বানচাল করা যায়। কিন্তু আমি যাব না ভাইয়া যাবে সে নিয়ে আমাদের মদ্ধে তর্ক লেগে যায়। এমন সময় আমি জানতে পারি ডন মিয়ানের প্রতিশোধের প্ল্যানের কথা। তখন ওর প্ল্যানটা আমার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ হয়ে দেখা দেয়। আমি বুঝতে পারি ভাইয়াকেও এ ব্যাপারে জানানো ঠিক হবে না। ওদিকে ডন মিয়ানের বাড়ির কাছাকাছি আমি ইচ্ছে করে ওর কিছু লোকের সামনে হাজির হই। ওদের প্ল্যান ছিল আমাকে মেরে আমার জায়গায় ওদের যোগাড় করা আমার ডাবলকে দিয়ে কাজ চালাবে। তাই আমাকে দেখা মাত্র খুন করার জন্য ব্যাস্ত হয়। ওদের চোখের সামনেই আমি পাহার থেকে গাড়িসহ পরে যাই, গাড়িতে ওরা আমার পুরে যাওয়া বীভৎস লাশ পায়, আমাকে মৃত ধরে নেয়। কিভাবে কি হয়েছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝাতে হবে না এ ব্যাপারে?
জবাবের অপেক্ষা না করে বলে গেল শায়খ,
পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করি। আমাকে দেখে তোমার চেয়ে কম চমকায়নি ভাইয়া। শেষে দুজনে মিলে সব খুঁটিনাটি প্ল্যান, আমার কাভার এসব ঠিক করে দু’মাস পর আমি মাঠে নামি নতুন পরিচয়ে।
জেসনের মনে পড়ল নকল শায়খের মৃত্যুর পর রায়ানের দু’মাস গায়েব থাকার কথা। বলতে লাগলো জেসন,
-সাধারন গার্ড হয়ে ঢুকলাম ঐ নিউক্লিয়ার ডেভেলপমেন্ট বেসে। কাজ দেখিয়ে অল্প কয়েকদিনেই অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটি চীফ হয়ে যাই। এখনকার মতো ঘনঘন গার্ড পাল্টানো হত না তখন। তাই আমার সুবিধা হয়েছিলও। সমস্যা ছিল একটাই। কিভাবে ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করব! শেষে পেলাম এক আর্মি রেঞ্জারের মেজর। কিন্তু তার সাথেই বা কিভাবে যোগাযোগ করব? সিআইএ যেমন ইজরায়েলের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি করছিল, আমিও তেমনি ব্যবহার করলাম সিকিউরিটি চীফকে। সব সময় ঐ ব্যাটার ট্রেস রেখে দিতাম। তাই যখন অপারেশনের সময় ঘনিয়ে এল তখন ঐ ব্যাটাকে ফাসিয়ে দিতে আমার একটুও সমস্যা হয়নি। এরপরের ঘটনা তো জানই। আমি ঘরের ছেলে কাজ সেরে ঘরেই ফিরে যাচ্ছি।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল রায়ান,
-তোমাদের সবার কাছে ব্যাপারটা লুকানর জন্য আমি দুঃখিত। হয়ত তোমাদেরকে এ ব্যাপারে জানানই উচিত ছিল...
সবার পক্ষ হতে বলল জেসন,
-আপনি যখন ঠিক করেছেন স্যার, তখন নিশ্চয়ই সব দিক ভেবেই ঠিক করেছেন। আমাদের এতে কষ্ট নেই আর। তাছাড়া নিজের ভাইকে হত্যা করার চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে আপনার কাছে? আপনি তো তখন আমার মতই কিছুই জানতেন না...
নিরবতা নেমে এল কপটারের কেবিনে। রোটোরের গুঞ্জন ছাড়া আর সব নিরব হয়ে গেল।


চোখ খুলে সামনে ঝাপসা এক পর্দা ভেসে উঠল। চোখ বন্ধ করে আবার খুলতেই কিছুটা পরিস্কার হল দৃষ্টি। এভাবে বেশ কয়েকবার করার পর দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে এল। নরম ধবধবে সাদা বিছানায় উঠে বসলো রিনিস। দরজায় নক হল,
-কাম ইন।
ব্রেক ফাস্ট ট্রলি নিয়ে ঢুকল রায়ান।
-এজেন্ট রায়ান অ্যাট ইওর সার্ভিস ম্যাম।
মুচকি হাসল রিনিস। প্রশ্ন করল,
-তা কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমাকে?
-আমার বাড়ি, মালিবু। আমার খুব প্রিয় একটা জায়গায়, আমার খুব প্রিয় মানুষদের জন্য। তারা ছাড়া আর কারও প্রবেশ নিষেধ।
-তাই?
-হুম......অনেকাংশে।
মৃদু হাসির বাদ্য বাজল যেন ঘরে। উঠে সামনের সচ্ছ কাচের দেয়ালের কাছে এসে দাঁড়ালো রিনিস। পাহাড়ের উপর বাড়িটা। সামনেই দিগন্ত বিস্তৃত সাগর। সত্যিই মনোরম এক দৃশ্য। পাশে দাঁড়ানো রায়ানের হাত ধরে জানতে চাইল রিনিস,
-আচ্ছা এজেন্ট রায়ান সাহেব, আপনি তো একজন স্বাধীনচেতা, স্বনির্ভর এক মানুষ। তাহলে নিজেকে এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন কেন?
-জানতেই হবে?
-হুম।
-এখনই জানতে হবে?
-হুম।
একহাতে রিনিসের কাঁধ জড়িয়ে ধরল রায়ান,
-নাহ! থাক, কিছু কথা না বলা থাকাই ভাল।
সৌরভের কাঁধে মাথা রাখল রিনিস,
-ঠিক আছে, এজেন্ট রায়ান সাহেবের যা আজ্ঞা...
মুচকি হাসল রায়ান...
নতুন দিনের নতুন সূর্য যেন ওদের দেখেই হেসে উঠল পুবাকাশে...
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×