somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাধা ও হরিন

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ একটু এলোমেলো গল্প করি। নিজের সাথে বলা কিছু কথা যার কোন শুরু নাই, কোন অর্থবোধক বক্তব্য নাই তামন কিছু। মাঝে মাঝে একটু একটু কেমন কেমন লাগছে। এই পোষ্টটা করে দিলে হুট করে ম্যেইন পেজ এ চলে যায়। হয়ত এটা বন্ধ করা যায় কিন্তু কিভাবে করে তা মাই জানিনা। কেউ জানলে আমাকে একটু বলবেন দয়া করে

---

সত্যি বড্ড অসুবিধায় আছি আমি। এমন একটা অবস্থা যে সহ্য ও করা যাচ্ছে না আবার মুক্তি ও মিলছে না। আমি যখন প্রথম চাকরি পেলাম তার কয়েক দিন পরের কথা। আমি চায়ের দোকান এ বসে চা খাচ্ছি এমন সময় আমার এলাকার এক ছোট ভাই এসে বসল পাশে। গল্প গুজোব এর এক পর্যায় আমি ওকে বললাম, ভাইরে জীবন তো কেমন একঘেয়ে লাগতেছে। বললাম যে চাকরি তো স্খুল জীবন এর থেকেও খারাপ। পুরোপুরি ঘড়ির কাটার সাথে আমিও যেন রোবট হয়ে যাচ্ছি। নাস্তা করি, অফিস যাই, লাঞ্চ করি, বিকেল এ বাড়ি ফিরি, তারপর আবার বের হই, রাত ১০ টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আবার বাড়ি ফিরে খেয়ে ঘুম। আমার অই রুটিন সহ্য হচ্ছিল না। খুব কষ্ট হচ্ছিল, কষ্টটা হলো নিজেকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট। মনে হচ্ছিল সব কিছু আছে শুধু আমি যেন নাই।

তারপর মনে পড়লো যে হায় হায় এতো কেবল শুরু, এখনো তো ৩০ বছর যাবত এই একই রুটিন থাকবে। নিজের এই কষ্টের মাঝে আমার হটাৎ মনে হলো আমার বাবার কথা। আমি যেন দেখতে পেলাম আমার বাবা কেমন করে তার চাকরি জীবন কাটিয়েছেন। কি কষ্ট ই না তার হয়েছে তার। আমাদের এই টেনেটুনে চলা সংসারে তার পর ও আমার বাবা অনেক রাত এ বাড়ি ফিরে আমাদের সাথে ক্যারাম বোর্ড খেলতো।
একবার বাবাকে ব্যডমিন্টন এর রেক্যেট কিনে দেয়ার জন্য বললাম। বাবা রাতে বাড়ি ফিরে বলতো ভুলে গেছি, এখন তো বুঝি হয়তো মাসের শেষ ছিল তখন , টাকা ছিল না তার হাতে। কারন এখন মাঝে মাঝে আমিও মাসের শেষে অনেক কিছু ভুলে যাই।কি করে যে মানুষটা হাসতো তখন ভাবলে এখনো আমার অবাক লাগে।

খেলনার কথা বলতে বলতে একটা ঘটনা মনে পড়লো। আমি তখন ছোট, মনে হয় ক্লাস ফাইভ এ পড়ি। দাদি বাড়ি গেলাম পরীক্ষার শেষে। আমার মা আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে একটা ব্যাংক কিনে দিল। আমারা পয়সা জমাতাম। দু ভাই মিলে কয়েক দিন পর থেকেই দোকানে দোকেনে ঘুরতাম কি কিনবো তার লিস্ট করতাম। এক দোকান এ আমরা একটা খেলনা রোবট দেখলাম, আমাদের দুজন এর ই খুব পছন্দ হলো আমরা ঠিক করলাম ওটাই নিতে হবে। ছুটি শেষ হবার পথে, আমরা ঢাকা আসার আগের দিন এর ঘটনা, আমরা দু ভাই ব্যাংক ভেঙ্গে টাকা নিয়ে বার হলাম। আমাদের পকেট এ তখন ৪৫ টাকা , আমাদের এক মাসের জমানো টাকা। খুব খুশি লাগছিলো সেদিন, বার বার পকেট এ হাত দিয়ে দেখছিলাম টাকাটা ঠিক আছে কি না। দোকান এ গিয়ে আমরা খেলনা টা বের করতে বললাম, উনি বের করে দিলেন, খেলনাটা যখন খুব কাছে তখন হাত দেবার আগে জানতে চাইলাম দাম কত? দোকানদার বলল ৮০০ টাকা। আমরা একবার ও দেখে যাবার সময় ভাবিনি এত দাম হবে। এখনো মনে হয় কি এক ভীষণ রকম কষ্ট লেগেছিলো মেপে যদি বলা যেত তবে অনেক হত । ছোট ভাই এর হাত ধরে তখনই বের হয়ে এসেছিলাম দোকান থেকে, খুবই লজ্জা পায়েছিলাম, সারা মাস ধরে নিজেদের এত আগ্রহ নিয়ে টাকা জমানোকে কেন যেন খুব অপ্রতুল মনে হচ্ছিল। একবার এর জন্য ও আমি পেছন ঘুরে তাকাইনি, পাছে দোকান্দার আবার ডাক দেয়। এর পর আমি আর কোন্ দিন কোন কিছু কিনতে এতটা আগ্রহ অনুভব করিনি। নিজের সীমানা চিনেছিলাম সাদিন। ছোট টা কিছুক্ষন গাই-গুই করল তার পর আবার ভুলে গেল। আমরা পরে সারা দিন নদীর ধারে ঘুরলাম, মার্বেল কিনলাম, আইস্ক্রীম খেলাম তার পর একটা টেনিসবল কিনে বাড়ি ফিরলাম।

যে কারনে এই গল্প টা আমি ভুলতে পারিনা তা হলো আমার এখনকার অবস্থা কিন্তু সেই ছোট বেলার চেয়ে খুব একটা অন্যরকম নাই। অনেকটা একি রকম আছে। আজো আমাকে বহুবার লজ্জা পেতে হয়। নিজের ব্যার্থতাকে নিজেই এখন সান্তনা দেই। কি অদ্ভুত ভাবে নিজেই নিজেকে ফাকি দিয়ে , লুকিয়ে লুকিয়ে বেচে থাকি, আনেক কিছু জোর করে পাশ কাটিয়ে যাই। প্রতিদিন একটু একটু করে বাচি নাকি প্রতিদিন একটু একটু করে মরি নিজেই জানিনা।

এমন জীবন এর নাম কি জানিনা, শুধু জানি মাঝে মাঝে মনে হয় আর যুদ্ধ করবোনা। ডুবে যাওয়ে মানুষের মতো এত হাচড় প্যাচড় করে শুধুমাত্র নাকটা উচু করে বেচে থাকতে আর মন চায় না। মনে হয় দেই না হাল ছেড়ে, কি হবে, আর মাত্র ১ ইঞ্ছি পানিতে ডুববে, কিন্তু এই ১ ইঞ্ছি পানির উপরে রেখে কোন মতে বেচে থেকে তারপর সারা জীবন এই গাধার খাটুনি তো খাটতে হবে না। আমাদের এই নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন এর বোঝাটা বুঝি বেশ ভারি আর তাই এটা বহন করতে হলে আমাকে গাধার জীবন ই বেছে নিতে হয়। আমি নিয়েছি ও তাই। আমি জানি আমার বাবা র মত আমাকেও বাকিটা জীবন এই চরম ভাবে মধ্যবিত্ত জীবনটাকে বয়ে নিয়ে বেরাতে হবে। বিশ্বাস করো আমার কোন আপত্তিও নেই এতে, কারন আমি জানি এটা আমার নিয়তি। আমি নিজেকে সেভাবেই তৈরী করেছি, আমার বাইরের সব চালচলন আচার আচরন তাই গাধার মতই হয়ে গেছে। চরম ভারবাহী একটা জন্তু।

ঝামেলা হয় কেবল মনের কাছে এসে। মন কে যতই বোঝাই যে, আমি একটা গাধা , আমি প্রজাপতির সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে পারবোনা, পারবোনা গাছের ছায়ায় বসে পুকুরের সাথে গল্প করতে, পারবনা আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা স্বপ্নের টুকরো গুলোকে মাকড়সার জালের মতো বেধে ফেলতে। মন শোনে না। হরিন এর মত ছট ফট করতে থাকে, কত কি যে করতে চায় তা তো আমিও বলতে পারবো না।


তাই আমার মুক্তি নাই।
বন্ধুরা কেউ প্রশ্ন করলে বলি ।

"হ্যা ভাই খুব ভালো আছি,"
"গাধা শরীর এর ভিতর হরিন এর মন নিয়ে খুবই সুখে আছি"

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×