somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপাধি

০৫ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় হঠাৎ করে আমার নাদুস-নুদুস শরীরটা কোনও রকম বিপদ সংকেত ছাড়াই চিকন আলীকে অনুসরণ করা শুরু করলো ৷ পরিবারে বিষয়টা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেল ৷ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন নানি ৷ তার পরামর্শে মা-বাবা দুইজন মিলে উত্তরবঙ্গের ডাক্তারদের শান্তি হারাম করা শুরু করলেন ৷ কোনও প্রকার ফলাফল না পাওয়ার প্রেক্ষিতে তারা ঢাকাতে হানা দিলেন ৷ সকল ডাক্তারের একই কথা,কোনও সমস্যা হয়নি ৷ নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই স্বাস্থ্য ঠিক হয়ে যাবে ৷ ডাক্তারদের পরামর্শে আমার ঘাড়ে পুষ্টির পাহাড় চাপিয়ে দেয়া হলো ৷ কিন্তু শরীরটা চিকন আলীকেই আইডল ভেবে বসে থাকলো ৷ আমার এই উচ্চমানের স্বাস্থ্যহীনতার কারণে গ্রামের সবাই মিলে আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে দিল ৷ যেন তেন কোনও মন্ত্রী নয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রী ৷ কত বছর এই উপাধি ছিল মনে নেই ৷ তবে এখনও একটা উপাধি গ্রামের মুরুব্বিদের মুখে টিকে আছে ৷ "গুটু" ৷ আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় যার অর্থ বেঁটে ৷ আমার এই ৫ ফিট ১১ইঞ্চি দেহটার সাথে এরকম একটা উপাধি কীভাবে যোগ হলো বুঝতে পারলাম না ৷ রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করলাম ৷ জানতে পারলাম,আমার দাদার নাকি এই উপাধি ছিল ৷ কিন্তু দাদাও তো যথেষ্ট লম্বা ছিলেন ৷ তাহলে তাকে কেন গুটু বলা হতো?প্রশ্নটা মনের মাঝেই রেখে দিয়েছিলাম ৷ উত্তর খুঁজতে গিয়ে যদি তার দাদার ইতিহাস চলে আসে তাহলে ব্যাপারটা ভয়ানক হয়ে যাবে ৷ ক্রীকেট খেলার সময় ব্যাটিং-এ নিয়মিত লিটন দাসের মতো পারফর্মেন্স করলেও ফিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে আমি দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলাম ৷ উইকেট কিপার হিসেবে এলাকায় মোটামুটি নাম ডাক ছিলো ৷ বন্ধুরাতো সাঙ্গাকারা বলে ডাকতো ৷ বিষয়টা মাঝে মাঝে আমাকে বেলুন মতো ফোলাতো ৷ কিন্তু আমি বুঝতে পারি নাই যে আমার ক্যারিয়ারে আরেকটা উপাধি যোগ হতে যাচ্ছে ৷ সাঙ্গাকারা নামটাকে সংক্ষেপ করে সবাই সাঙ্গা ডাকা শুরু করলো এবং পরিশেষে বিবর্তনের ধারায় সেটা হয়ে গেলো "ছ্যাঙ্গা" ( শুয়োপোকা ) ৷ হাইস্কুল লাইফের পুরোটা সময় এই কীটের নামটা আমার সাথে জড়িয়ে ছিল ৷ ফলাফল স্বরুপ,রাগে দুঃখে ক্রীকেট থেকে অবসর নিলাম ৷ কলেজ লাইফে প্রিয় ফিজিক্স স্যার পঙ্কজ সাহা স্যার একটা উপাধি দিয়েছিলেন ৷ কোনও একদিন ক্লাশে বাঁদড়ামি করার সময় স্যার দেখে ফেলেন ৷ দাঁড় করিয়ে তার চলমান লেকচার থেকে একটা প্রশ্ন করলেন ৷ প্রশ্ন শুনে হা করে স্যারের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিচ্ছু করার ছিল না ৷ স্যার অবশ্য আমাকে কিছু বলেননি ৷ শুধু গোবর গনেশ বলে বসতে বলেছিলেন ৷ বন্ধুরা যতটুকু না এই নামে সম্বোধন করতো তার চেয়েও কয়েক গুণে বেশী সম্বোধন করতো বান্ধবীরা ৷ কলেজের ঐ শেষ বছরটাই এই উপাধির স্থায়িত্ব ছিল ৷ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনও উপাধি পাইনি ৷ নতুন উপাধি পেলাম বিবাহিত জীবনে ৷ যদিও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এবং বিবাহিত জীবন প্রায় একসাথেই শুরু হয়েছে ৷ তবে উপাধিটা পেয়েছি পড়ালেখার জগৎ ত্যাগ করার পর ৷ একদিন এশার নামাজ পড়ে বাসায় এসে দেখি মালি চাচা বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত ৷ পরেরদিন বীজ লাগাবেন ৷ আমার ছোটবেলা থেকেই কোদাল দিয়ে মাটি কোপাতে খুব ভালো লাগে ৷ লেগে গেলাম তার সাথে কোপাকুপিতে ৷ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে কাজ করলাম ৷ অবশেষে রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই বউ ধাক্কায়া তুলে দিল খাবার খাওয়ার জন্য ৷ খাওয়া-দাওয়া না করে এতক্ষণ মাটি কোপাকুপি করায় সে চরম লেভেলের ক্ষেপছে ৷ কিন্তু পরক্ষণেই চুপ হয়ে গেল ৷ কাছে এসে আমার শরীর শুঁকে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো ৷ আমি কিছু বুঝলাম না ৷ দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড চুপ থেকে হুকুম ছাড়লো গোসল করার জন্য ৷ আমি অসময়ে গোসলের হুকুম দেওয়ার কারণ জানতে চাইলাম ৷ সে জানালো,আমার শরীর থেকে নাকি মশার কয়েলের গন্ধ বের হচ্ছে ৷ এরপর থেকে সে যতবারই আমার শরীর থেকে গন্ধ পেয়েছে ততবারই সেটা হয়েছে কয়েলের গন্ধ এবং তৎক্ষণাত গোসল করা ছিল বাধ্যতামূলক ৷ সামুতে এ্যাকাউন্ট খোলার সময় কী নাম দেব খুঁজে পাচ্ছিলাম না ৷ বউ চা দিতে এসে বলে গেল আমার শরীর থেকে মশার কয়েলের গন্ধ বের হচ্ছে এবং অতি তাড়াতাড়ি যেন গোসল করে ফেলি ৷ তখন ভাবলাম,এতদিনতো অন্য লোকেরা আমার উপাধি দিয়েছে,আজ আমার উপাধি আমি নিজে দেব ৷ সামুতে লিখে ফেললাম,'মশার কয়েল' ৷
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:৪১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×