শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর চারজন সদস্যসহ ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের ঘটনায় এ প্রাণহানি হয়। কেউ হারিয়েছেন স্ত্রী-সন্তান, কেউ হারিয়েছেন মা ও ভাইবোন। আবার কয়েকটি পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। স্বজনের কান্না আর অবিরাম বৃষ্টি যেন মিলেমিশে একাকার।
ইদানীং প্রায় প্রতি বছরই পাহাড়ী এলাকায় অতি বৃষ্টি বা আচমকা পাহাড় ধ্বসে মানুষের প্রানহানি ঘটে যা মাঝে মাঝে আমাদের চিন্তার জগতকে আঘাত করে। বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মনে হলেও আসলে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় বরং মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কারন মানুষের যত্রতত্র পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, বিলাস বহুল বাংলো নির্মান বা বানিজ্যিক কাজে পাহাড়ের ব্যবহার ইত্যাদি পাহাড় ধবসের প্রধান কারন।
পাহাড়ি ধ্বসে মানুষের মৃত্যু, স্বজনদের আহাজারি, জনপদের ক্ষতিসাধন ইত্যাদিকার সংবাদে হয়তবা আমরা সাময়িকভাবে বিচলিত হই, মর্মাহত হই এবং স্বজন হারানোদের দুঃখ লাঘবে সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হই কিন্তু পরক্ষনে আবার ভুলে যায় তাদের কথা। বিষয়টা কি আমরা কেবল প্রকৃতির উপর ছেড়ে দেব নাকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার পেছনের কারিগরদের ধরার চেষ্টা করব???
খবরে দেখলাম নিহতদের জনপ্রতি বিশ হাজার টাকা আর আহতদের জনপ্রতি দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। আমি জানিনা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কি ব্রিটিশ যুগে বসবাস করেন, নাকি তাদের হিসাব নিকাশের বোধ শক্তিগুলো লোপ পেয়েছে? কারন এই টাকা দিয়ে এখনকার সময়ে এজন ব্যক্তির দাফন কাফনেরই ব্যবস্থা করা যায়না। তাদের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করা তো ভিন্ন কথা। এই অর্থ দিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা যায় নাকি এটা তাদের সাথে করা হয় একধরনের নির্মম পরিহাস???
পাহাড় ধ্বসের মূল কারণ গুলো চিহ্নিত না করে বছর বছর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা বা দান খয়রাত করা, সমস্যার সমাধান নয় বরং সমস্যাকে জিইয়ে রাখা বা দায়ী ব্যক্তিদের আড়াল করারই নামান্তর। সুতারাং পাহাড়ী ধ্বসের আসল কারন কি এবং কেনই বা বারবার এইসব মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মম স্বীকার হতে হয় এই মানুষগুলোকে। আর তাহলো যত্রতত্র পাহাড় কাটা বন্ধ করা, দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আদায়। তাহলেই পাহাড় ধ্বস বন্ধ হতে পারে, নচেৎ নয়।
মোঃ শওকত হোসেন বিপু
১৪.০৬.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫১