somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিজবুত তাহরীর রাজনীতিঃ রিফাত হাসানের মুছে ফেলা পোষ্ট...

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। ব্লগার রিফাত হাসানের পোষ্ট "সরকারের প্রেসনোট, জননিরাপত্তার প্রেতাত্মা ও হিজবুত তাহরীর" সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষ মুছে দিয়েছেন, আর এর প্রতিবাদে রিফাত তার সকল পোষ্ট কয়েকদিনের জন্য ড্রাফট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পোষ্ট মুছে ফেলার শিকার হওয়া যে কোন ব্লগারের জন্যই বিব্রতকর অভিজ্ঞতা, রিফাতের প্রতি আমাদের কোন ধরনের সমবেদনাই তার ক্লেশ লাঘবের জন্য যথেষ্ট নয়

২। সম্প্রতি ২২ অক্টোবর একটি প্রেস নোটের মাধ্যমে সরকার হিজবুত তাহরীর নামক ইসলামিক সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করবার কথা জানান।প্রত্যাক্ষ ভাবে জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠা এই দলটি আত্মঘাতী বোমাবাজদের পক্ষে কথা বলার বিস্তর নজীর রেখেছে। তাদের প্রস্তাবিত খেলাফতের রাজ্যে অমুসলিমদের নির্বাচিত হওয়া এবং নির্বাচন করার কোনটারই সুযোগ নাই। আমাদের প্রচলিত গনতান্ত্রিক কাঠামো এবং সংবিধান কোনটার পক্ষেই আনুগত্য না থাকা এই দলটির রাজনীতির চর্চা করার অবাধ সুযোগ প্রদান করে আমরা কি অর্জন করবো এই প্রয়োজনীয় প্রশ্নটা যে কেউ তুলতেই পারেন। সওয়াল উঠতেই পারে, হিজবুত তাহরীর রাজনৈতিক শ্লোগান 'খেলাফত' এবং এ বিষয়ে দলটির অবস্থান এর সাথে কি ধরনের ভিন্ন বোঝাপড়া রিফাত হাসান করতে চান?

৩। দেশের পরিস্থিতিটাই আজ এমন — একটা সফল ও স্বতঃস্ফুর্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা একটা সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরেও, সকল ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকার আমরা ভোগ করছি, এমনটা বলা যাবে না। সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষও এমন কোন স্বাধীন নয়। হিজবুত তাহরীর প্রতি বর্তমান সরকারের শক্ত দমন নীতির অবস্থান দেখে সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষ হয়তো সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে বিপরীত অবস্থান নিতে ভয় পেয়েছেন। অন্যদিকে সামহোয়্যার ব্লগে হিজবুতের পক্ষে তেমন ভাবে কোন জনমত দানা না বাঁধায়, সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষ“ সহজেই রিফাতের পোষ্টের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন। ধারনা করি সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষ“কে একটা প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়, বিধায় যে কোন পদক্ষেপ তাকে হিসাব করেই নিতে হয়। ফলে তার প্রতিবাদী হওয়ার দায়, রিফাতের সাথে না মিলতেই পারে। পোষ্ট মুছে ফেলায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রিফাতের অভিমান করা সাজে, কিন্তু সামহোয়্যার সরকারী রোষের শিকার হলে সরকারের সাথে কর্তৃপক্ষের অভিমানী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সামহোয়্যারকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট বলে হয়তো বিবেচিত না হতেও পারে। ফলে আমার মতে, সরকারী দমননীতির বিরুদ্ধে জেহাদটা রিফাতের উচিত ছিলো সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে করার। এখন রিফাত ও অন্যান্য ব্লগাররা সামহোয়্যারের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন... আমার মনে হয়েছে এটার পুরো সুবিধা হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষনাকারী আওয়ামীলীগ সরকারই উপভোগ করছেন। রিফাতের যাবতীয় মেধা এবং শক্তি এখন ব্লগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।


৪। আল কায়েদার পাতা বোমার বিরুদ্ধে ঠিক কারা কারা নিরাপদ, এটা নিশ্চি্ত ভাবে জানা গেলে জঙ্গী ইসলামপন্থীদের পক্ষে দাঁড়াতে আমার ততটা আপত্তি ছিল না। যে কোন ধর্মেই আত্মহত্যা মহাপাপ, নরকে গমন। অথচ ২০০৫ সালের জুলাই মাসে, সুইসাইড বোম্বাররা কোন বেহেস্তের আশায় সারা লন্ডন জুড়ে নরকের অবস্থা জারী রেখেছিল? আমি তার উত্তর খুঁজে পাই নাই। আমার চোখের সামনে সেদিন শত শত সাধারন মানুষের জীবনকে আতঙ্কের চূড়ায় তুলে সারা শহরের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা তছনছ করে তুলেছিল, আল কায়েদার কয়েক জন চরমপন্থী। সেদিনের ঘটনায় নিহত/ আহত কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আল কায়েদার সমর্থক কি একজনও ছিল না? এই বিভৎস বোমা হামলা চালানোর আগে, আল কায়েদার পক্ষ থেকে লন্ডন শহরে বসবাসরত তাদের শুভানুধ্যায়ীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সেদিন কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?

হায়! আল কায়েদার পাতা বোমায় তার সমর্থকরাও নিরাপদ নয়।

৫। হিজবুত তাহরীর করনীয় নিয়ে আমার জ্ঞান স্বল্প। তাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠার খুটিনাটি দিক নিয়েও আমার ভাল ধারনা নাই। রিফাত আমাদের জানাচ্ছেন হিজবুত তাহরীরের কোন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনরকম চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন, বা অস্ত্রসহ গ্রেফতার অথবা নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে নাই সরকার। দুই হাজার এক সালে কার্যক্রম চালু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই দলটি সবচেয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর একটি। রিফাতের সাথে দ্বিমত নাই, এমনটা হতেই পারে। কিন্ত হিজবুত তাহরীর কি আল কায়েদার সন্ত্রাসী পন্থাকে সমর্থন করে? এ পর্যন্ত তাদের ছাপানো শত শত পৃষ্ঠার প্রচার পুস্তিকায় হিজবুত আমাদের কি জানিয়েছে-- তাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি চালানোর পথে তারাও আত্মঘাতী বোমাবাজদের স্কোয়াড বানাবে কি না? সহজ সরল ভাষায় চরমপন্থা নিয়ে তাদের তাদের অবস্থান কি, তার ব্যাখা দেবার দায়ীত্বটা অবশ্যই হিজবুতের!!

যতক্ষন হিজবুত তার বক্তব্যে এটা আমাদের পরিস্কার না করছে, কি ভাবে আল কায়েদার সাথে তাদের আমরা পার্থক্য করবো?


৬। যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বানায়, তাদের নিয়ে আমাদের বিস্তর শঙ্কা, এক ধরনের অস্বস্তি তো আছেই। দেশে বর্তমান বিরাজিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অনেক সমালোচনা আছে, দুঃসহ যাতনা আর দুর্ভোগও আছে, হিজবুত এই প্রচলিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে ধর্মীয় বিধানের মোতাবেক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্ত হিজবুতের খেলাফত প্রতিষ্ঠা আমদের বর্তমান যাতনা আর দুর্ভোগময় দিনগুলোর পরিসমাপ্তি টানবে — এতটা আশাবাদী কি আমরা হতে পারি? অন্য সব কিছু বাদ দেই, অন্ততঃ পক্ষে নারী অধিকারের প্রশ্নে এ সমস্ত দলগুলো যখন ধর্মীয় বিধি বিধানের বাইরে যাওয়ারই তাগদ রাখে না!!

৭। আফগানিস্তানে প্রাক্তন তালেবান জমানায় এবং বর্তমানে পাকিস্তানের অঞ্চল বিশেষে আমরা যে সব ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা নমুনা হিসাবে দেখেছি, এরপরেও কি আমাদের দেশে আমরা ইসলামিক শাসন ব্যবস্থার খোঁদলে আমাদের মাথা ঢুকাতে চাই?

৮। পরিশেষে --- কোন ব্লগারের পোষ্ট মুছে দিয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে জরুরী বিতর্কগুলো তোলার রাস্তাই বন্ধ করে দেন। ব্লগের কার্যকারীতা এতে বিনষ্ট হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনমত গঠনের প্রক্রিয়া। এটা কোন স্বাস্থ্যকর পন্থা হতে পারে না। আশা করি কর্তৃপক্ষ রিফাত হাসানের পোষ্টটি দ্রুত ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে তার স্ট্যাটাস অবনমন প্রত্যাহার করে নেবেন, যাতে করে জরুরী বিষয়ের আলোচনাগুলো এই ব্লগেই আমরা তুলতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:২২
৪৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×