সকাল বেলা ক্যাম্পােস ঢুকেই দেখি বেশ নিরব পরিস্থিতি। প্রথমেই গেলাম ডিপার্টমেন্টে। দেখা হলো দুই বন্ধু-বান্ধবীর সাথে। কথা বলতে বলতে হটাৎ চিৎকার চেচামেচি। ধাওয়া করার শোরগোল। তারাতাড়ি বের হয়ে দেখি অদূরেই ১০-১২ জন ছেলে মিলে একটা ছেলেকে পেটাচ্ছে। পেটানোর উপাদান-- রড, মোটা লাঠি আর লাথি। মারতে মারতে শুইয়ে ফেল্ল ছেলেটাকে। তারপরেও থামেনি তারা। ীনথর দেহে গরুর মাংশ কোপানোর মত রড দিয়ে পেটাচ্ছিল দুজন। বাকিরা তখন অন্য কাউকে ধাওয়া করতে করতে সামনের দিকে চলে গেল। জায়গাটা হলো পরিসংখ্যান বিভাগের যাওয়ার রাস্তার কোনায়। 'তারা' চলে যাবার পর কয়েকজন এসে ছেলেটিকে মেডিকেল নেয়ার ব্যবস্থা করছে। এর খানিক বাদে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ। প্রথমে ভেেবছিলাম ছাত্র!!!লীগের কোন এক পহ্মের ছেলে পরে জানলাম তার অপরাধ সে ভাষাণী হলের ছাত্র। ঘটনাটা দেখে আবার ফিরলাম সেমিনার রুমে। সেখানে কাজ শেষ করে রওনা দিলাম তিনজন ট্রন্সপোর্টের উদ্দেশ্যে। ক্যামপাসের বাসে করে বাসায় ফিরবো এই আশায়। যেতে যেতে দেখি শহীদ মিনারের সামনে ৫-৬জন রড নিয়ে হাটছে। গোল গোল করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। আমার বান্ধবী ভয় পেয়ে গেল, আমার অন্যবন্ধু তাকে আশস্ত করল আমরা সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাচ, আমাদের কেউ কিছু বলবেনা। গেলাম ট্রান্সর্পোট, বাসে সিট রাখলাম, পাশে বসে কথা কথা বলছি আমরা। হটাৎ সব বাস সুপারি তলা থেকে ঘুরিয়ে ধূরে শিহ্মকদের কোয়াটারের দিকে চলে যাচ্ছে, ঝামেলা হবার আশংকায়। বাস ছাড়তে তখনো প্রায় ১ ঘন্টা বাকি। আমি বল্লাম চল চা খেয়ে আসি সুপারি তলা থেকে। ওরা নিষেধ করছিল আমাকে কিন্তু আমি বল্লাম কিছু হবেনা। তখন খবর পেলাম হলের দিকে, সেই ভাষাণী হলের দিকে মারামারি হচ্ছে। আমরা দুই বন্ধুই ওই হলের ছাত্র। গেলাম চা খেতে, অর্ধেক কাপ চা খেয়েছি মাত্র তখনি দেখি ৮-৯ জন ছেলে রড হাতে সুপারি তলায় হাজির। তারা খুজছিল ভাষাণী কিংবা বঙ্গব্ন্ধু হলের ছেলেদের। সবাইকে জিজ্ঞাস করছে কে কো হলের। একজনকে পেয়েছে, ৩ জন তাকে ধাওয়া করতে করতে নিয়ে গেল, পরে হয়ত সেই ছেলেটিও মার খেয়েছে, তা দেখিনি। আমাদের গলা তখন শুকিয়ে কাঠ। কি করব বুঝতে পারছিলামনা। এর মধ্যেই আবার খবর পেলাম বাইরের বাসে যাবার পথ গুলোতেও তারা পাহারা বসিয়েছে, কোন দল বা গ্রুপ মুখ্যনা, মুখ্য বিষয় কে কোন হলে থাকে।
(মূল ঝামেলা ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের মধ্যে) আমিতো ধরে নিয়েছি আগামী কয়েকমাস পঙ্গু হাসপাতালে আমাকে থাকতে হবে, কারন তাদের মারের যে ধরন!!!! পাশদিয়ে ওরা হেটে গেল আমরা কোনো কথা না বলে চুপকরে দাড়িয়ে রইলাম। ওদের যাওয়া দেখে আমরাও রওনা দিব তখন বল্লাম একটু দাড়াই, দেখি ওরা কোনদিক যায়। ভাবছিলাম ওরা েসাজা চৌরঙ্গী নামক যায়গা থেকে ওদের হল আলবেরুণীর দিকে চলে যাবে। মাঝপখে ওরা কয়েকটা রিক্সা থামিয়ে জেরা করল হয়ত। তখনই দেখি পিছন থেকে বিশাল এক দল হেটে সুপারি বাগানের দিকে আসছে। ততহ্মনে ঐ জায়গা প্রায় খালি। আমি ওদের বল্লাম তারাতাড়ি হাট। তখনও ৬ জনের দল চৌরঙ্গীতে দাড়িয়ে আছে। আমি ভেবেছি ওরা চলে যাবে। আর বাসে উঠতে গেলে ওই জায়গা পার না হয়ে যাবার কোন পথ নেই। আর বড় দলটি ভেবেছি সুপারি বাগানেই থাকবে। যখন আমরা যাওয়া শুরু করলাম তখন পিছন ফিরে দেখি ওই বড় দলটাও আসছে পেছন পেছন। ওই রাস্তার দু পাশে লেক কোন দিকে ফেরারও উপায় নেই। যখন ওরা পাশ দিযয় যাচ্ছে তখন বান্ধবী আমার আৎকে উঠেছে সশব্দে কারন ২০-২২ জনের ওই দলের ৬/৭ জনের হাতে রাম দা, বাকিদের হাতে বিশাল বিশাল রড। পাশ দিয়ে যাবার সময় কেউ কেউ বলছিল আইডি চেক করার কথা, কিন্তু করেনি, আমাদের হাটার গতি অজান্তেই কমে গেল। বড় দলটি বামে চলে গেলেও ছোট দলটি ওখানেই আছে। তারা কেউ কেউ ডাকতে চাচ্ছিল কিন্তু সাথে 'মেয়ে' ছিল বলে ডাকেনি কিন্তু বেশ কমেন্ট করছিল তারা। কয়েকজন হয়ত চিনতও আমাদের। বাসের কাছে আসলাম, কথা বলছিলাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। এরা মেধাবী?!! সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করার নির্দেশ তাদের কে দেয়???
বাস ছাড়লো কিন্তু ঘটনা শেষ হলোনা। আমরা তখন আলাদা হয়ে গেছি। আমি একা মিরপুরের বাসে আর ওরা গুলিস্থান রুটের বাসে। ২টায় ১০ টা বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। সব গুলো এম এইচ হলের সামনে থামাতে বাধ্য করা হলো এবং চিরুনী অভিজান শুরু হলো। প্রত্যেকের আই ডি দেখে ওই দু হলের ছাত্রদের মারা হচ্ছে। সেটা বলার মতনা। আমার ওই বন্ধুকে নামাতে পারেনি সেই বান্ধবীর জন্য। আর আমাকে কেন জানি আই ডি দেখাতে বলেনি। দৃশ্য ও স্মৃতি গুলো প্রচন্ড পীড়াদায়ক।
অসংখ্য মারামারি দেখেছি এই ক্যম্পাস জীবনে, তবে সাধারন ছাত্রদের খুঁজে খুঁজে হামলা ও মার দেয়া এই প্রথম দেখলাম।
এই মাত্র খবর পেলাম ভাষাণী হল এটাক হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলও দখল নিয়েছে রাত ১.৩০ এ। তার মানে এই হামলাকারীরাই রাজত্ত করবে সামনের দিন গুলোতে??!!!। এরাই ছাত্র!!!, এরাই আমেদের ভবিষত রাজনীতিবীদ!!!???
আর এই সব ঘটনার মূলে হচ্ছে সেই ১০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত হল ণির্মান প্রকল্প আর লোভী শিহ্মকদের নোংরা রাজনীতি যারা ছাত্রদের দিয়ে নিজেদের ফায়দা লোটে......।
সরকার কেন নিরব? স্মার্ট!! স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রি কোথায়???
১ মাসের জন্য জাবি ছাত্রলীগ কমিটির কার্যক্রম স্থগীত আর রাত ৩ টায় হল দখল!! কে করছে এগুলো?? লাগামহীন ছাত্ররাজনীতি যা নিকট অতীতের পুনরাবৃত্তি আবার কখনও অতিক্রান্ত ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




