শিবিরকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। তবে আওয়ামী লীগের প্রক্রিয়াগত পদ্ধতিতে আমি স্পর্ষ্টত সমস্যা দেখতে পাচ্ছি! এর পেছনে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধের বিচারের চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা বেশি। আওয়ামী লীগের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছুও আশা করা উচিত নয়, কারণ তারাও ক্ষমতার অপচর্চা ও দূর্নীতির মদদপুষ্টকারি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এর গত চার বছরে অনেক প্রমান চোখের সামনে এসেছে!! এর মধ্যে ছাত্রলীগের মাঠ কর্মী থেকে সংসদে আসা অনেকেই আছে।
অন্যদিকে বিএনপির কথা আমি আলোচনায় আনতেই চাইনি, কারণ আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে যা করতে পেরেছে তার ধারে কাছে বিএনপি যেতে সক্ষম না। অন্যদিকে ‘দেশ নায়ক’ থেকে ছাত্রদলের মাঠ কর্মী, তাদের কর্মকান্ড কি তা বর্তমানে আর বড় করে লেখার প্রয়োজন নেই, কারণ তা সকলেরই জানা। তাহলে বিকল্প কে আমাদের? অবশ্যই স্বৈরাচারকে আবার বেছে নেবেনা বঙ্গবাসী!!
স্বৈরাচার হু/মু/ এরশাদ এখন যা বলেন তার অনেকটাই আবেগ থেকে কথা বলেন, একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়! কেউ কি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ এর রাজনীতির বিপক্ষে সততার অবস্থানে থেকে কথা বলেন? সবাই রাজনীতি করেন, রাজনীতিকে নিয়েও প্রতিনিয়ত রাজনীতি বিরাজমান। কিন্তু মূল দেখার জায়গা হলো আজ যে ছেলেটি শিবির করছে সে একদিন দেশের প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিত্ত্বকারী কোন একটি জায়গায় যাবে। সে সেই জায়গায় বসে কি ধর্মের কথা বলবে নাকি ধর্মের কথা বলে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করবে? বিষয়টা ভেবে দেখা খুবই জরুরী।
অনেক গল্প শুনেছি শিবির নিয়ে, গল্প না ঠিক, বাস্তব অভিজ্ঞতা। দেশের অভ্যন্তরে গ্রাম থেকে কলেজ শেষ করে আসা একটি ছেলের শহূরে সহায়তা পাবার জন্য নানা রকম সাহায্য করে থাকে শিবিরের ‘বড়’ ভাইয়েরা! ভর্তি কোচিং কিংবা হলে সিট পাওয়া... নানাবিধ একান্ত জরুরী সুবিধা সমূহ, আসলে যে সুবিধা গুলো রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিটি জনগনকে দেয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। পারেনি, কিংবা রাজনীতির ব্যক্তিক বা গোষ্ঠি কেন্দ্রিক চর্চার কারনে পারেনি, পারছেনা। শুধু দেশের অভ্যন্তরে না, বিদেশেও নতুন আগত বঙ্গদেশীদের এমন সুবিধা দেয় শিবির। এই সুবিধা শুধু মাত্র ‘সহায়তার’ উদ্দেশ্যে দেয়া না বরং রাজনৈতিক দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।
আমি কেন শিবিরকে পছন্দ করিনা, এর সহজ জবাব, তাদের মুরুব্বিরা ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের জন্ম চায়নি। ওই মুরুব্বিরা অসংখ্য বাংলাদেশিকে পাকিস্থানী রক্তখেকোদের কাছে তুলে দিয়েছে। অসংখ্য নারীকে যুদ্ধের যৌনতার বলি করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন, আপনার পরিবারের একজন সদস্য যদি এমন কারো হাতে/মাধ্যমে নিহত হত বা নির্যাতিত হতো, আপনি কি তাদের ক্ষমা করতে পারতেন? আমি পারতাম না, কিংবা পারিনা!!
শিবির যারা করেন তাদের একটা বড় অংশ ‘ধর্মের’ কারনে এই রাজনৈতিক দলের কোলে নিজেদের ভিড়িয়েছেন। ইসলাম ধর্মের প্রধান বিধান হলো কোরান। কোরান যারা পড়েছেন তারা হয়ত জানবেন, এতে স্পষ্ট বলা আছে, এই ‘জীবন বিধান’ই কাম্য এবং এই জীবন বিধান যাবতীয় মানব সৃষ্ট আইন ও বিচারীক ব্যবস্থাকে খারিজ করে। তাহলে এর অর্থ কি দাঁড়ায়? – ইসলাম মানব সৃষ্ট কোন আইন বা বিধানের অধিনে না। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রকৃয়ায় নিবন্ধিত। এই সংবিধান ও আইন মানব সৃষ্ট, এবং জামায়াত তাকে স্বীকার করে নিচ্ছে যা তাদের মূল ধর্মীয় চেতনার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। মানে, জামায়াত শুরুতেই তাদের পবিত্র কোরান কে অশ্রদ্ধা করল, শুধু মাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য। তারমানে জামায়াত কোন ভাবেই ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়না বরং ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে।
আপনি যদি ধর্মপ্রান হন, আপনি আপনার ধর্ম চর্চা করেন ব্যক্তিক জায়গায়, কেন জামাতের মত একটি রাজনৈতিক দলের কাছে যাবেন? আপ্নারা/আমরা যারা তরুন প্রজন্ম, আমাদের অনেক কিছু করার আছে, শুধু ধুর্মের মধ্যে বুধ হয়ে থেকে, নিজেকে উচ্চতর ভেবে কি লাভ? এতে শুধু রক্ত আর ঘৃনার উন্মেষ ঘটবে, আর কিছু না। আজকে যখন ইসরাইল ফিলিস্তিনের উপর হামলা চালাচ্ছে তখন অনেকেই বলছেন মুসলমানদের উপর নির্যাতন, ইহুদিরা মুসলমানদের মারছে। কারণ তারা শক্তিশালী। আবার আমার রাষ্ট্রের মাঝে মুসলমান হয়ে যখন হিন্দু কিংবা পাহাড়ি আদিবাসীদের পিটাচ্ছি, ঘর বাড়ি-মন্দির পুড়িয়ে দিচ্ছি তখন তাদের চোখেও আমরা ‘ইসরাইল’, কারণ আমরা শক্তিশালী, ওদের তুলনায়, কারণ আমরা মানবীকতাহীন, ধর্মের নেশায় দিশেহারা!!
আমার কল্পনায় শিবিরের তরুন সমাজ, তাদের আমি পিটিয়ে শিবির ছাড়া করতে পারবনা, কারণ যুদ্ধ দিয়ে মতাদর্শিক অবথানের পরিবর্তন আনা যায়না, বরং গোড়া অবস্থানের দিকে ঠেলে দেয়া হয়! পরিবর্তনের জন্য ব্যাখ্যা দরকার। আপনি কেন এমন একটি রাজনৈতিক দল করবেন যারা ইতিহাসে আপনার জন্মভূমির জন্মের বিরোধী? আপনি কেন এমন একটি দলকে সমর্থন দিবেন যারা আপনার ধর্মীয় অনূভুতিকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে? এমন ঘৃন্নিত ‘মুরুব্বিদের’ ছায়াতলে কেন থাকবেন আপনি? আর দেশের মাঝে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ফলাফল কি হয় তা দেখতে একটু কষ্ট করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দিকে তাকান। ধর্ম আপনার ব্যক্তিগত চর্চার বিষয়, আপনি বিশ্বাস করবেন কি করবেন না, তাও আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু যে অবস্থানেই যাবেন, নিজের কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা নিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হোক!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




