পাকিস্থানের জন্ম হয়েছিল ধর্মকে বেস করে। এটা জিন্নাহ'র দ্বিজাতি তত্ত্বের ফসল। ৪৭ থেকে যে শাসকগোষ্ঠী ক্রমাগত শোষণ আর নির্যাতন চালিয়ে এসেছে এই ভূখন্ডের মানুষদের উপর তাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ধর্ম। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম তার মৌল ভিত্তিই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শোষণহীন একটা দেশের স্বপ্ন। আর সেই যুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্যীষ্টান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে ধর্মের লেবাসধারী একদল ধর্মান্ধের বিরুদ্ধে।
যুদ্ধের প্রতিটা মূহুর্ত এজাতিকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে ধর্মের নামে যত সব অনাচার। উপরে আসিফ মহিউদ্দিনের ছবিগুলিতে সেটা সামান্যই প্রতিভাত হয়েছে।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে হায়েনারা শেষ আঘাতটা হেনেছিল এদেশের মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির তথা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে যাদের অবস্থান সেই সব বরেণ বুদ্ধিজীবিদের উপর। হ্যাঁ, সেই সব সূর্য সন্তানদের বেশীরভাগই পৈতৃক সূত্রে একটা ধর্ম পেয়েছিলেন, কেউ কেউ হয়তো সেটা পালনও করতেন। কিন্তু তারা যে চিন্তায় চেতনায় ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন তাতে কোন রকম সন্দেহ নেই। আর তাই ইসলামের লেবাসধারী কুলাঙ্গার পাকি আর তাদের এদেশীয় দোসররা খূব ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এদের হত্যা করেছে। এখানেও কিন্তু ধর্মের ব্যবহার সুস্পষ্ট।
তারা যে তাদের মিশনে সফল হয়েছে ২৬৬টি মাইনাস তারই প্রমাণ। স্বাধীনতার স্বপ্ন ধর্মনিরপেক্ষ একটা জাতির পরিবর্তে আমরা একটা ধমান্দ্ধ জাতি হওয়ার দিকে ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছি। এ ধারা অবিলম্বে রুখতে হবে।
অনেকেই বলেছেন ধর্মের অপব্যবহারের জন্য ধর্ম কোনভাবেই দায়ী না, ব্যবহারকারীকেই দায়ী হতে হবে। মানলাম। কিন্তু আপনারা কি একবারও চিন্তা করেছেন ধর্ম কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপব্যবহারের হাতিয়ারটা তৈরী করে দিয়েছে ? ইসলাম (পাকি এবং এদেশীয় ইসলামপন্থী দল মোতাবেক) ধর্মনিরপেক্ষতা সমর্থন করে না। ইসলাম এটাকে ধর্মহীনতা বলছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বরং যে যার মতো ধর্ম পালন করবে কি করবে না তার স্বাধীনতা। আবার গণিমতের মাল কে বৈধতা দিয়েছে ইসলামই, যেখানে বিজিতের সম্পত্তির সাথে সাথে তার স্ত্রী, কন্যাও অন্তর্ভূক্ত।
একটা ধর্মকে ব্যবহার করে বার বার যখন এমনটি ঘটে তখন চিন্তা অবশ্যই করতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে ইসলাম অপরিবর্তনীয়। অথচ বাস্তবে দেখেন কি অবস্থা। সুন্নী শিয়াকে দেখতে পারে না, শিয়া সুন্নীকে। হানাফী বলে ওয়াহাবী ভূয়া, ওয়াহাবী বলে হানাফী ভূয়া। মুসলিমরা এটা মেনেও নেয় কারণ মোহাম্মদ (দঃ) বলে গেছেন কিয়ামতের আগে নানরকম তরিকায় ভরে যাবে ইসলাম।
শেষ করা দরকার লেখাটা। ইউরোপে চার্চ একসময় অনেক শক্তিশালী ছিল। যে কোন বিষয়েই তাদের ছিল ব্যাপক ক্ষমতা। যে কাউকে ধরে ধর্মহীন আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়ারও নজীর আছে। এখন কি অবস্থা ইউরোপের ? ধর্মান্ধ পোপ আর পাদ্রীদের অত্যাচারে জর্জরীত হতে হতে ইউরোপীয়ানরা এখন মূলতঃ ধর্মহীন।
আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম মৌল ভিত্তি ধর্মনিরেপেক্ষতা থেকে এই ধর্মান্ধতার দিকে যাত্রা কি শেষ পর্যন্ত ধর্মহীনতা'র প্রসার ঘটাবে না ? আরেকবার ভাবুন, ভাবা উচিত বলে মনে করি।
শুভ বুদ্ধি এবং মুক্ত চেতনার উন্মেষ ঘটুক সবার প্রাণে ...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




