somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিতৃপ্তি

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“অ্যাঁহ ! ব্যাথা লাগছে ত “

মিঠু বেশ ইতস্তত বোধ করছিল । বুকের ভেতর এত জোরে ঠক ঠক শুরু হয়েছে যে বাইরে থেকে ও শব্দ শোনা যাচ্ছে । বেশ ভয়েই নাকি ঠকঠকানিতে ইস্পিতার হাত চেপে ধরেছে বুঝতে পারছে না । ইস্পিতা আবার ককিয়ে উঠল । মিঠুর বোধদয় হল , হাত ছেড়ে ভিড় মারিয়ে দৌড়ে লাফে খোলা মতন একটা মাঠে এসে বসে পড়ল । বুক এখন রেলগাড়ির মতন ঝিকঝিক করছে । নাহ ! আমি এইটা কি করলাম ? মনে মনে ভাবছিলো মিঠু । এবার যদি বড় গুরুজনদের বলে দেয় তাহলে ত মান সম্মান সব যাবেই উপরন্তু বাসায় ধোলাই মাস্ট । ধুর কোন কুলক্ষনে যে এলাম এখানে । দুদিন আগেই মিঠু এসেছে বন্ধুর সাথে এক বিয়েতে । বাসা থেকে অনেক কস্টে মানিয়ে সিলেট আসতে হয়েছে । এমনিতে বাসা থেকে বাইরে থাকার এলাউড নেই তারপর এতদূর কয়েকটা রাত কাটাতে হবে ভেবেই বনিবনা হচ্ছিলো মিঠুর সাথে । মন খারাপ করে যখন গাল ফুলিয়েছিলো বড় আপু এসেই তাকে নিয়ে গিয়ে মা-বাবা কে রাজি করিয়ে ছেড়েছিলো , তবে কথা দিয়েছিলো কোনরকম গণ্ডগোল করবে না । হলুদের রাতেই গানের অনুস্টানে প্রথম দেখে ইস্পিতাকে । বেশ সুশ্রী আর কম কথা বলছিলো । হাসিতে তার এত সেক্সি লাগছিলো যে বারবার মনিশা কইরালার কথা মনে হচ্ছিলো । তবে সবচেয়ে বেশি যেটা আকর্ষিত করেছিলো সেটা হচ্ছে তার খোলা চোখ । বরত্মানে মেয়েদের চোখ তিন প্রকার হয়ে থাকে ।

১/ খোলা চোখ – এরা চোখের দিকে তাকায় কম উল্টো চোখ দিয়ে দেখে বেশি ।
২/ চশমাওয়ালা চোখ- এদের ক্লাস ওয়ান থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পড়তে পড়তে চোখের পাওয়ার কমে যায় ।
৩/ গিরগিটি চোখ – এরা খালি লেন্স পালটায় আর চোখের রঙ পরিবর্তন করে ।

খোলা চোখে ইস্পিতাকে যা লাগছিলো না অসম্ভব সুন্দর । সেই চোখে আরচোখে তার দিয়ে কয়েকবার তাকাতেই চোখে চোখ চোখাচুখি হয়ে কখন যে মনের চোখে ঠুকাঠুকি শুরু হয়েছিলো কেউ বলতেও পারেনি । মিঠু লক্ষ করেছে মেয়েটা কয়েকবার ই তার সামনে দিয়ে ফোস করে চলে যেত । বেশ কয়েকবার ই বান্ধবীরা মিলে হাসাহাসি করছিলো তার সামনে । একবার সুযোগ বুঝেই ক্যাঁৎ করে হাতটা চেপে ধরেছিলো মিঠু । তারপর যে কি হল বুঝতেই পারছিলো না , বুকের কাঁপুনির সাথে সাথে হাতের জোড় বৃদ্ধি পাচ্ছিলো । স্তম্বিত ফিরে ফেলো ইস্পিতার ককিয়ে উঠার সময় , তারপর ই ছেড়ে ছুড়ে পড়িমরি করে এই মাঠে এসে বাঁচল । বেশ খানিকটা সময় পেরুনোর পর বাড়ির পথে হাটতে লাগল । বাসার সামনেই মূল ফটকের নিচে চেয়ার নিয়ে ইস্পিতা বসে ছিলো । মিঠুকে দেখেই ডাক দিয়ে দিলো । মিঠু এবার সামনে এগুবে নাকি পেছনে যাবে বুঝতে পারছিলো না । ইস্পিতা বলে উঠলো ভাইয়া একটূ এদিকে আসেন কথা আছে আপনার সাথে ?

- জী ইয়ে মানে ....

- ভাইয়া আপনাকে আমি খুব ভাল মনে করেছিলাম কিন্তু আপনি
- আমি সত্যিই দুঃখিত আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না
- কি বুঝতে পারছিলেন না ?
- না মানে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না .... আসলে আপনাকে প্রথম দেখার পর কেমন জানি ..
- থামেন ..... আপনাদের মতন ছেলেদের আমার খুব ভাল করে চেনা আছে । একটু ভাল করে তাকানো মানে এই নয় যে আপনি অন্য কিছু ভেবে বসে থাকবেন ।
মিঠুর যেনো মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ল । ছি ছি আসলেই ত আমি এত ছোট মনের মানুষ আগে ত ছিলাম না । মিঠুর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো , মাটির দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলে মাটি তুমি ফাঁক হয়ে যাও আমি ঢুকে পড়ি ।
- আমি সত্যিই খুব দুঃখিত । আমি লজ্জিত ... এমন ভুল আর কখন ও হবে না । প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি ভুল করে ফেলেছি । ইস্পিতার কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো । ধাড়ি ছেলে ক্ষমা চাচ্ছে তাও আবার চোখে পানি ।
- থাক ভাইয়া ইটস অকে ....

মিঠু একবার ইস্পিতার দিকে তাকিয়ে সরি বলে ঘাড় ঘুরিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো । কিছুদূর যাবার পর পেছন থেকে ইস্পিতা বলে উঠল –

“ ভাইয়া মেয়েদের এত শক্ত করে ধরতে নেই , তাদের মন শক্ত হতে পারে কিন্তু শরীর নয় “ ।



*****
যাত্রাবাড়ী থেকে মহাখালি যেতে যে জাহান্নামী জ্যাম পেরুতে হয় মিঠু সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে ফেলেছি কিন্তু কিসের কি , সাইট দেখতে তাকে প্রতিদিন ই আসতে হয় । জীবনটা শেষ হয়ে গেলো । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এসব ছেড়ে ছুড়ে কোনও এক হিমালয়ের চুড়োয় গিয়ে বসে থাকা । সবচেয়ে অভাগ্যবান ত তখন মনে হয় নিজেকে যখন বাসে উঠে যুতসই সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা । আজ কিছুটা সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে নিজেকে , মহিলা সিটের সামনে সিট পেয়েছে । সমস্যা একোটাই তা হলে ইঞ্জিনের গরম ভাপ লাগছে । ক্ষতি কি দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ত বেটার নাকি ? নিজেকেই যেনো বোঝালো মিঠু । মৌচাক সিগন্যালে বাসে হুড়মুড় করে কিছু ললনা উঠে পড়ল। বাসের সব যাত্রিদের চাহনি তাদের দিকে , কিছুক্ষন এর মধ্যেই বাসের সব পিনপতন নিরবতা থেকে শুধু ললনাদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছিল । একজন এর হাসির আওয়াজ কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছিলো । মিঠু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো হাসির উপস্তিতি দেখার জন্য । চোখের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধুক করে উঠলো । মেয়েটা ও অনেক্ষন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো অবশ্য আড়চোখে , মিঠু তাকাতেই যেনো চোখে চোখাচুখি হয়ে গেলো । ৬/৭ সেকেন্ড পর চোখ নামিয়ে মিঠু সামনে তাকিয়ে রইলো । ভাবতে লাগলো কোথায় যেনো দেখেছি । মিঠুর খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আরেকবার তাকাই কিন্তু শত ইচ্ছেকেই সে দমন করে ফেলেছে তখন । একটা সময় ছিল যা ইচ্ছে হত করে ফেলা যেতো কিন্তু এখন সেটা ইচ্ছে থাকা সত্তেও সম্বভ নয় । অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে মিঠু চোখের ব্যাবহার করে না, ঠিকমতন মেয়েদের দিকে তাকানো ত দূরের কথা নিজের দিকে ও তাকিয়ে থাকতে পারে না অনেক্ষন । নাবিস্কো আসতেই কন্টাক্টর চেচাতে লাগলো “ যারা মহাখালী নামবেন গেইটে আসেন , সামনের সিগন্যালে থামলেই নামতে অইব । মিঠু কোনরকমে গেটের কাছে এসে দাড়ালো । মেয়েগুলো থেকে একজন মেয়ে মহাখালী নামবে , কন্ডাক্টর আবার চেচাতে লাগলো “ ঐ লেডিস নামবো স্লো স্লো “ । মিঠু চেঁচিয়ে উঠলো “ তুই গেটের কাছ থেক সড় , তবেই না লেডিস নামবে গাধা “ । কন্ডাক্টর ভেচকি দিয়ে কইলো হ সার নামতাছি । তরুনী গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আর পেছনে মিঠু সাহেব । বাস স্লো করলে কন্ডাক্টর নেমে বলতে লাগলো “ আফা বা পা দিয়া নামেন “ । নামতে যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা বেসামাল হয়ে গেলো , ফট করে মিঠু হাত ধরে ফেলে তাকে সামলানোর চেস্টা করল কিন্তু তার হাত পিছলে গেলো । ভাগ্যিস কন্ডাক্টর শক্ত করে ধরে ফেলছিলো না হলে নির্ঘাত কন্তু হাটু ছুলে যেতো । মিঠু ও নামলো তারপর বাস চলে গেলো । মিঠু নেমে তরুনির দিকে তাকিয়ে আছে । মেয়েটা আরেক হাত দিয়ে কব্জি ডলছেন যেটাতে কন্ডাক্টর চেপে ধরে তাকে থামিয়েছিলো । মিঠু অন্যদিকে তাকিয়ে চলে আসছিল তখন ই একটা ডাক শুনে থেমে গেলো ।
- জী বলুন । মিঠুর জবাব যেনো সে নিজেই শুনতে পেলো না । গলাটা বসে গেলো । খাকাড়ি দিয়ে আবার একই কথা রিপিট করলো ।
- আপনি কি পুরুষ নাকি মহিলা , ভাত খান না
- মানে কি বলতে চাচ্ছেন
- আপনি যদি ঠিক মতন ধরতেন তাহলে আমি ....
- ঠিক মতন ধরলে আপনি ব্যাথা পেতেন
- তাই বলে এমন নরম ভাবেই কেউ ধরে নাকি ...ভাগ্যিস নিচে কন্ডাক্টর ছিলো

মিঠু ঠোঁটের কোনে একটা মৃদু হাসি নিয়ে বলল – কোন একদিন কেউ একজন বলেছিলো মেয়েদের এত শক্ত করে ধরতে নেই , মেয়েদের মন শক্ত হতে পারে কিন্তু শরীর নয় ।

সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায় । মিঠু হাটতে লাগলো । মনের ভেতর কেমন যেনো একটা পরিতৃপ্ত অনুভব করছে । আজকের বাতাসটা ও খুব মিষ্টি । শরীর ছুয়ে হালকা দোলা দিয়ে যাচ্ছে । মিঠু চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস নিলো । গভীর নিশ্বাস ....

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:০০
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×