ছুড বেলায় ঈদ এর সময় আসলে নতুন জামাকাপড় কিনে দিত, একটা দিলে হবে না, ৪/৫ জামা দেয়া লাগবে। যখন যা মনে আসত সেই রকম জামা ই চাইতাম। মা-বাব কিনে ও দিত।
একটু যখন বুঝতে শিখলাম, তখন খেয়াল করলাম, সবাই ঈদ নতুন জামা-কাপড় কিনায় ব্যস্ত।
দাদু'র জন্য শাড়ি কিনা হত, আব্বা'র জন্য পান্জাবি/শার্ট, চাচু'র জন্য শার্ট-পান্জাবি-জুতা, ফুফু'র জন্য শাড়ি/জামা, আমার জন্য জামা। চাচু'র টা ছাড়া সব আম্মাই কিনত। কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনত না। তখন আমার ছোট বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে মাকে প্রশ্ন করতাম, কেন কিছু কিনে না, মা বলত "ঈদ তো আমার জন্য আসেনি মা"।
অনেক সময় বাবা, মা'র জন্য একটা/দুটা সুন্দর শাড়ি আনলে ও , সুন্দর হলে সেটা ফুফু নিয়ে নিত, তাই হয়ত বাবা ও আর মা'র জন্য শাড়ি আনত না। আর শাড়ি আনলে খুব বেশি সুন্দর না হলে মা'র কপাল ভাল ওটা ফুফু নেয় না। কিন্তু ঐ শাড়ি ও মাকে পরতে দেখতাম না। বাবা-চাচু নামাজে যেত নতুন পান্জাবি পরে, ওনারা নামাজে গেলে দাদু-ফুফু ও গোসল করে নতুন শাড়ি/জামা পড়ত। কিন্তু মা তো পড়তো নাহ। দাদু বাসায় গেস্ট আসলে তাদেরকে আপ্যায়ন করত। আর ফুফু তার বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেত। আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইত। আমি যেতাম না। মা কে বলতাম শাড়ি পড়তে। মা শাড়ি পড়না, আমরা ঘুরতে যাব অনেক মজা হবে। মা বলত "ঈদ এর এই আনন্দ আমার জন্য আমার জন্য আসেনি, তুমি ফুফু অথবা বাবা'র সাথে ঘুরতে যাও"
কিন্তু কেন ঈদের আনন্দ মা'র জন্য না, সেই প্রশ্ন আর মাকে করা হয়নি, কারণ একটা প্রশ্ন তো অলরেডি করে ফেলসি, অন্য একটা করলে মা যদি বকা দেয়? তাই আর কিছু বলতাম না, হয়ত মন খারাপ করে বাবা-ফুফু'র সাথে ঘুরতে যেতাম। কিন্তু আমার মনে সেই প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল।
বড় হয়ে মাকে কখনো সেই প্রশ্ন করা হ্য়নি। কারণ তখন অনেক ফ্রেন্ড সার্কেল, এখন মাকে যদি ঘুরতে যেতে বলি, আমাকে তো বাসায় থাকতে হবে, আর তো কেউ নেই, ফুফুর ও বিয়ে হয়ে গেসে, চাচা ও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। তাই নিজে স্বার্থপর হয়েছিলাম। কারণ বন্ধুদের সাথে ঘুরার লোভ সামলাতে পারতাম নাহ।
আজ বুঝি কেন মা বলত, ঈদ তার জন্য আসেনি, কেন ঈদের আনন্দ তার জন্য ছিল না।
সেই ছোট বেলায় স্কুলে থাকতে বই এ পড়েছিলাম ঈদ আনন্দ সাবরা জন্য, ঈদের দিনে সবাই হাসি-খুশি থাকবে, তাহলে সেটা কি ভুল পড়েছিলাম? মিথ্যে ছিল? আজ আমি আমার মাকে করা সেই প্রশ্নে উত্তর খুজে পেয়েছি।
মা আমাকে ক্ষমা করে দিও, তোমার মত করে আজ আমাকে বলতে হচ্ছে ঈদ আমার জন্য আসেনি মা, ঈদের আনন্দ আমার জন্য আসেনি মা। যেই আমি সেই ৪/৫ টা জামা কিনার জন্য বায়না ধরতাম, সেই আমার আজ একটা জামা ও কিনতে ইচ্ছে করে না। কিভাবে ইচ্ছে করবে মা, ঈদের সকালে উঠে যখন তোমাকে দেখি না, বাবা কে দেখি না, ঈদের আমার প্রথম সালাম টা বাবা আর তোমাকে করতে পারি না, আমার কি আর ঈদ ভাল লাগে?
ফোন করলে হ্য়ত তোমার সাথে কথা বলতে পারব, বাবার সাথে কথা বলতে পারব, কিন্তু সেটা আরো খারাপ লাগে মা। তাই আর ফোন করিনা, তুমি করলে ও কম কথা বলার চেষ্টা করি, পাছে তুমি আমার কষ্ট'টা বুঝে যাবে বলে, তুমি হয়ত ভাবছ মেয়ে আমার পড় হয়ে গেছে, না মা সেটা ঠিক না। ক্ষমা করে দিও আমায়। বিশ্বাস কর মা, আমার কষ্ট'টা তুমি বুঝে যাবে সেই ভয়ে কথা বলতে চাই না।
সেইদিনের সেই প্রশ্নের উত্তর আজ আমি পেয়েছি মা, বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছি, তোমার সেই কষ্টগুলো ও আমি অনুভব করতে পারছি মা, আমি মেয়ে বলে, যা তোমার ছেলেরা কখনোই অনুভব করতে পারবে না।
মা আমাদের দেশের সব মেয়েদেরই কি একটা সময়ের পরে ঈদের দিনটা তাদের জন্য এমন কষ্টের হয়ে উঠে? মা এটা কি ইসলামের নিয়ম? মা এই কষ্ট'টা মেয়েরা পাবে ইসলামে কোথাও তো লিখা নেই, পবিত্র কুরআন-হাদিসে কোথাও লিখা নেই যে মেয়েরা বিয়ের পরে আর কখনো বাবা-মা'র সাথে ঈদ করতে পারবে না। মা বলনা কোথাও কি লিখা আছে? মা শুধু কি আমাদের দেশেই কি এই নিয়ম? আমাদের এই সমাজেই কি এই নিয়ম? এই সমাজ কে আমি ধিক্কার জানাই মা। মা তুমি কিন্তু তোমার ছেলের বউকে তার বাবা-মা'র সাথে ঈদ করতে দিবে , কথা দাও মা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





