somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘোড়াগুলি মানুষ হোক। (নববর্ষের প্রার্থনা।)

১৪ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন মানুষ একদিন জঙ্গলে বেড়াতে বেড়াতে দেখতে পেল একটা জংলী ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকটার ইচ্ছে হল ঘোড়াটাকে ধরে বাড়িতে পুষবে। কিন্তু সমস্যা হল জংলী ঘোড়া ধরার মতন ফুর্তি কিম্বা দড়িদড়া কিছুই তার ছিল না। যা ছিল তা হচ্ছে বুদ্ধি। সেই বুদ্ধি দিয়েই সে কাজ শুরু করল।

মানুষঃ- কিরে ঘোড়া? কি করছিস?
ঘোড়াঃ- দেখতে পাস না? খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছি।... তুই আবার কে রে?
মানুষঃ- আমি হলাম গিয়ে মানুষ। তুই আমাকে নিজের মতন ভাবিস নাকি? সম্মান দিয়ে কথা বলতে শেখ।
ঘোড়াঃ-- কেন রে? তুই আমার চাইতে কি এমন বিরাট কিছু যে সম্মান দিতে হবে?
মানুষঃ- আমি কি তা দেখতে চাস? দ্যাখ তাহলে। তুই খাবার খুঁজে বেড়াস কিন্তু আমার খাবার আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। (পকেট থেকে বিস্কুট বের করে খাওয়া শুরু করে।)
ঘোড়াঃ- (মনে মনে) বাপ্রে বাপ! খাবার এর সাথে সাথে চলে? মানুষ হওয়ার তো বেশ মজা? (জোরে) তা দাদা, মানুষ হলে আর কি হয়?
মানুষঃ- কত কি সুবিধে। খাবার খুঁজে বেড়াতে হয় না।তথালা বাটিতে খাওয়া যায়। পাকা বাড়িতে আরামে ঘুমানো যায়। বাঘ সিংহ এসে ধরবে বলে এক চোখে তাকিয়ে থাকা লাগেনা। জামা পরতে পাওয়া যায়, তাতে শীত করেনা, মশাও লাগেনা। পায়ে জুতা পরা যায়, তাতে ধুলোকাদা লাগেনা। তুই যদি একবার মানুষ হয়ে যাস তো আর অন্য কিছু হতেই চাইবি না।
ঘোড়াঃ- আমি মানুষ হতে পারব?
মানুষঃ- না পারার কি আছে? এই তো গত বছর একটা কুকুর নিয়ে রাখলাম বাড়িতে। সে তো এখন থালায় খায়, বিছানায় ঘুমায়। তুই চাইলে তোকেও নিয়ে যেতে পারি। জগতের ভালো করাই তো মানুষের কাজ।
ঘোড়াঃ- আমি তাহলে মানুষ হবো। কি করতে হবে?
মানুষঃ- পরিশ্রম করতে হবে, আর আমার সব কথা শুনে চলতে হবে। সহজ কাজ নয় কিন্তু। মানুষের চলতে শিখতেই এক বছর লাগে। তুই যে জন্মের পরেই দৌড় দিয়েছিলি তেমন সোজা না।
ঘোড়াঃ- ঠিকাচে, সব করব। আমি মানুষ হতে চাই।


দ্বিতীয় দৃশ্যঃ- মানুষের বাড়ির রাস্তায় পরের দিন।

ঘোড়াঃ- তুমি আমার পিঠে চড়বে কেন?
মানুষঃ- দূর বোকা! আমার সঙ্গে যত ঘসাঘসি করবি ততই তোর ভাল হবে রে। দেখিস না, আমার কুকুরটা আমার কোলে ওঠে। তাছাড়া তুই জানিস না যে মানুষেরা তাদের বাচ্চাদের মানুষের কোলেপিঠে করেই মানুষ করে। দাঁড়া তোকে তার ছবি দেখাই। কিন্তু তুই কি আমার পিঠে চড়তে পারবি? পারিস যদি তো দেখ।
মানুষ ঘোড়াকে বেশ কিছু ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করে দেয় যে মানুষ হতে গেলে কিভাবে কোলে পিঠে জড়াজড়ি করতে হয়। খাড়া দাঁড়ানো মানুষের পিঠে যে চড়া যাবেনা বুঝে ঘোড়াই শেষে মানুষকে পিঠে নেয়। মানুষ হবার শিক্ষা শুরু হয়ে যায়।
মানুষঃ- তুই কিন্তু আমার উপর বিশ্বাস রাখছিস না। সব কিছুতে সন্দেহ করলে তোর মানুষ হওয়া যাবেনা। মানুষ যদি বা হয়েও যাস তো বাজে মানুষ হবি।
ঘোড়াঃ- না না, আর আমি সন্দেহ করব না। প্রথম বার ভুল হয়ে গেছে।

তৃতীয় দৃশ্যঃ- মানুষের আস্তাবলের সামনে।

ঘোড়াঃ- আমার পিঠে এসব কি দিলে? আবার বাঁধাবাঁধি করছ কেন?
মানুষঃ- ওরে বোকারাম, একে জিন বলে। মানুষ হতে গেলে খালি গায়ে রাস্তায় বেরুতে নেই। আমাকে দেখিস কখনো খালি গায় যেতে?
ঘোড়াঃ- অ, বুঝলাম। কিন্তু পায়ে কি সব ঠুকছ আবার?
মানুষঃ- নাল পরাতে হবেনা? দ্যাখ আমার জুতা। খালিপায় চলে কি রকম মানুষ হবি? তোকে যতই মানুষ করতে চাইছি তুই ততই ফালতু প্রশ্ন করছিস। মানুষ হতে গেলে মন সাফ রাখতে হবে রে বোকা। গুরুকে বিশ্বাস করতে হবে।
মানুষ এবার ঘোড়াকে লাগাম পরায়। ঘোড়া আর কিছু বলতে ভরসা পায় না। মানুষ তার পিঠে চড়ে বসে।
মানুষঃ- এইটা কেন দিলাম জানিস? তোর মুখ বন্ধ রাখার জন্যে। কেবল বাজে প্রশ্ন করছিস। চল এবার দৌড় শুরু কর। তুই হয়ত আবার বলবি যে দৌড়াতে হবে কেন? দৌড়ে লাভ কি? এই যে আমি সকাল বেলায় রোজ ওঠবোস করি, তাতে কি লাভ হয় তুই বুঝবি? দুপুরে যে রোজ সাঁতার কেটে পুকুরের এপার থেকে ওপার যাই আর আসি তাতে কি লাভ হয় তুই কিছু বুঝবি? তুই বুঝতে না পারলেও লাভ হয়। একে এক্সারসাইজ বলে। মানুষ হতে গেলে এসব দরকার। বুঝলি কিছু???
ঘোড়া জলের মতন বুঝে যায়। বাধা মুখে হুহুহুহুহুহু করে।

মানুষঃ- তোর স্বভাব খুব খারাপ। তুই নির্ঘাত জিজ্ঞেস করবি কতক্ষণ দৌড়াতে হবে? সেটা এখন তুই নিজে ঠিক করতে পারবি না। আমি যেমন বলব তেমন দৌড়াবি। যখন বোঝার মতন জ্ঞান হবে তখন নিজেই ঠিক করবি। আর শোন, মাঝে মাঝে তোকে আমি চাবুক মারব। মানুষ হতে গেলে এটা লাগে। আমাকে মানুষ করার সময় আমার গুরুও মারত। মাথায় ঢুকেছে???
ঘোড়া দৌড়াতে দৌড়াতে বাঁধা মুখে হুঁহুঁহুঁ করে।



শেষ দৃশ্যঃ-
অনেক বছর কেটে গেছে। ঘোড়ার একটা বৌ জোগাড় হয়েছে। তাকেও একই পদ্ধতিতে শিক্ষা দিয়ে প্রায় মানুষ করে ফেলা গেছে। দুজনে মিলে এখন একটা গাড়ি চালায়। তাদের কয়েকটা ছানাপোনাও হয়েছে।

মানুষ হবার পথেও তারা অনেক দূর এগিয়েছে। তারা এখন খালিগায়ে থাকেনা। চলার সময় মাটিতে পা ঠেকে না। তাদের খাবার মুখের সামনে এসে যায়। পাকা বাড়িতে তারা বাস করে। রাত্রে বাঘ সিংহ ইত্যাদির ভয় থাকেনা। জঙ্গলে মানুষ যা যা কথা দিয়েছিল তার কোনোটাই মিথ্যা হয়নি। তার উপর তারা এখন গাড়ি চালানো শিখছে। তাদের ছানাপোনারাও মানুষ হওয়ার সাধনায় বেদম পরিশ্রম শুরু করেছে। ছানারা শুনেছে জঙ্গল বলে একটা যায়গা আছে, যেখানে কেউ খাবার এনে দেয় না। বরং বাঘ এসে খেয়ে ফেলতে পারে। "মালিক" তাদের পূর্বজদের নিরাপদে রাখার জন্যই জঙ্গল থেকে বের করে এনেছেন। তারা কোনোদিন জঙ্গল দেখেনি, দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই। মালিক বলেছেন জঙ্গল খুব খারাপ জায়গা। কেউ যদি "মালিক" এর উপর বিশ্বাস না রাখে, তাঁর কথামত মানুষ হবার চেষ্টা না করে তবে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসা হবে। ছানারা শুনে ভয় পায়। তারা প্রতিজ্ঞা করেছে যতদিন না "মানুষ হতে পারছে ততদিন চেষ্টা চালিয়েই যাবে। তাই মানুষ হবার জন্য বাপ-মায়ের চেয়ে তারা অনেক বেশি পরিশ্রম করে। ছেলেবেলা থেকে শিক্ষা পেয়ে তারা বাপ মায়ের চেয়েও বড় মাপের মানুষ হবে বলেই সবার ধারণা।

কেবল একটা দুঃখ এখনো বাকি। কোন রাস্তায় কখন কতদূর চলতে হবে সেইটা তারা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তাদের বাপ-মায়েরও সে বিদ্যা এখনো হয়নাই। আসুন সকলে প্রার্থনা করি তারা যেন "মালিক" এর উপর বিশ্বাস না হারায়। তারা সবাই মানুষ হোক।

৩৫টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×