somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে একটি কাল্পনিক ভালোবাসার গল্প

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. সাবিনা বসার ঘরে অপেক্ষায় আছে। আক্ষরিক অর্থেই সে কান পেতে আছে কখন কলিংবেলটা বেঁজে উঠবে, রফিক বাসায় ফিরবে। তার সময় কাটছেনা, অপেক্ষার মুহুর্তগুলো অসহ্য মনে হচ্ছে। বাসায় কেউ নেই, সে, এমনকি রফিকও জানে এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর আসবেনা।

২. - সাবিনা, সাবিনা! কোথায় গেলি?
- চাচা আসছি, এক মিনিট।
- গ্রাম থেকে ফোন এসেছে বাবা খুব অসুস্থ্য। আমি আর তোর চাচী ফরিদপুর যাচ্ছি। রহিমার মা সেই যে গেলো আর এলোনা। এদিকটা তুই-ই দেখিস।

হ্যা, সাবিনা এ বাড়ির প্রায় সবকিছুই দেখে। আদিল চাচা তার আপন কেউ নয়, দূর সম্পর্কের চাচা। ঢাকায় নার্সিং পড়তে এসে সে তাদের বাসায় উঠেছিল। তারপর নার্সিং কোর্স শেষ হয়েছে, সে নার্স হিসেবে যোগও দিয়েছে একটা হাসপাতালে। বাবা-মা না থাকায় সম্ভবত বিয়ের আগে তার আর এই ঠিকানা বদলের কোন সম্ভবনা নেই। এমন নয় যে সে এখানে একদম "ফাও" থাকছে। বাসার টুকটাক থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই সে নিজে করে। ছুটা বুয়া রহিমার মা শুধু একবেলা আসে, দূপুরে। তাই ঘর কন্যার বেশিরভাগ কাজ সাবিনাকেই করতে হয়।

৩. এইডস রোগের নাম সাবিনা অনেক শুনেছে, বইয়ে পড়েছে। গ্রামে তাদের বাড়িতে টিভি ছিল ভাইয়ের ঘরে। ভাবীর সাথে তার সম্পর্ক ছিল বেশ খারাপ, ভালোমাত্রায় খারাপ। তাই বাড়ির ১৪ ইন্চি নতুন কেনা রঙীন টেলিভিশনটা তার দেখার সুযোগ হত কালেভদ্রে। কিন্তু ঢাকায় আসার পর সিনেমা, টিভির অ্যাড মিলিয়ে "এইডস" কি জিনিস সে জেনেছে ভালোমতই। নার্সিং কোর্স করতে গিয়ে এই জানার পরিধি আরো বেড়েছে, সরাসরি এইডস রোগীর দেখভালও করতে হয়েছে। এইতো মাস ছয়েক আগে এইচআইভি পজিটিভ এক ভদ্রমহিলা তাদের হাসপাতালেই মারা গেলেন।

৪. সাবিনা যখন প্রথম ঢাকায় আসে তখন তার জন্য মনে হয়েছিল এটা একটা আশির্বাদ। ভাই আর ভাইয়ের বউ তার উপর শারীরিক অত্যাচার করতো এমন নয়, কিন্তু তারা আপনও ছিলনা। আদিল চাচা আর চাচী তাকে কখনো কষ্ট দেননি, ছোট নজরে দেখেছেন এমনও নয়। তারা তাকে ভালোবাসেন - এটা বলাও ভুল হবেনা। আরো একজন তাকে ভালোবেসেছিল ঢাকায়; রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আধুনিক ছেলে। প্রথমে তাদের ভেতর দূরত্ব ছিল। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরে দূরত্ব কমে আসে। বছর ঘুরতেই তাদের দুরত্ব কমে আসার মাত্রা ভয়ঙকরভাবে বেড়ে যায়। তখন রফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। তারা দুজনেই কাছে আসার, হ্যা, ভালোবাসার অনেক সময় ও সুযোগ পেয়েছে। রফিক তাকে ভালোবাসতো!

৫. রফিকের পড়া শেষ হলো। চাকুরী পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হলোনা। সাবিনা তখন স্বপ্ন বুঁনছে, সংসারের। একদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে কি মনে করে সাবিনা গিয়েছে চাচীর ঘরের দিকে। রফিক চাচীর সাথে কথা বলছে। সে ঘরে ঢুকবে ভাবছে এমন সময় থমকে দাঁড়ালো।

- হ্যা, মা তোমরা যখন চাইছো বিয়ে করবো, আপত্তি থাকবে কেন?
- তোর কোন পছন্দ টছন্দ আছে কিনা! তোর বাবা বলছিলো...

সাবিনার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তখন। ওখান থেকে চলে আসতে পা সরছিলোনা। এভাবে লুকিয়ে কারো কথা শোনা ঠিক না। তবু এ তো অন্য কারো কথা। এ তো তারই ভবিষ্যতের কথা!

- না, মা আমার কোন পছন্দ নেই। তোমরা মেয়ে দ্যাখো...

সাবিনার পৃথিবী কেঁপে উঠলো। না, সে ভুল শুনেছে। এ হতে পারেনা। না!!

৬. সেদিন চাচা-চাচী গেছেন মার্কেটে। বাসার বাজার সপ্তাহে একবার নিজের হাতে করতে পছন্দ করেন আদিল চাচা। গাড়ি নিয়ে চলে যান দুজনে মোহাম্মদপুর মার্কেটে।

- রফিক...
- হুম!
- চাচীকে আমাদের কথা বললেনা কেন?

সাবিনার চোখে জল, গলা কেঁপে উঠে। রফিক পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে সাবিনার দিকে, জড়িয়ে ধরে আলতো করে। শরীরে চাপ বাড়ে সাবিনার। সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু...

রফিক হাপাচ্ছে, তার সারা শরীরে ঘাম। সে কাপড় গোছাতে গোছাতে বলে-

- খবরদার কাউকে বলবেনা। আর বললে তোমারই অপমান। তুমি কি ভেবেছো মা বাবা তোমাকে মেনে নেবে?
- না নিক। তুমি বলতে পারতে।
- আমরা একজন আরেকজনকে শুধু কিছু ভালোসময় দিয়েছি। এতে দোষ কোথায়। চাইলে সামনের দিনেও তো তোমাকে আমি পাবোই।

চোখ মুছতে মুছতে শরীরের কাঁপুনী থামাতে চায় সাবিনা। তার সারা শরীর ঘৃণায় রী রী করে উঠছে। সে অপবিত্র। রফিক বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে।

৭. - আপনার সাথে কেউ এসেছেন?
- না!
- প্লিজ একটু শান্ত হয়ে বসুন। পজিটিভ। ইউ আর সারটেনলি এইচআইভি পজিটিভ। কিভাবে হলো বলতে পারেন?

না, ডাক্তারকে সাবিনা কিছুই বলেনি। তার নাম ঠিকানা সে সবই ভুল দিয়েছিল। এইচআইভিতে মারা যাওয়া সেই রোগি আর তার শরীর থেকে নেয়া এক সিরিন্জ রক্তের কথা ডাক্তারকে বলার কোন মানে নেই।

৮. সাবিনা অপেক্ষা করছে রফিকের জন্য। তার মুখে এক টুকরো হাসি...
৩৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×