somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর আমি আর তুমি

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাটাবনের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে রিশাদ।টিউশনি আজিমপুরে।দ্রুত গতিতে হেটে যাচ্ছে।সামান্য দেরিতে ছাত্রীর মায়ের আলকাতরা সদৃশ মুখ দেখতে ভাল লাগেনা।নিজের হাতখরচ আর বাসা থেকে নেয়ার অবস্থা নেই রিশাদের।আত্নসম্মানটাই এখন বড় অবলম্বন।ওদিকে বিসিএস র কোচিং ও করতে হচ্ছে।মামা খালুর জোর নেই।বিদ্যার জোর ই ভরসা।তাই দুটো টিউশনি এখন ভরসা।অবশ্য আর একটি প্রয়োজন ও আছে।তিথি।প্রেমিকা বললে ভুল ই হবে।রিশাদের জীবনের উত্থান পতনের সাক্ষী।অবশ্য রিশাদের ইচ্ছা ছিলনা মধ্যবিত্ত দশায় তিথিকে আটকে রাখতে।বিত্তের আচরে আটকে থাকা মেয়েটিকে শূন্যতায় দাড় করিয়ে বিষিয়ে তুলতে চায়নি রিশাদ।কিন্তু তিথির আকর্ষণ কে দূরে রাখতে পারেনি।বরং তিথি বিত্তের মোহে মোহগ্রস্ত ছিলনা বলেই রিশাদের ব্যক্তিস্বত্তাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।এবার টিউশনির বেতন পেয়েই একটা জামদানি দেয়ার ইচ্ছা।তিথির অনেক পছন্দের একটা জিনিস দেয়ার ইচ্ছা।গত দুই বছরে কিছু দেয়া হয়নি মেয়েটাকে।অথচ এই সেদিন অনার্সের ফর্ম ফিলাপের টাকা যখন টিঊশনি টাকা যখন ছিলনা তখন তিথি ওর জমানো টাকাগুলো তুলে দিয়েছিল।এসব ভাবতে ভাবতে ছাত্রীর বাসায় চলে এল রিশাদ।ভাবল এখনো পাচদিন বাকি।আজ টাকাটা চেই নিতে হবে।টানা দু ঘন্টা পড়িয়ে যখন একটু নিঃশ্বাস নিল ভাবল ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করা দরকার ওর মা কোথায়।জিজ্ঞাসা করতেই জা জানল তা হল কি যেম কাজে উনি চট্টগ্রাম গেছেন।মুখ টা শুকিয়ে গেল রিশাদের।সংগে সংগে উঠে চলে এল।পিছন থেকে ছাত্রী কিছু একটা বললেও সেটা আর কানে গেলনা রিশাদের।রমনা পার্কের বেঞ্চ গুলোতে শুয়ে রইল রিশাদ।সবচেয়ে ব্যর্থ মানূষদের একজন মনে হচ্ছে ওর।আবেগগুলোকে এভাবে হারিয়ে দেয়ার মানুষ ও না।অন্তত তিথিকে এই একটি দিন উপহার দিতে পারবেনা ভাবতেই নিজেকে খুব ছোট মনে হল।এদিকে প্যান্টের পকেটে ভাইব্রেশনে কেপে উঠল রিশাদের ফোন।তিথি ছাড়া আর কেউ ফোন করেনি সেটা ও জানে।কিন্তু আবার সেই কষ্ট।একবার ধরবে না ভেবেও ধরল।শুরু হয়ে গেল।তিথির জিজ্ঞাসাবাদ।কি করছা,কোথায়,কখন আসবে।রিশাদের মনে হয় তিথির যোগ্য ও নয়।কিন্তু তিথিকে এটা কে বোঝাবে।দশটায় হলে এসে পৌছুল রিশাদ।রুমমেট দিদার ওর অত্যন্ত কাছের বন্ধু।রিশাদের শুকনো মুখ দেখে কিছু না বলে ঘুমানোর ভান করে থাকল।ওদের আর এক রুমমেট চলে যাওয়ার পর রিশাদকে জিজ্ঞাসা করলে রিশাদ এড়িয়ে গেল ব্যাপারটা।ও জানে বিষয়টা দিদার বিষয়টা জানলে টাকা ধার করে হলেও রিশাদকে এনে দিবে।কিন্তু দিদারকে বিব্রত করতে চায়না রিশাদ।কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল রিশাদ।সকালে প্রচণ্ড জ্বরে কাপতে থাকা রিশাদকে দেখে ভয় পেয়ে গেল দিদার।এতদিনে যাকে অসুস্থ অজুহাতে ক্লাস বাদ দেয়নি তার জ্বর আসাটা অদ্ভুত। তাও ক্লাসে গেল দিদার।আর এর মধ্যে পড়ে থাকল রিশাদ।দুটো দিন এভাবেই চলে গেল রিশাদের।এদিকে দিদারর কাছ থেকে তিথি রিশাদের জ্বরের খবর জেনে ব্যকুল হয়ে উঠল।রিশাদের পছন্দের পাঞ্জাবিটা গিফট করে ওর সাথে তৃতীয় বছ্রে পা দেয়ার দিনটা কাটানোর ওর অনেক ইচ্ছা।জ্বর আসা যাওয়া করতে থাকল।শরীরটা ক্রমেই খারাপ হতে থাকল।তিথিও অস্থির হয়ে উঠল।আজ ৭ আগস্ট।তিথি আর রিশাদের ভালবাসার তিন বছর পূর্ণ হল।দিনটা অন্যরকম হত যদি রিশাদ সুস্থ থাকত।কিন্তু রিশাদের কাছে আজ না থাকতে পারায় তিথির খুব অস্থির লাগছে।।সুযোগ।হলে নিজে পাশে।বসে রিশাদকে সুস্থ করে তুলত।তিথি তার মায়ের সাথে সব শেয়ার করে।রিশাদের বিষয়টাও।তাই মেয়ের অস্থিরতা তিনি বুঝতে পারলেন।ওদিকে বেচারা রিশাদ অসুস্থ অবস্থায় ভাবতে থাকতে থাকল তিথিত কথা।মেয়েটা কত আশা করেছিল আজ ওকে নিয়ে ঘুরবে কিন্তু কিসের কি।এই ভাবতে ভাবতে যখন ক্লান্ত রিশাদ মোবাইলের ভাইব্রেশন।তিথির ফোন ভেবে ধরলনা।মেয়েটাকে কি বলবে এই ভাবনায় ফোন ধরা হলনা।তিনবারের সময় স্ক্রিন না দেখেইরিসিভ করেই কথা বলা শুরু করল।তিথি আমি অসুস্থ, এখন বিরক্ত করনা।এ বলে ফোন রেখে দিল। আবার ফোন রেখেই ভাইব্রেশন দেখে আবার তিথি ভেবে ঝাড়ি দিবে ভাবতেই ছাত্রী বলল স্যার আজ তো আমরা বাইরে যাচ্ছি আপনার বেতন টা যদি নিয়ে যান।কানে কি শুনছে রিশাদ আদৌ তা বিশ্বাস করতে পারছেনা।যার জন্য এত প্রতীক্ষা তাকে পাওয়া যাবে,তিথিকে একটা জামদানি তে দেখার অনেক শখ সাথে খোওয়ায় রজনীগন্ধা। এক নিঃস্বাসে উড়ে গেল রিশাদ।ওকে দেখে দিদার বিশ্বাস করতেই পারছিলনা রিশাদ সুস্থ।অতঃপর এক নিঃশ্বাসে ছাত্রীর বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে সোজা মার্কেটে নিজে কখনোই শাড়ি কিনবে এটা ভাবতে পারছেনা রিশাদ।।অনেক ভেবে তিথির জন্য শাড়িটা নিয়েই ওর বাসার নিচে হাজির রিশাদ।ফোন দিয়ে নিচে আসতে বলল রিশাদ তিথিকে।অসুস্থ রিশাদের এতদূর আসা তিথিকে উদগ্রীব করলেও ওর হতাশ মন্টাকে অনেকটাই আশান্বিত করেছিল।একবার দেখতে পাওয়াই তো অনেক।নিচে আসাতেই রিশাদের জন্য কেনা পাঞ্জাবিটা নিয়ে বেরুল তিথি।আজ না হলেই অন্যদিন রিশাদ এটা পড়বে এই আশায়।বেরুতেই রিশাদের ক্লিষ্টকায় চেহারা দেখে তিথি কিছু বলবে তার আগেই এক নিঃশ্বাসে বলল তিথি এই শাড়িটা পড়ে আজ বিকালে ৪ তার দিকে টিএসসিতে।এই বলে চলে গেল রিশাদ।রিশাদ হলে এসে ক নিঃশ্বাসে হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে টিএসসির পথে বেরুল।বন্ধু দিদারকে দোস্ত যাচ্ছি বলেই বেরুল।এরপরে তিথির দেয়া সেই পাঞ্জাবি পড়েই বেরুল রিশাদ।।রজনীগন্ধা কিনতে শাহবাগে যেতেই রাস্তা পার হতেই সামান্য আর্তনাদ।তারপর একটি তরুনীর এক জামদানিতেই অনেকগুলো বছর পার করে দেয়া, আইসিউতে নিথর রিশাদের জেগে উঠার প্রতীক্ষায়,,কেটে গেল অনন্তকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×