দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলংকা শুনলে আমাদের মনে অনেকগুলো ছবি ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার মত মার্জিত একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দৃঢ়চেতা
রাষ্ট্রপ্রধানের ছোবী,কিংবা শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের ইতিহাস কিংবা অরবিন্দ ডি সিলভা,অরজুনা রানাতুঙ্গার হাতে বিশ্বকাপের ছবি।মুদ্রার
ওপিঠে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণদের এলটিটিই এর ইতিহাস জ্বলজ্বলে থাকলেও ভারত মহাসাগরের ছিমছাম পরিকল্পিত একটি দেশের
প্রতিচ্ছ্ববি আমাদের কাছে মুখ্য থাকত।
শ্রীলংকা একটি দ্বীপ দেশ হিসেবে খুব উন্নত কিংবা অস্থিতিশীল বা পুজিবাদী গোষ্ঠীর বিবেচনা লিস্টে কখনোই স্থান করে নিতে পারেনি যা
দক্ষিণ এশিয়ার ভারর,পাকিস্তান করতে সক্ষম হয়েছিল।তাই বলে অনুন্নত কিংবা সাহায্য নির্ভর দেশ কিংবা উন্নয়নে ভরপুর কোনটাই
শ্রীলঙ্কায় ডানা মেলেনি সেভাবে।
চীনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সাহায্য ও সহযোগিতায় গভীর সমুদ্র বন্দর তথা এসব যখন বিভিন্ন দক্ষিণ এশীয় দেশের প্রতিশব্দ হিসেবে
যুক্ত হতে শুরু করল তখনো এঈ দেশটির পালকে সেরকম কিছু যুক্ত হয়নি। ২০১৯ এ বিসিএসের প্রস্তুতির এক পর্যায় জানলাম হাম্বানটোটা
বন্দর লীজ নিয়েছে চীন এবং তাও প্রায় শত বছরের জন্য। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বেশ অনেকদিন ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য দেয়ার পাশাপাশি বন্দরাধুনিকীকায়ণের উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে এই উন্নয়নের কথা খুব ধনাত্নকভাবে নেয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হলেও উচ্চসুদের যাতাকলে পড়ে তা মোকাবেলার মত
সক্ষমতা কতটুকু আছে তা হয়ত অনেক দেশ ভুলে যায়। ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে জনগণের কাছে উন্নয়নের
প্রচারণা মুখ্য হয়ে ওঠে।
আর এই সবকিছু আবর্তিত হয়েছিল মাহিন্দর রাজাপাকসে কে কেন্দ্র করে।তামিল নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে প্রথম দফা রাজাপাকসে সরকার
নাগরিকদের যে আস্থা অর্জন করেছিল, গোতাবায়া রাজাপাকসে যেভাবে জাতীয় নায়কে পরিণত হয়েছিল তার সুদ সমেত আসল
পরিশোধ হল এবার। কুমারাতুঙ্গা যুগ পরবর্তী শ্রীলংকা যখন হতে পারত দক্ষিণ এশিয়ার আইডল ঠিক তখনই নায়ক থেকে ভিলেনে
পরিণত হতে হল রাজাপাকসে পরিবারকে। উন্নয়নের ফুলঝুড়িতে রাতারাতি স্বর্গে পরিণত করার যে এজেন্ডা জনগণের মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশ
করেছিল তার ভেতরে ফাপা চাপাবাজি আর ঋণের বোঝা ছাড় আর কিছুই যে নেই সেটি জনগণ উপলব্ধি করলেও তা অনেক দেরিতেই
হয়ে গেল।
কারফিউময় দ্বীপদেশটির উন্নয়ন সমেত গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পাড়ি জমালেও আদি শ্রীলংকা জনগণেরই থাকল।প্রাপ্তি বা শিক্ষা এটাই যে গণতন্ত্র বিহীন উন্নয়ন বিষের নামান্তর।
প্রিয় দক্ষিণ এশিয়া, সেই বিষ থেকে মুক্ত থাকুক,এটি প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৩