অতিদরিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বত্তেও যারা ২০১১ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তাদেরকে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান করলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক । তিনি তার বক্তব্যে বলেন, যে জাতি মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে পারে না, সে জাতি কখনো সামনে অগ্রসর হতে পারে না। মেধাবীরাই জাতির প্রেরণার উৎস। দারিদ্র বা শারিরিক কোন অক্ষমতা কারো জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে না। আজকের উপস্থিত এই অদম্য মেধাবীরা তাই প্রমান করেছে।
শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মো. দেলাওয়ার হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিসিএসআইআরের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চল্লিশ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো আমরা রাজনৈতিক হানাহানিতে লিপ্ত। গড়ে উঠেনি জাতীয় ঐক্য। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হওয়ার পরও আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছিনা। ১৬ কোটি মানুষকে নেতৃত্ব দেয়ার মত সৎ ও যোগ্য নেতার আজও বড় অভাব। নেতৃত্বের এই সংকট পূরণে মেধাবীদের সাথে নিয়ে ছাত্রশিবিরকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে অনেক সমস্যা থাকলেও আমি নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। ছাত্রশিবির যেভাবে ছাত্রদের সততা, নৈতিকতা ও যোগ্যতার বিকাশে সহযোগিতা করছে তা সত্যিই আমাদেরকে আশার আলো দেখায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য প্রয়োজন সুন্দর আদর্শ। মহানবী (সাঃ) সে আদর্শের প্রাণপুরুষ। তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ রাষ্ট্রের নমুনা আমাদের সামনে রেখে গেছেন। আজকের বিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়ে গেলেও সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বাড়ছেই। নৈতিকতার অভাবেই আজ বিশ্বে এত যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের ছড়াছড়ি। অন্যায়, মাদকতা, অশ্লিলতায় যুবসমাজ ভেসে যাচ্ছে। সকল অন্যায়-অনাচার নির্মূল করে সুন্দর-শান্তিময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নমুনা রাসুল (সাঃ) অনেক আগেই দেখিয়ে গেছেন। রাসুল (সাঃ) এর দেখানো পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মেধাবীদের ভাল রেজাল্ট করার পেছনে তাদের অভিভাববক ও শিক্ষকরা বিশেষ অবদান রেখেছেন। অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজকে শুধু ভাল রেজাল্ট নয়, ছাত্রদেরকে নৈতিক দিক থেকেও গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রশিবিরকেও এসএসসি-দাখিল থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের মেধাবীদের সহায়তায় আরো বেশী এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, মেধাবীদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই ছাত্রশিবির অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। চলতি বছরে শিবির সারাদেশে শতাধিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। তন্মধ্যে এই প্রোগ্রাম হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এখানে যারা এসেছে আর্তিক ও শারিরিক কোন প্রতিকুলতাই তাদেরকে জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এজন্যই তারা অদম্য মেধাবী। সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের পাশে না থাকলেও ছাত্রশিবির সবসময় তাদের পাশে থাকবে। ভবিষ্যতেও ছাত্রশিবির শিক্ষার ক্ষেত্রে সকল ধরণের সহযোগিতা করে যাবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তরে ছাত্রদের সহায়তায় শিবির তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য যে, নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের নিয়েই ছাত্রশিবির প্রতি বছর অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদানের আয়োজন করে। এবারে সংবর্ধিত ছাত্রদের মাঝে বক্তব্য রাখেন বগুড়ার রাশিদুল ইসলাম ও আশারাফুজ্জামান, পটুয়াখালীর ফাল্গুনী সাহা, বরিশালের শিলা আক্তার এবং রংপুরের জান্নাতুল ফেরদাউস। তারা বক্তব্যে আবেগ জড়িত কণ্ঠে তাদের পড়ালেখার পিছনে নানাবিধ আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে। তাদেরকে সংবর্ধনা দেয়ায় ও পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্রশিবিরকে ধন্যবাদ জানায়। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জের রাশেদা আলম। সংবর্ধনায় মোট ৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ক্রেষ্ট ও পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




