রাত বারোটা।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর মুন্সিপাড়াকে ভয়ংকর লাগছে। হুট হাট ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়। রিকশা ছুটে যায় ভুতের মতো। যারা নিতান্ত এ পথ বাছে না রাতে, রিকশা ছুটে যাওয়ার সময় আঁতকে ওঠে। যেনো কিছু গিলে খাবে।
সেই মুন্সিপাড়ায়, কিছু চলছে কদিন ধরে। এমনকি যারা উগ্র স্বভাবের, তারা পর্যন্ত নরম হয়ে চলছে। অদ্ভুতভাবে কমে গেছে অপরাধ। রাতে অদ্ভুত খাঁ খাঁ নিরবতা। ভর দুপুরেও কেউ বের হলে গা ছমছমে ভাব।
এর পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। মানে ওয়াসার এই খোঁড়াখুড়ি না হলেও চলতো। ক্ষেত্রবিশেষে অবশ্য দায়টা তাদের দেয়া যায় না। উন্নয়নে যদি নাই বা কাজে লাগে তাহলে কিসের উন্নয়ন?
ঘটনাটা প্রথমে ঘটলো আবদুল হক সাহেবের সাথে। সন্ধ্যা পেরুতেই অফিস পাড়া থেকে বেরিয়ে পড়েন। বাজার ধরে ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে আটটা। গলির মুখে ঢুকতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে কে যেনো বেরিয়ে আসছে। কালো কুচকুচে, লোমশ। হাতের সব নখ বিকট আকারের। আড়াল থেকে দেখতে লাগলেন সব কিছু। কিছুক্ষণের ভেতর প্রাণীটা মিলিয়ে গেলো।
ঘরে ঢুকে জোরে জোরে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলেন। স্ত্রী সন্তান দৌড়ে এলো।
-বাবা কি হয়েছে?
-এই এমন করছো কেনো? কি হয়েছে?
-না না। কিছু না। ঘাম দিয়ে গেলো একটা তার।
রাতে টয়লেটে ঢুকতে যাবেন এমন সময় চোখ গেলো ড্রয়িংরুম এর দিকে। ওটা কি?! ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি। দেখলেন গাছ বেয়ে পাশের ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে প্রাণীটা। ওমা ঢুকেই সাধারণ মানুষের চেহারা। ওই বাসার তায়িফের চেহারা একদম।
সকালে তড়িঘড়ি করে চলে গেলেন ডিপিডি(ঢাকা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট) প্রধান কার্যালয়ে। বসিয়ে দেয়া হলো জেটস্কেটার সাব্বিরের সামনে।
-কি দেখলেন?
-বারান্দা গলে একদম রক্ত মাংসের মানুষ। গায়ের রং কালো, লোমশ, কুচকুচে কালো। দাতাল, লম্বা নখ। পাতাল থেকে উঠে আসছে।
রাতটা মুন্সিপাড়ার অনেক ভয়াবহ রকমের একা। সকালে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যেনো সবাই সন্ধ্যা সাতটার ভেতর বাসায় ঢুকে যায়। চারজন বি-গ্রেড অফিসার পাঠানো হয়েছে। চার গলিতে দাঁড়িয়েছে তারা। সারভেইল্যান্স সিসি লাগানো হয়েছে।
আটটা বাজতেই খুট করে স্ক্রীণের সব গুলো পর্দা কেঁপে উঠলো। হঠাৎ করে একটা তরুণ বয়সী ছেলেকে দেখা গেলো। কানে হেডফোন। একটা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।
-এই এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?
অফিসারের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি বলে উঠলো,
-টিউশনি শেষ করতে দেরি হয়ে গেছে অফিসার।
-চলো এগিয়ে দেই।
এমন সময় ম্যানহোলের ঢাকনা ঘর ঘর করে খোলার আওয়াজ এলো।
দুজনেই তাকালো।
-একি এযে বেরিয়ে পড়ছে।
কালো কুচকুচে চেহারা।
-ক্কে... কে তুমি?!
-কাম্পা... কাম্পা। বিকট চেহারা বেরিয়ে পড়লো তার!
ঠাশ করে গুলি বেরিয়ে পড়লো অফিসারের নল থেকে। ছেলেটি দৌড়ে ততোক্ষণে মুন্সিপাড়া পেরিয়ে বাসে উঠে গেছে বোধহয়।
খামচে ধরে অফিসারের ঘাড় ভাংতে ভাংতে ঢলে পড়লো প্রাণীটি।
-কাম্পারা আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২১