-দীপ্ত এই দীপ্ত!
তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া দীপ্তর আজ হলো টা কি? অবশ্য যদিও বলা হচ্ছে তার পরীক্ষা নেই কিছু নেই, এই শীতের কনকনে সময়ে তবুও সে কাজ করে যাচ্ছে তার ছোট একটি রুমে। কি করছে সে?
মাইক্রো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ট্রান্সমিশন নিয়ে প্রজেক্টে কাজ করছে।
-দীপ্ত!
-আরে শর্মি কি শুরু করলে?!
-আরে সেই আযান দেয়ার পর থেকে ডাকছি, কি করছো রুমে বসে?
-প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি তো বাপু।
-এখনই এই অবস্থা, বিয়ের পর তো তোমার মেকানিক্যাল ডিভাইস এর সাথে ডেটিং করবা!
শর্মি দীপ্তের প্রেমিকা। ভার্সিটির প্রথম বর্ষে উঠেই চোখে পড়ে দীপ্তকে। ব্যস কিছুদিনের কথাবার্তায় প্রেম তারপর দুই ঘরের সম্মতি। অবশ্য দীপ্ত ক্ষ্যাপাটে গোছের। কাজে ব্যস্ত থাকে। শর্মি অতোটা না। তাই দীপ্তকে ঘাটায় না। আবার দীপ্ত কাজ শেষে ঘরের লক্ষী ছেলে। শর্মিকে টাইম দেয়। যেমন গতকাল রাতেই শর্মির কাছে ১০ পদের ভর্তা খাওয়ার আবদার করেছে। ব্যাস অমনি শর্মি সক্কাল সক্কাল হাজির।
খাওয়া শেষ হতেই আবার গিয়ে ঢুকলো রুমে। ট্রান্সমিশন চিপটা বানিয়ে ফেললেই সে আবিষ্কারের ইতিহাসে চমক তৈরি করতে পারবে। জিনিসটা গোল। হাতের তালুতে রাখা যায়। সে একটা ব্যান্ড এটাচ করে রেখেছে যাতে হাত থেকে পড়ে না যায়। হাত থেকে খুলে ছোট্ট সার্কিট জুড়লো জিনিসটাতে। এভাবে ঘন্টা দুয়েক ডেভেলপ করলো ডিভাইসটাকে। যখন বুঝলো সন্তুষ্ট সে ততক্ষণে একজোড়া ডিভাইস তৈরি হয়ে গেছে। তখন প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। ছাদে কিছুক্ষণ সময় দিলো শর্মিকে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই নেমে আসলো সে। শর্মিকে বাসায় দিয়ে আসতে হবে।
-মা আসি আজ। আগামী সপ্তাহে চলে আসবো আবার।
-মারে ইচ্ছে করছে তোমাকে রেখেই দিই জানো। তুমি না থাকলে ঘরটা ফাকা ফাকা লাগে।
-আহ কি শুরু করলে তোমরা? আর তো মাত্র দেড় বছর। এরপর না হয়.... দীপ্ত লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
-এরপর কিরে ভাইয়া? দীপ্তর বোন আরিশা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে।
-তোর বিয়া হারামজাদী।
-দুরে যা!
হো হো করে সবাই হেসে উঠলো।
গলি ছেড়ে যখন ব্যস্ত আর বড় রাস্তায় রিকশাটা এলো ঠিক তখনই হই হই আওয়াজ। শর্মি ভয় পেয়ে গেলো।
-কি হলো?
-সন্ধ্যার সময় তো জ্যাম লাগারই কথা কিন্তু এমন আওয়াজ হচ্ছে কেনো বুঝতে পারছিনা।
দীপ্ত পড়ে গেছে টেনশনে। অবশ্য হৈচৈ নিয়ে না। তার জোড়া ওয়েভ ট্রান্সফরমেশনাল ডিভাইস নিয়ে। জিনিসটা তার আজ রাতের ভেতর পৌঁছে দেয়ার কথা। ব্যাগের দিকে বারবার তাকাতে লাগলো। এমন সময় প্রথম চিৎকারটা কানে এলো।
-ওরে আল্লাহ বিশাল জানোয়ার! বাঁচাও!
দ্রুত ব্যাগ থেকে নিয়ে হাতে পড়লো জোড়া ডিভাইসটা।
-জান কোথায় যাও?
-আমি এই একটু সামনে থেকে আসছি।
পথের মাঝখানে বিশাল শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক লোক। বিশ্রী বদখত তার। সরীসৃপের মতো পিঠে শিরদাঁড়া জুড়ে বড় বড় নখের মতো। যেমনটা দেখা যায় তৃণভোজি ছোট ডায়নোসরের পিঠে। ওর নাম শ্বাপদ। এলাকার আতংক হিসেবে পরিচিত এই লোকের আসল নাম তরিকুল।
-সরে যাও পথের সামনে থেকে। জ্যাম বাধিয়ে মানুষকে আটকে রাখার মানে কি?
-আমি এই পথ থেকে সরবো না।
-তোমাকে সরতে হবে। না হলে আমি তোমাকে সরতে বাধ্য করবো।
-হাহাহা। সাহস থাকলে দেখাও।
দুহাতে ডিভাইস লাগিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো সামনের দিকে।
ব্লারপ! বিশাল তরঙ্গ প্রবাহের ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গেলো শ্বাপদ। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছে মিশু ওরফে বুমেরাং। মিশুকে সবাই চেনে অপরাধ দমনকারী ভিজিলেন্টি হিসেবে। অবশ্য পুলিশের সাথে সে কাজ করে না।
-কে তুমি। মুখোশে ঢাকা মুখ থেকে শব্দ বেরুলো মিশুর।
-আমি তরঙ্গমানব। হুড পরা অন্ধকারে ঢাকা দীপ্তর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কথাটা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৪