.. (মানলাম)- গৌতম ঘোষ ভালো মানের চলচ্চিত্রকার। গুটিকয় নির্মাণ তাইতো বলে। আর তার নির্মাণের হিড়িক এ পর্যায় এসে দু'ই বাঙলায় কতগুলো চক্ষুর আবদারও হয়ত মিটায়। ম্যালা গুনাগুন আছে/থাকতেই পারে। কলকব্জা নাড়ালে কতসব দৃশ্যের কারিগর তিনি। সেসব 'সিনেমা... নির্মাণ বিষয়ক, যন্ত্রের খুটিনাটি' আচ্ছা-সাচ্ছা সিনেমাঅলার/করিয়ের বিচারে কি হবে তা যেমন আন্দাজ করা যায়/যাচ্ছে, তেমনি এও অনুমেয় যারা শিল্প-সাহিত্যের নমুনা জীবন-যাপনে আঁকিবুকি করে, আর্ট-কালচার করে বেড়ায় তাদের বাকভঙ্গি/দৃষ্টিভঙ্গি/মননভঙ্গি- সর্বসাকুল্যে চিন্তন পদ্ধতির কাছে শেষ পর্যন্ত একজন চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ কোন কোন পরিমাপকে তুল্যমূল্যে গুরুত্ব পাবেন-। সাথে আছে অতিঅবশ্যই দু'বাঙলার অতি আদর-সমাদার পাওয়া ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এ মহাত্মাদের এই 'মনের মানুষ' রচনা ও নির্মানে বাঙ্গালি তথা দেশী মানুষের অর্জিত বিদেশী চোখে, আর বিদেশীদের চোখে 'লালন' নামক কোন এক জীবনচরিত কেমন দেখাচ্ছে, কি করম করে দেখতে শেখাচ্ছে, এবং গ্রহন করতে বলছে সে কারসাজিটা যদিবা কারো চোউক্ষে পড়ে তবে দেখা যাবে- দাদার দাদাঘিরি ফলানোর মুন্সিয়ানাটা বেশ প্রশংসা পবার যোগ্যতা রাখে! কিভাবে? এই ভাবে-
নিম্মেপ্রদত্ত...
'মনের মানুষ' নামক চলচ্চিত্রে লালন ফকিরের যে জীবন পদ্ধতির চর্চা ও তার সে জীবনের ভেতর দিয়ে যে দর্শন চর্চা- তাকে প্রস্ফুটিত করতে গিয়ে/ ঐ সব চোখের কাছে (মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, এবং... নিন্মবর্গ) হাজির-নাজির করতে গিয়ে পরিচালক গৌতম ঘোষ 'খানিকট...া কল্পনা করে/ধরে নিয়ে অর্থাৎ মনগড়া ভাবে' এবং 'অতীব চতুরতার সাথে' লালন চরিত্রের কেন্দ্র, তথা লালনের(তাহাদের) জীবন-দর্শনের 'বাঁচা-মরা, টিকে থাকা, পৃষ্ঠপোষকতায়'- 'তিল পরিমান ঘটনাকে তাল পরিমান করে', ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে রবীন্দ্রনাথের দাদা যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাথে দেখা হওয়া, মানে ঠাকুর পরিবারের সাথে- আবার শিল্পসাহিত্যের প্রভাবশালী পরিবারও বটে, সে জমিদার পরিবারের সাথে দেখা হওয়া, মানে জমিদারের সাথে দেখা হওয়া - যারা লালনকে, লালনের আখড়াকে তাদের জমিদারী তালুকের কর/খাজনা থেকে 'মওকুফ', এবং জমি 'দান' করে টিকিয়েছিল, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল- তৎঘটনাকেই আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সূত্রে/দৃশ্যে, গল্পের কেন্দ্র বানিয়ে, ইনিয়েবিনিয়ে এই বোঝালো যে- কলিকাইত্যা/পশ্চিম বঙ্গের জমিদার, ভালু জমিদার আরকি-, কিছুটা উদারপন্থি, সাহিত্য পৃষ্ঠপোষক, যারা আঠারো কি ঊনবিংশ শতকের তথাকথিত একটা রেনেসাঁয় উদার হয়েছেন, ইউরোপিয় উদারপন্থী ঐতিহ্য যাদের ভেতর ঢুকে গেছে বা যারা গ্রহন করেছে সেসব ক্ষয়িঞ্চু জমিদার, উঠতি উচ্চশ্রেণী বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের যে একটা সুদূর-কুদূর প্রসারী ফলাফল, সে ফলাফলের পাশাপাশি, সমান্তরালে- অসহিষ্ণুতা, জাতপাত হঠাতে, অসাম্যতার বিরুদ্ধে আরেকটা স্রোত, চোরা স্রোত চলছিল, মানে যা বিশেষ ভাবে প্রকাশ্য বা সমাদার, সমাঝদার দুনিয়ায়, রঙচঙয়ের কাছে পৌছাচ্ছে না, নাগাল পাচ্ছে না- কিন্তু যেখাটায় মুক্তচিন্তার অস্তিত্ব ছিল সে সব আউল-বাউল দশাকে, দর্শনকে মুক্তহস্তে দান করে টিকিয়ে, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল- কারা (?)- গৌতম, সুনীলের মতন মানবকূল যে বাটীতে থাকেন সে চিহূ- 'কলিকাত্তা'র অগ্রসর মানুষেরা !!!
(এসব বেশ বেশ রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক বিচারের গুরুত্ব রাখে, লালন কল্পিত কোন দেবদেবতা নয়, ইচ্ছা পূরণের কোন কাহীনিও নয়- যে তারে নিয়ে যেখানে সেখানে বসিয়ে, যা ইচ্ছে তাই বানিয়ে যাব। ক্ষেমতা দেখাবো। আমজনতা ঐ ঠাকুর বাড়ি কেন্দ্রিক সাক্ষাৎটাকে অনু কি পরমানু পরিমান তুল্যমুল্যে থেকে দেখে। শুধু রঙমাখিয়ে দেখার স্বভাব এই আমরা কেঁদো মধবিত্তের। কেননা, আমরা আমাদের মধ্যম/'মধ্য জাতের' মেরু রক্ষায় রবীবাবুদের সাথে যদি 'ফকির সাহেব'দের কে (সিনেমায় যতীন্দ্রনাথের মুখে লালন কে ফকির সাহেব সম্মোদন করা হয়) জড়ায়ে প্যাচায়ে, মিলেঝুলে রেখে দিতে পারি তো আমাদের আরো কতক দিন- দিনগুজরান সহজ হয়।)
এখন গৌতমেরে জিজ্ঞাসা করা দরকার, এ-লা তোয়ারে এমিক্কা গুদ্দা(সাহস) কে দিল?
উপরিক্ত এসব দিকউল্লেখ্যে অনেক অনেক এ দেশী আর্ট-কালচার করিয়ে কাকু/দাদুরাও বেখোশ হতে পারে। ঐ পশ্চিম পাড়াতো হবেই।
এই গেল আমার দৃষ্টিতে জরুরী একটা দিক, আরেকটা অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো লালন ফকিরের গান নিয়ে। সে বাহাস আজকের মতো তোলা থাকুক।
ভণিতা পর্ব : ক্ষমিবেন। এমন হুটহাট জুড়ে বসার জন্য। সিনেমাটা প্রথম দিনেই প্রথম শো দেখেছিলাম। হা দেখলাম। দেখার অধিক আমি আর উত্তীর্ণ হতে পারি নাই। যাহাকে আবার 'দেখা' বললে কর্তারা ক্ষেপে যাবার চান্স আছে। বলবে- মানে, তোমার তো চোক্ষুই নাই, ঠুলি খুলে আস। বলতে হবে দর্শন করলাম, বা আরো পৌরাণিক শব্দ জুড়াতে হবে। চাট্টিখানি কথা নয়, কলিকাইত্যা দাদারা বানিয়েছেন। তুচ্চ, সামান্য লোকে দেখে মাত্র। অভিজাত্যের ঠেলা থাকলে সেটা হয় দর্শন। আর্ট-কালচার করিয়ে-। কিন্তু আমার তো সেটা নাই...
এখন সে হলে বসে চটপট করাটা, মনে মনে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করাটা ভগবানের কল্যাণে/কৃপায় কিছুটা বলেকয়ে দিতে পারলাম। তবে নির্দিষ্ট করে ধরে ধরে বলা না, অনেক বিস্তর আলাপের ব্যপার-। আমি এখানে আমার হাল্কা মতামত জানালাম এই যা-। আরো কি যেন বলা বাকী, বা কথা গুলো আরো সহজে আরো কিছু দিকের সাথে যোগ-বিযোগ দিয়ে বলার ছিল। যাইহোক, হাতের কাছে বিড়ি নাই তাই আর ধৌজ্জও নাই। রস-কষ-যদু-মধুর ক্ষেতা পুড়ি।
পেন্নাম।
___________________________________________
আরো একটু যোগসূত্র উত্থাপন:
এক ঘোড়া রোগ, ব্লু ফ্লিম/বৈদেশী নাচন-কুদন দেখে দেখে স্বপ্নদোষে আক্রান্ত, ঘিলুতে ঘিলু না থেকে অন্যকিছুর তোড়জোড় করা মধ্যবিত্ত, প্রগতিশীল ভেকবাজ, অসাম্প্রদায়িক ভাব অর্জন করেছি এমন হাবভাব ধরা লুচ্চা, ভোগবাদী, বিজ্ঞাপনী, পন্যায়ন বিশ্বের রুচি সম্পন্ন শহুরে সমাজের গোপন চাহিদা। অথচ ভেংচা ধরার/দেখানোর বেলায় লালন'কে হাজির করে ছুতা খোঁজে। হতে চায় য়ূরোপীদের মতোন খোলামেলা কিন্তু মুখে বলার জো নাই তাই একে একে নানান গোপন অভিসন্ধি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ঠিক এ জায়গায় তাদের পিছিয়ে থাকাটাকে আস্ত সমাজের পিছিয়ে থাকা বলে চালিয়ে নেয়। তাই যৌনতাকে যথেচ্চার পদ্ধতিতে, য়ূরোপীয় ঢঙে-রঙে আমদানি করতে চায়। এ জায়গায় সচেতন ভাবে না হয়ে, মূর্খতা থেকে, অজ্ঞানতা থেকেও যদি হয় তবে মনে রাখতে হবে তাতেও এদের মাপ নেই। ধরে চড়াতে হবে। কেননা, এদের মগজে বৃটিশ এবং তৎপরবর্তি বিশ্বের গু হান্দাই গেছে, এবং সেটাতে তাদের লাজ লজ্জা নাই। । তো এদের যদি মানিয়া লই তবে- কার্যত পুজি'রই সেবা করা হবে। যেহেতু এদের খাছলত/এরা কাদের চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করে এসব আমরা বুঝি তবে এও বুঝবো- মোক্ষম কু-যুক্তি/পদ্ধতি হিসেবে লালনকে এ জায়গায় নাদান শ্রেণীর খাদ্য বানিয়ে গিলানো যায় এ চালাকী তারা জেনে ফেলেছে। । অতত্রব হা-হুতাশা জুড়ে দিয়ে লাভ নেই।
মজার কথা হচ্ছে লালন 'দাসী' বলতে কি বোঝালো সে ভাবের বলয় নষ্ট করে/ দাসী শব্দের চিহূকে, চিহূয়ক পদ্ধতিকে অন্য এঙ্গেলে/বিকৃত করে আমাদের পাঠ করাতে জোর করছে। (এ সব নিয়ে বিস্তর লেখালেখির ধান্ধায় আছি) এবং শেষতক নারীকে গতানুগতিক গরহাজির করে পুরুষালী,... পুরুষতান্ত্রিক মেজাজেই উপস্থাপন করে।
আর 'মনের মানুষ' বলতে ক্যামন যেন 'মনপুরা' সিনেমার প্রেম বোঝাইল কিনা তাও কয়েক উঠতি নওজোয়ানকে ধইরা জিজ্ঞাসিলে বুঝতে পারা যাইবে। আহারে ব্যবসা। বোধহয় এ কারণেই চঞ্চল'রে সিনেমায় খাটাইছে। আমার বেজায় সন্দেহ হয়, চঞ্চলের মনপুরা' আকর্ষণটাকেই, জনপ্রিয়তাকেই সে পুঁজি করেছে।
গৌতম কি জানে না আমাদের এ অঞ্চলে মানুষ- নারী-পুরুষ বহু আগ থেকেই এহেন কামের সঙ্গে পরিচিত, লিপ্ত। তবে নিশ্চই তার গঠন আলাদা। য়ূরোপীয়ানদের মতো মাংশশী, ছিদ্র অন্বেষণকারী/বিলাসী না। প্রেমে, আবেগে, মর্মের শত বন্ধনের সাথে ঐক্য ঘটলেই তবে তাতে তারা সায় দেয়। সেখানে বিয়ে প্রথা তো দূরের কথা ধর্মও তুচ্চজ্ঞান গণ্য হয়। সমান্তবাদী, ধর্মবাদী, মতলবাজদের নীতিবাদ কোন কিছুরই পাত্তাপুত্তা নেই। আহা গৌতম এ সামন্য কামবোধ জ্ঞানটাও রাখে না? অথচ কি ছার বোঝালো আমাদের? আসলে মনে মনে বাস তো করে ভিন দেশে...।
এ নদীয়া অঞ্চলের মানুষ মাতাল হয়ে কি কুকুরের সঙ্গে না বেড়ালের সঙ্গে না দরজার ফুটোর সঙ্গে লিপ্ত হয় তা তার জানাবোঝায় এ করণেই নাই। কিন্তু জিজ্ঞাস করেন অস্বীকার যাবে। ম্যালা জ্ঞান ফলাবে। খেয়াল করলে দেখা যাবে পাতিলে ঢুঁ মেরে চুরি করা বেড়ালটার নাকে-মুখে কালিঝুলি মাখা আছে, সে বে-সুরুত বেড়াল কিন্তু নিজে দেখছে না। ভাবছে- হা কে আর জানে আমি যে চুরি করে একটুকরা আধাসেদ্ধ মাছ খেয়েছি। তেমনি গৌতমের শ্রেণী যৌনতাকে সংষ্কার/ধর্মীয় বেড়াজাল থেকে ছাড়ানোর নামে পুজির ধর্মের সঙ্গে যোগ ঘটায়।
আলহামদুলিল্লা। সকল প্রসংসা আল্লাতালার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




