শিক্ষকদের কোচিং করানো বন্ধে সরকারের নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধের দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীর ৪০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নিয়ে ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা ও মতবিনিময়’ শীর্ষক এক সভায় তারা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এই দাবি জানান।
পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষকদের ক্লাসরুমের বাইরে অর্থের বিনিময়ে পড়ানোর বিষয়টিকে ‘কোচিং বাণিজ্য’ না বলে ‘প্রাইভেট টিউশন’ শব্দটি ব্যবহারের দাবি জানিয়ে প্রধান শিক্ষকরা বলেন, সব শিক্ষক কোচিং করান না। তাই ঢালাওভাবে অভিযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।
সরকার গত ২০ জুন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ ঘোষণা করে।
এ নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ‘কোচিং’ করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে ‘প্রাইভেট’ পড়াতে পারবেন। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছাত্র-ছাত্রীদের ‘অতিরিক্ত ক্লাস’ নিতে পারবেন তারা।
সালেহা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “কোচিং এবং কোচিং বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা দুটোকেই ঘৃণা করি। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধ করা প্রয়োজন।”
গজমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুফিয়া খাতুন বলেন, নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে বলা হলেও অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথেষ্ট শ্রেণীকক্ষ নেই। ফলে নীতিমালায় দেওয়া ওই সুবিধা নিতে শিক্ষকদের সমস্যা হবে।
বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের ‘উপযুক্ত’ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ মিলনায়তনে এই পর্যালোচনা সভায় বেশিরভাগ শিক্ষকই তাদের বক্তব্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের এসব দাবি গুরত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, “স্কুলে ভালো করে পড়ানো হয় না বলেই শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে যায়। শ্রেণী শিক্ষকের কাছেইতো তারা কোচিং করে। এটা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না।”
অনেক শিক্ষক নম্বর কম দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
নাহিদ বলেন, কোচিং বন্ধ হলেও শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে বাড়তি টাকা আয় করতে পারবেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদের সভাপতিত্বে এই পর্যালোচনা সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন শিক্ষক নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সভায় বক্তব্য দেন।