somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঘটন!

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এখন যে ঘটনাগুলো বলব শুনে হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবে না।কিন্তু ঘটনা গুলো একদম সত্য। আমাদের গ্রামটা একেবারেই অজপাড়া গাঁ, যেখানে এখনও বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ পৌছেনি । বর্ষা কালে হাটু সমান কাঁদা থাকে। চারিদিকে ঘন বন জঙ্গলে ভরতি হয়ে আছে। শুনেছি আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমির দিকে অনেক সিংহের প্রকোপ। যখন তখন মানুষ ধরে নেওয়া, আর খেয়ে ফেলা অতি সাধারন ব্যাপার। আমাদের গ্রামে সিংহের নয়, রয়েছে শিয়ালের প্রকোপ। প্রথমে যে ঘটনাটা বলব এটা আজ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগের কথা।
মাত্র এগারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় আছিয়া বানুর। বছর দুই হতে না হতেই কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে মেয়ে সন্তান।আছিয়া বানুর শ্বশুর শ্বাশুরি অনেক আগেই কলেরা আর যক্ষায় মারা গিয়েছে।স্বামী , আছিয়া বানু,ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার।মেয়েটা অন্য সবার চাইতে ফর্সা ও সুন্দর হয়। তাই অনেক সাধ করে আছিয়া বানুর স্বামী ফুল মিয়া মেয়ের নাম রাখে সুরতী। তাদের বাড়ির পেছনে বিশাল ঝোপঝাড় । ও পথে মানুষ দিনের বেলাতেও বেশিদূর আগাতে চায় না।তখন ছিল আখের সময় , তাই শিয়ালের প্রকোপটা বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে গিয়েছিল।ছোট্ট মেয়েটার বয়স তখন এক সপ্তাহ্ পার হয়ে দুই সপ্তাহ্ চলছে। অনেক সকালে ফুল মিয়া ঘুম থেকে উঠে গঞ্জের দিকে গিয়েছে।এদিকে আছিয়া বানু সকালে বাচ্চাটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে পুকুর ঘাটে এসেছে থালা বাসন মাজতে।কিছুক্ষন পরে ঘরে ফিরে দ্যাখে ঘরে বাচ্চা নেই, দরজা খোলা। আছিয়া বানুর বুক ধ্বক্ করে ওঠে। মনেপড়ে আজকে সে ঘরে দরজা দিতে ভুলে গিয়েছিল। চারিদিকে ভাল করে তাকিয়ে বিছানার পাশে কয়েক ফোটা রক্ত দেখতে পায়। ভয়ে চিৎকার করে আছিয়া বানু ঘর থেকে বের হয়ে আসে।বাড়ির আশেপাশে হন্য হয়ে মেয়েকে খুঁজতে থাকে। জঙ্গলের পথে কয়েক পা এগোতেই দ্যাখে সাত আটটা শিয়াল মিলে কি নিয়ে যেন কামড়া কামড়ি করে খাচ্ছে। ভাল করে তাকিয়ে আছিয়া সুরতীর ক্ষত বিক্ষত দেহটা দেখতে পায়। অল্প সময় পরে আছিয়ার চিৎকার আর কান্নায় শব্দে আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ব্যাপারটা যে কতখানি লোমহর্ষ, চিন্তা করা যায়না।
আমাদের গ্রামে শুকনো কালোমত একজন লোক আছে, বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। লোকটার নাম আতিক কিন্তু আড়ালে আবডালে সবাই তাকে শিয়াইল্যা আতি বলে ডাকে। কারন ছোটবেলায় একবার ঘরের বারান্দা থেকে তাকে শিয়ালে পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। শেষে চিৎকার শুনে লোকজন লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলে শিয়াল আতিক কে রেখে পালায়। শিয়াইল্যা আতির পায়ে নাকি এখনও শিয়ালের দাঁতের দাগ আছে।
এতক্ষন তো বলছিলাম অনেক আগের কথা।পরিশেষে যে ঘটনাটা বলব এটা মাত্র মাস ছয়েক আগের কথা।
আমাদের গ্রামের গোরস্থানটা একেবারেই নদীর পাড়ে। চারিদিকে গাছপালায় জংলা হয়ে আছে। সেখানে দিনের বেলাতেও মানুষ বেশি চলাচল করেনা। গ্রামের বিলকিস বেগম হঠাৎ স্বামীর সাথে ঝগড়া করে কিটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। কবর দিতে দিতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।
পরদিন খুব ভোরে গোরস্থানের সামনে দিয়ে কয়েকজন লোক যেতে গিয়ে ভয় পেয়ে গ্রামের মৌলবীদের খবর দেয়।
বিলকিস বেগমের লাশ কবর থেকে বের হয়ে ছিল,আর চারপাশের মাটি ছিল খোঁড়া। লোকগুলো লাশের কাছ থেকে কয়েকটা শিয়াল দৌড়ে যেতে দেখেছিল। মৌলবীরা কাফনের কাপড় এনে বিলকিস বেগমের লাশ মুড়ে দিয়ে আবারও কবর দেয়। বিলকিস বেগমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। সেদিন ওখানে ছিল এমন একজনের মুখ থেকে আমি পুরো ঘটনাটা শুনি। আমি আগেই বলেছি এখানকার প্রতিটি ঘটনা সত্য, এখন বিশ্বাস করার দায় দায়িত্ব পাঠকদের।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×