somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিনে ভোরে উঠতে একটুও ভালো লাগেনা জয়িতার । তার উপর এখন ভোরের রোদের সাথে ভেজা ভেজা কুয়াশাও মিশে থাকে । কাঁথাটা আরো জোরে আকড়ে ধরে সে । কিন্তু বেশিক্ষনের জন্য না... হঠাত মনে পড়ে যায় , আরে ! আজ তো ১৫ নভেম্বর । জয়ির জন্মদিন ।
আর কোন কিছু না ভেবেই বাথ রোব আর তোয়ালে নিয়ে সোজা বাথ্রুমে ঢুকে পড়ে সে । গোসল সারতেই মন আরও ফুরফুরে হয়ে গেলো ...একেবারে গোলাপ ভেজানো কুসুম পানি যে ! রুমে এসে মাথায় পেচানো টাওয়াল সরাতেই ভেজা চুল গুলো কাঁধে আছড়ে পড়ে । তোয়ালে দিয়ে যতই ঘষছে সেগুলো ততই এলোমেলো হচ্ছে ।

এবার সাজু করার পালা ...তার আগে কি একবার শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে দেখবো নাকি ? পরে যদি ভালো না দেখায় ? যদি ওর পছন্দ না হয় ?সাদা শাড়িটা আয়রন করাও বাকি ! আচ্ছা চুল কি ছেড়ে রাখবো না বেঁধে ?
সব চিন্তা একবারে মাথায় হানা দিল । নো নো , এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব গুব্লে যাচ্ছে ... যেদিন ও আসার কথা থাকে সেদিন এমন্টাই হয় । উত্তেজনায় জয়িতা সব তাল্গোল পাকিয়ে ফেলে ।
নাহ ! এবার একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ভাবতে শুরু করা যাক প্রথম থেকে ।
নাস্তা করা হয় নি । প্রথমে খেয়ে নেয়া যাক না হলে মুখ শুকনো দেখাবে ... ভেবে ভেবে ধবধবে সাদা একটা রুটি বানিয়ে নিল ।
খাওয়া শেষে রুমে ফিরেই ডিভিডি প্লেয়ারটা ছেড়ে দিল । রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে । তপু এত সুন্দর করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে পারে ! না শুনলে বিশ্বাসই হয় না !
' আবার তপু-তে হারিয়ে গিয়েছিস , না ? ' নিজেকেই ধমক লাগালো ।

গান শুনতে শুনতে ড্রায়ার হাতে শুকিয়ে আসা চুল গুলো শুকাতে লাগল । হাওয়া পেয়ে লম্বা চুল একবার এদিক যায় তো একবার ওদিক যায় । নিজের এলোমেলো চুল নিয়ে এভাবে খেলতে জয়িতার খুব ভালো লাগে । ' আচ্ছা , ও কি কখনো আমার চুল নিয়ে খেলতে চাইবে ? ... কিন্তু ওর যে ঢেউয়ের মত চুল পছন্দ । আর জয়িতার চুল মোটেও উত্তাল ঢেউয়ের মত না , নদীর মত শান্ত , নিশ্চুপ ।
ভাবতে ভাবতে সে আবার হারিয়ে যায় ।
আসলে যেদিন থেকে তপু ছেলেটা তার জীবনে চলে এসেছে তার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে সে কেবল হারিয়েছে নিজেকে , তপুর মাঝে ।
ছেলেটা আর সবার থেকে অন্যরকম । নিজেকে খুব কঠিন হৃদয়ের বোঝাতে চায় । জয়িতাও প্রথমে তাই ভেবেছিল । কিন্তু , এই সেদিন যখন ছোট্ট বাচ্চাদের মত তার দুয়ারে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল , সেদিন জয়িতা চুপ করে থেকেও যেন হঠাত সব বুঝে ফেলেছিল ।

টিউট । ওহ ফোনটাকে চার্জ করে নেয়া উচিত । চারজার কানেকশন লাগিয়ে জয়িতা এবার শাড়ি দুটো হাতে নিল ।
প্রায় বছর দুয়েক আগে সিলেট থেকে ফোন করে একবার তপু বলেছিল , 'আচ্ছা, আমি ঢাকায় এলে তুমি কি শাড়ি পড়তে পারো ? '
আজ জয়িতা শাড়ি পড়বে ঠিক করেছে ।
কোনটাতে ওকে বেশি সুন্দর লাগবে ? সাদা জর্জেটে? নাকি এই নীলরঙা সিল্কে?

সাদা শাড়িটা ওর দাদির । শাড়িটার মধ্যে কেমন জেনো একটা মায়া জড়ানো । আর নীল শাড়িটাটা ওর মায়ের । যেদিন এই শাড়িটা প্রথম পড়েছিল , মা অদ্ভুত দৃস্টিতে একবার ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন ,
-তোমার রাজপুত্র যেদিন প্রথম তোমাকে দেখতে আসবে তোমাকে এই শাড়িটা পরাবো । দেখবা, তোমার থেকে আর চোখই ফেরাতে পারবে না ।
-কি যে বলো আম্মু ! যাও , আমি পরবো না। লজ্জা পেয়ে জয়ি ওটা ছুড়ে বিছানায় ফেলে দিয়েছিল ।
- আরে ফেলছো কেন... তোমাকে এটা দিয়ে দিলাম .. তোমার আল্মিরাতে রেখে দাও । আমার মেয়ে কবে এত বড় হয়ে গেলো , টেরই পেলাম না । একদিন তো তোমাকে রাজপুত্রের হাতে দিয়েই দিতে হবে ।
- শোন আম্মু, আমি তোমাদের রেখে কোত্থাও যাবো না । আমার এই শাড়িও লাগবে না ।
- আরে ... মেয়ে আমার রাগ করে খালি । আচ্ছা যেও না ...

জয়িতার ভেজা চুল শুকিয়ে এসেছে । গায়ে লোশন লাগাতে লাগাতে ভাবলো ,
আচ্ছা , ওর জন্য একটা কেক বানালে কেমন হয় ? এই কয়দিন ক্যাম্পে কি খেয়েছে তা তো ভালই জানা আছে ।
কিচেনে ঢুকে একে একে ময়দা , বেকিং পাউডার , চকোপাউডার , বাটার - সব বের করে সাজালো । আজ বাসায় কেউ নেই , তাই কিচেন একদন ফ্রি ! ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে নিয়ে আসলো । শুরু হলো কেক বানানো । গরম ওভেনে ব্যাটার-টা ঢুকাতেই কেমন শিহ্রিত হল , কেমন হবে কে জানে ! ওর ভালো লাগবে তো ! একবার শখ করে লাজানিয়া বানিয়ে কি কেলেঙ্কারিটাই না হল, ঠান্ডা লাজানিয়া খেতে যে কতটা খারাপ সেটা পরে বুঝতে পেরে ঘাসফড়িঙ এত্ত লজ্জা পেয়েছিল । ছি ! আর ও-ও কি কম ! ওকে কে বলেছিল ওই অখাদ্য গুলো খেতে ! কপ কপ করে সব গুলো খেয়ে ফেলসে এমন ভাবে যে বিরাট সুস্বাদু খাবার খাচ্ছে !

কেক্টা যতই বেক হচ্ছে আর জয়ির হারটবিট ততই বেড়ে যাচ্ছে । সময় হবার আগেই টুথপিক দিয়ে একটু একটু করে দেখে লাগল ...শেষে যখন বের করে আনল , উম্মম্ম ... দারুন গন্ধ বের হচ্ছে তো !

আচ্ছা , এখনো কেন ফোনটা আসছে না ? কাপা হাতে ডায়াল করল ০১৭১... ফোন বন্ধ ।
জয়িতার উৎসাহ দমে যেতে লাগল । তবে কি আজও ...

নাহ ! আজ হবেই হবে । ইটক্স বিন সিক্স মান্থস এন্ড মোর আফটার অল দে ডিডিন্ট মিট !
আবার ডায়াল করল । ফোন বন্ধ ।

হতাশা ঢাকতে জয়িতা এবার শাড়িটা পড়ে নিল । গলায় সোনার একটা চেইন সবসময়ই পড়া থাকে । কানে এক জোড়া দুল পড়ে নিল । দুহাত ভরে তার কখনো চুড়ি পরা হয় না । আজ পড়ল । কাচের চুড়ি টুংটাং শব্দ করছে । চোখের নিচে হাল্কা একটু কাজলও টেনে দিল । ওর চোখগুলো তেমন আকর্ষণীয় না । হয়ত এজন্যই তপু ওর দিকে না তাকিয়ে এতটা সময় থাকতে পারে ।... সময় আস্তে আস্তে এগুচ্ছে । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে । জয়িতা চুপ করে বসে আছে ।
বিকেলের সূর্য তার চোখের কোনে ডুব দিল ।

অন্ধকারে ঝাপসা চোখে জয়িতা নিজের দিকে তাকাল । শুধু চোখ না, ওর আসলে কোন কিছুই সুন্দর না । কোলের উপর হাত দুটো চুপ করে পরে আছে , চুড়িগুলোও আর শব্দ করছে না । এই হাতে চুড়িও মানায় না । এজন্যই তপু হাত দুটো ধরার জন্য কখনো ছুটে আসে না ।
.
.
.
.
.
.
.
.
জয়িতা খালি বাসার সবগুলো বাতি নিভিয়ে বারান্দার কোনে বসে আছে । তার আঁচল ফোটা ফোটা জলে ভিজুক আর নাই ভিজুক , সেটা না হয় অজানাই থাক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×