ফেব্রয়ারির ১৬ তারিখ ঢাবির অধিভুক্ত হওয়া ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা, বার্মার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা ও চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস এ বছর (২০০৭ সালে) সবথেকে বেশি আলোচনায় ছিলো এবং এখনো আছে।
দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য এই তিনটির মধ্যে বাস্তবে তেমন মিল না থাকলেও ‘আবহেলা’ নামের মৌলিক একটা মিল রয়েছে। অপু বিশ্বাস শাকিব খান কর্তৃক রোহিঙ্গারা বার্মার সেনাবাহিনী ও সরকার কর্তৃক ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির ও সরকার কর্তৃক।
অপু বিষয়টা মোটামুটি মিল হলেও রোহিঙ্গারা এবং ৭ কলেজ এখনও অবহেলায় পড়ে আছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তো আমরা কম বেশি সবাই জানি। তাদের উপর এমন নির্যাতন না হলে হয়ত রোহিঙ্গাদের আমরা এতো পড়তাম না, জানতামও না। তারা নিজ দেশেও পরদেশী হয়ে বাস করছে অনেক বছর যাবত। এবার বার্মার সরকার ও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গারা যে মানুষ তা ভুলে গেছে। দেশটির পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে রোহিঙ্গা নিধন। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা করেনি দেশটি। কোন উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে কষ্ট করে বাংলাদেশে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা এক মাসেই আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও এ কথা সত্য যে তাদের এ দেশ নয়। এটা তারাও ভালো করে জানে।
তবে, এখানে তাদের অসহায়ত্ব চরমভাবে ফুটে উঠেছে। এক কথায় রোহিঙ্গাদের দেশ থেকেও নেই। এখানে রোহিঙ্গারা তাদের দেশ কর্তৃক চরম অবহেলা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তেমনি ভাবে রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরাও নিপীড়ন, চরম অবহেলা ও অপমানের শিকার হচ্ছেন। হয়ত অনেকে বলবে নিপীড়ন কোথায় হলো-? তাদের জন্য উত্তর হলো দুটি চোখ কেড়ে নেয়া এর থেকে কম কিসে। হয়ত রোহিঙ্গাদের মতো জীবন শেষ হচ্ছে না। তবে শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে এই ৭ কলেজ।
ঢাবির সাবেক ভিসি আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিকির পিড়াপিড়িতে ৭ কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করে সরকার। ঢাবির অধিভুক্ত করতে ঢাবিই সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করছে। আর্থিক লাভবান হবে বলে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিংহভাগ আয় করত এই ৭ কলেজ থেকে। সেখানেই লোভ লেগেছিলো আরেফিন সিদ্দিকীর। সাবেক কলিক এতো আয় করছে, দেখি আমিও কিছুটা আয় করতে পারি কিনা-? সেই জায়গা থেকেই সরকারকে পিড়াপিড়ি করেছেন তিনি।
৭ কলজের কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক কখনো বলেনি আমরা ঢাবির অধিভুক্ত হতে ইচ্ছুক। তারপরও সরকার ঢাবির পিড়াপিড়িতে অধিভুক্ত করেছে। কিন্তু অধিভুক্ত হওয়ার পর শুরু হয়েছে নানা ধরনের হয়রানি, অবহেলা ও নিপীড়নের। নিজেদের ইচ্ছায় অধিভুক্ত করার পরও শুরু কয়েছে বিমাতাসূলভ আচরণ। ব্যাপারটা এমন যে ‘ভালোবেসে বিয়ে করে বাচ্চা জন্মদানের পর বাচ্চার দায়িত্ব নিলেও বাচ্চার মায়ের দায়িত্ব না নেয়ার মতো’। মোটা অঙ্ক আয় করতে চাইছে, অথচ তাদের মৌলিক অধিকারটুকু না দিয়ে অবহেলা ও নিপীড়ন চালাচ্ছে।
অধিভুক্ত হওয়ার ৮/৯ মাস পার হলেও দিচ্ছে না রেজাল্ট। ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে গুলি করে অন্ধ করে দেয়াসহ নানা বিমাতা সূলভ আচরণ করছে ঢাবি প্রশাসন। মিডিয়ার সমালোচনায় মাস্টার্সের পরীক্ষা নিলেও পরে শিক্ষার সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও এখনো রুটিন প্রকাশিত হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কায় আছে পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা। ২য় ও ৪র্থ বর্ষের রেজাল্টের কথা তো তারা ভুলেই গেছে। জাবির উপর দোষ চাপিয়ে পাড়ে পেতে চাচ্ছে ঢাবি। এক শিক্ষার্থীকে অন্ধ করা পুলিশও পাড় পেয়ে যাচ্ছে স্ব-গৌরবে। এখন জাতি অপেক্ষায় আছে গুলি করা পুলিশের প্রোমোশন হবে কবে সেদিনের। সেই প্রোমোশন দেয়ার অনুষ্ঠানটা যেন একটু ঝাঁকঝমকপূর্ণ হয়, সে দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
ঢাবির ভিসি চেঞ্চ হলে ৭ কলেজের শিক্ষার্থী একটু আশার আলো দেখছিলো। তারা ভাবছিলো এই চেঞ্চ হয়ত তাদের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসছে। কিন্তু শেষমেষ সে আশায় গুড়েবালি। তার কথায় শুনে সবাই আশাহত হয়েছে। তার অফ রেকর্ডের কথাগুলো সেখানে থাকা ছাত্রদের অবাক করেছে। যদিও তা গণমধ্যমে আসেনি। এছাড়া রেকর্ডে তিনি রেজাল্ট দেয়ার কোন সময় বলতে পারেন নি। তিনি বলেছেন ৭ কলেজ এখন তাদের মাথার ব্যাথা হয়ে দাড়িয়েছে।
এছাড়াও নানা ভাবে এই ৭ কলেজের শিক্ষার্থিদের নানাভাবে অপমান করছে ঢাবি। এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না, সেটা করতে পারবে না।
৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের একবার হঠাৎ করে ঢাবির মাঠ ব্যবহার অনুমতি দিয়ে বসলেন। এরপর তা বাতিল করলেন। ব্যাপার এমন যে এই ৭ কলেজের অনুরোধে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যা অপমানের শামিল। এখন কথা হলো ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা কি ঢাবির মাঠে খেলতে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে ? তাছাড়া তারা তো মাঠে খেলার অনুমতিই চাইনি। তাহলে নিজেরা দিয়ে, আবার ব্যবহার করতে পারবে না বলে কেন অপমান করছে তারা-? এই ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা তো মাঠ নয়, পড়াশুনা করতে চায়। মাঠে খেলতে চাচ্ছে না তো স্যার।
এই ৮/৯ মাসে স্থবির হয়ে পড়েছে ৭ কলেজের পড়ালেখা। কোটি কোটি টাকা আয় কিভাবে করতে হবে সে চিন্তায় ব্যস্ত ঢাবি। কয়েকদিন আগে ঢাবি ৩য় বর্ষের মানউন্নয়নের ফরম ফিলাম করেছে। সেখানে বাড়তি টাকা নিচ্ছে ঢাবি। যা জাবি থেকে অনেক বেশি। এই ইয়ারের পরীক্ষা নেয়ার কথা আছে ১৬ অক্টোবর। কিন্তু আজ ২ অক্টোবর পর্যন্ত কোন রুটিন প্রকাশ করেনি। এভাবে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এবার ‘৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির শিক্ষার্থী নয়’ বিতর্ক নিয়ে শেষ করছি। ঢাবির শিক্ষার্থীরা বলছে ‘৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির শিক্ষার্থী নয়’ এর উত্তরে বলবো ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা কখনো ঢাবির শিক্ষার্থী হতে চায় না। তবে ঢাবির শিক্ষার্থীদের বলব ‘Affiliate’ শব্দটি যেন ভালো করে শিখে নেয়। ধন্যবাদ সকলকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪২