বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতিহাসে পাতায় একটি ঐতিহ্যের নাম। ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ বা ৯০ সালের আন্দোলনগুলোতে এই সংগঠনটির রয়েছে নায়কোচিত ইতিহাস। এ সকল আন্দোলনে সাধারণের মনে এই সংগঠনটি নায়ক হয়ে রয়েছেন। যদিও এই অবস্থানটুকু আমার দেখা নয়, ইতিহাস থেকে জানা। যেহেতু ইতিহাস থেকে জেনেছি সেহেতু এই সংগঠনটিকে ইতিহাসের নায়ক হিসেবে মেনে নিতে কারোরই সমস্যা হবার কথা না।
কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। সেই সময়ের ছাত্রনেতারা বুড়ো হয়েছেন। অনেকের নৈতিক পদস্খলনও চোখে পড়ে বেশ। আমার যতটুকু বয়স হয়েছে। তার মধ্যে আমার জীবনে কখনো ছাত্রলীগকে ভালো কোন কাজ করতে দেখিনি। ২০০৯ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকে তো এরা প্রতিটি ক্যাম্পাসের ত্রাস। সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় তো প্রতিদিনকার ঘটনা। আর আমার এই কথা যদি কেউ বিশ্বাস না করে তাহলে আমার করার কিছু নেই। কারণ এমন চাঁদা দিতে আমিও বাধ্য ছিলাম। তাই কারো বিশ্বাস করানোর প্রমাণের দরকার নেই। কারণ আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী।
যাই হোক ছাত্রলীগের নায়ক হবার বিষয়টা এখন ইতিহাস। আজকে যদি ইতিহাস পাঠে বসি, ইতিহাস নায়ক হিসেবে ছাত্রলীগকেই দেখাবে। তবে কাল যখন ইতিহাস পাঠ করবে আগামি প্রজন্ম বসবে। তখন এই সংগঠনটিকে ভিলেন হিসেবেও চিনবে।
তারা আজ যে কর্মকান্ড চালাচ্ছে তাতে নায়ক হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর যে নারকীয় হামলা চালাচ্ছে তা এই নায়ক সংগঠনটিকে তা আজ ভিলেন হিসেবে নতুন পরিচয় এঁটে দিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পা-কোমড় গুড়ো করা, নারীর শ্লালিনতা হানিসহ এমন কোন নিপীড়নের কাজ বাকী নেই যা করেনি এই সংগঠনটি। আর এই কাজগুলো করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে স্বয়ং সরকার। এই জনপ্রিয় আন্দোলনটিকে রাজনীতিকরণ করার এমন কোন ঘৃনিত কাজ নেই যা তারা করতে বাদ রাখে নি। হামলার শিকার হওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তারা শুধু সাধারণ ছাত্রদেরই নয়, শিক্ষকদেরও হামলার টার্গেট বানিয়েছেন। যা এর আগে কখনো ঘটেনি এমন ঘটনা। তাদের এমন বর্বরতা ছাড়িয়ে গেছে ব্রিটিশ-বেনিয়া বা পাক-হানাদারদের অত্যাচারকেও। ছাত্রলীগের এমন অত্যাচারি মনোভাবই তাদের ইতিহাস ভিলেন হিসেবেই জানবে। অথচ উচিৎ ছিলো তাদেরই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া। কিন্তু তারা তা না করে আজ ‘নায়ক থেকে ভিলেন’ হয়ে নতুন পরিচিতি লাভ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৩