somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোঁচকা-শব্দ

২১ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লুইস ক্যারলের জ্যাবারওয়কি আমি পড়িনি, পড়েছি সত্যজিৎ রায়ের করা অনুবাদ জবরখাকি, আর তার সাথে তাঁর আঁকা ছবি।

বিলি্লগি আর শিঁথলে যতো টোবে
গালুমগিরি করছে ভেউয়ের পরে
মিমসে মেরে যাচ্ছে বোরোগোবে
মোমতারা সব গুড়বুড়িয়ে মরে
যাসনে বাবা জবরখাকির কাছে
রামখিঁচুনি রাবণকামড় তার ...

আর মনে পড়ছে না। কিন্তু একেবারেই অর্থহীন শব্দ [কিংবা অর্থ না জানা শব্দ] দিয়ে সাজানো এই ছড়াটা আমার বেশ প্রিয়, আর আমার বিচারে, আমার পড়া সার্থক অনুবাদগুলোর মধ্যে সেরা। জ্যাবারওয়কি থেকে জবরখাকি! একজন সত্যজিৎ না থাকলে কত কিছু থেকে বঞ্চিত হতাম।

কিন্তু জ্যাবারওয়কির শব্দগুলো একেবারেই অর্থহীন নয়। হামটিডামটি যেমন অ্যালিসকে ব্যাখ্যা করে বোঝায় ... স্লিদি মানে হচ্ছে লিদ আর স্লাইমি ... এ যেন এক বোঁচকার মতো ... দুটো মানে এক শব্দের মধ্যে গোঁজা।

ক্যারলই প্রবর্তন করেন পোখতমন্তো ওয়ার্ড (Portmanteu Word) কথাটির। পোখতমন্তোর বাংলা ঠিক বোঁচকা নয়, কিন্তু সঠিক প্রতিশব্দের অভাবে পোখতমন্তোর অনুবাদ বোঁচকা দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি (ঠ্যাকা কাজ চালানো আর কি ... এভাবেই তো চলছে দেশের সবকিছু ...)। পোখতমন্তো ওয়ার্ড বা বোঁচকা শব্দ হচ্ছে দু'টি শব্দকে দু'দিক দিয়ে ঠেসে বানানো একটা শব্দ। বাংলায় বোঁচকা-শব্দ আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। ইংরেজিতে হরদম ব্যবহৃত হয় এগুলো, বিশেষ করে পত্রিকাগুলোতে। গুগলে সার্চ করে দেখলে বেশ মজার কিছু বোঁচকা-শব্দ পাওয়া যাবে। এখন মনে পড়ছে একটা চুটকি, নেটস্কেপ আর ইয়াহুর মার্জার প্রস্তাব, নাম নেতানিয়াহু (Net n' Yahoo)।

বোঁচকা-শব্দের প্রসঙ্গ টানলাম দু'টি বোঁচকা-শব্দ মুদ্রণ করার মতলবে। শব্দদু'টি হচ্ছে Computeracy আর Neteracy। কম্পিউটারেসি হচ্ছে কম্পিউটার লিটারেসির বোঁচকা সংস্করণ। একইভাবে নেটারেসি হচ্ছে ইন্টারনেট লিটারেসি। কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান, যা দিয়ে কিছু ছোটখাটো কাজ চালানো যায়। যদিও অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে একটা ক্যাচাল লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে কম্পিউটারেসির ক্ষেত্রে, তবুও কিছু ছাড় দিয়ে এর হিসাবে নেয়া সম্ভব। কম্পিউটার চালু করা, কোন একটা ফাইল খোলা, কিংবা সেটি কপি করে অন্য কোন ফোল্ডারে নিয়ে সংরক্ষণ, কোন ফাইল ডিলিট করা, নতুন ফোল্ডার তৈরি, কোন টেক্সট ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা, ইত্যাদি গোড়ার দিকের কাজ করার দক্ষতাই হচ্ছে কম্পিউটারেসি। এর অভাব হচ্ছে ইনকম্পিউটারেসি। একইভাবে ইন্টারনেটে প্রবেশ করে তথ্য খোঁজা, তথ্য ডাউনলোড বা আপলোড করার পদ্ধতি, বা অনলাইনে ইমেইল আদানপ্রদানের দক্ষতাকে নেটারেসি বলা যেতে পারে। এর অভাবকে আমরা বলতে পারি ইননেটারেসি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের এই উপমহাদেশের সরকারী কর্তারা কিছুটা ইনকম্পিউটারেট এবং ইননেটারেট। সরকারী কাজে কম্পিউটার বা ওয়েবসাইটের ব্যবহারকে খুব সম্ভবত একটি অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতাই ধরে নেয়া হয়। এই বক্তব্যের পেছনে প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের ওয়েবসাইটগুলিকে দাঁড় করানো যায়। উদাহরণ দিয়ে আমি জায়গা নষ্ট করবো না, আপনারা নিজেরাই বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট সার্চ করে সেগুলির হালৎ দেখতে পারেন। অবশ্য দেখানোর মতো হালৎসম্পন্ন ওয়েবসাইটের সংখ্যাও খুব বেশি নয়।

ব্যতিক্রমও আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু মন্ত্রণালয় বা কমিশনের ওয়েবসাইট বেশ মানসম্পন্ন। আমার পুরনো একটা পোস্ট এর wjsK দিলাম, যেখানে আবার ওপরে ফিটফাট ভেতরে হকির মাঠের খবর পাবেন। অবশ্য এখন ধীরে ধীরে কিছু উপাদান তাঁরা সংযোগ করেছেন, আগের মতো হাবার হাল আর নেই। কিন্তু "ওয়েবসাইট নির্মাণাধীন" গোছের কোন নোটিশও তাঁরা ঝোলাননি, লোকে বুঝবে কী করে?

তবে এখানেও প্রশ্ন আছে। কম্পিউটারেসি ও নেটারেসি অর্জন করলে কর্তারা প্রথমেই যে ইন্টারনেটের ওপর রীতিমতো খাপ্পা হয়ে উঠবেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? অবাধ তথ্য প্রবাহের খুব একটা ভক্ত তাঁরা হবেন, ্রএ প্রত্যয় আমার হয় না। আমলাদের বাধার কারণে "তথ্য পাচার" হয়ে যাবার ভয়ে বাংলাদেশ দেড় দশক আগে প্রায় বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবলে নিজেকে সংযোগ করে বিশ্বব্যাপী প্রায়অবাধ তথ্যপ্রবাহে গা ভাসানোর অভূতপূর্ব সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলো। তথ্য যে পাচার হবার জিনিস নয়, বরং রূপান্তরিত হয়ে পণ্য হিসেবে বিক্রীত হবারও জিনিস, এটা আঁচ করার মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকজন বোধহয় তখন সরকারে ছিলেন না। ভারতে ছিলো এক পাবলিক, সে তখন ফিন্যান্স মিনিস্টার, নাম মনমোহন সিং, এখন আরো উন্নতি করেছে ব্যাটা, তখন "তথ্য পাচার" করার জন্য রীতিমতো খেপে উঠেছিলো সে। ভারত ফাইবার অপটিক্যাল লিংক দিয়ে গোটা বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হয়েছিলো নব্বই দশকের গোড়ার দিকেই, এবং মনমোহন সিঙের সেই ভয়াবহ অপরিণামদর্শী হঠকারী কীর্তির ফলশ্রুতিস্বরূপ ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম তথ্য-প্রক্রিয়াকারী দেশ, আউটসোর্সিঙের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। বাংলাদেশ তথ্য পাচার হতে দেয়নি, লৌহযবনিকার অন্তরালে লুকিয়ে আউটসোর্সিঙের সেই ঢেউ থেকে সে গা বাঁচিয়েছে। আজ পনেরো বছর পর বাংলাদেশের সুসংবাদ দুঃসংবাদ সবাই ঠিকই জেনে যাচ্ছে, শুধু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাজার আমাদের হাত ফসকে গেছে। ভারতের মতো না হলেও আমরা হয়তো তার দশ শতাংশ দখল করতে পারতাম। কিন্তু ইনকম্পিউটারেসি আর ইননেটারেসিতে আক্রান্ত পরিকল্পকদের তথ্য পাচার রোধের মহান ব্রতের কারণে আজ আমাদের সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হতে খরচ হয়েছে পৌনে এক বিলিয়ন ডলার, এ প্রকল্পে চুরিচামারিও নিশ্চয়ই হয়েছে দেদার। আজকে আমরা একটা দর্জিরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি, দর্জি-ব্যবসায়ীরা আজ সবার ওপরে ছড়ি ঘোরাতে পারেন দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতের দোহাই তুলে, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ওর চেয়ে খুব একটা কম আয় হতো না আমাদের।

শুধু একটা সিদ্ধান্তের জন্য, আমরা পনেরো বছর পিছিয়ে পড়েছি।

সেই সিদ্ধান্তটি নিশ্চয়ই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোন সচিব পর্যায়ের কর্মকতর্াদের নিয়ে গঠিত কোন কমিটির সুপারিশেই নিয়েছিলেন। সাংবাদিক বন্ধুরা কি খোঁজ নিয়ে উদ্ধার করতে পারবেন, সেই কমিটির সদস্য করা ছিলেন? কী ছিলো তাঁদের করা সুপারিশপত্রে?

বাংলায় একটা কথা আছে, সেই তো মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি? আমরা হাসি না, কান্নাকাটিই করি, কিন্তু যাদের অদূরদর্শিতার জের আমরা টানছি, তারা এখন বেশ আরামেই আছে বলে আমার ধারণা। ইনকম্পিউটারেসি আর ইননেটারেসির পাশাপাশি ঐ হুজুরদের আরো একটা জিনিস আছে, ইনকনশায়েন্স। বিবেকহীনতা তাঁদের বড়ই নিরাপদে রেখেছে, রাতে তাঁরা নিশ্চিন্তে ঘুমান।


বি.দ্র. আরো পড়ুন [link|http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/20340|GLv
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×