তানভীরকে মাটি থেকে উঠালাম গিয়ে, বাকিদের বললাম এইটা কি?
যাস্ট ফান ম্যান, ইজি।
তানভীর আমারে ধইরা বলে ওরা বন্ধু মানুষ জোক করতাছে,
মেজাজটা বিলা হইলো, কইলাম চুতমারানি তোমার হোগায় লাথি মারতাছে এইটা জোক না, এইটারে কৌতুক কয় না,
আমি কিছু মনে করি নাই, ওরা মজা পাইতেছে, আমিও মজা পাই।
শালার পুতরে কি কমু আর, কইলাম কথা না কইয়া তুমি গিয়া শুইয়া পড়ো,ওকে গিয়া সোফায় ফেলাইলাম,জনগন কিছুক্ষন থমকে ছিলো, ও সোফায় গিয়া পড়লো আর ঘুমাইলো,
হইতে পারে এইটা আমার তাৎক্ষনিক মানিসক অবস্থার ফলাফল কিংবা এট দিনের মাতালসঙ্গের অভিজ্ঞতা, মাতালদের হাসির স্বাভাবিক সৈন্দর্য্য নেই। দিলখোলা মাতাল হাসির ভেতরে মানুষের হাসির সচেতন সীমাটা অনুপস্থিত। সবাই হাসছে,বিকাল বেলা এক দোকানে গিয়ে শিখদের পাগড়ি বাঁধা শিখেছি, ততটা কঠিন কিছু না, বরং আমার মতো নির্বোধ যখন সাহস করে বাঁধার চেষ্টা করে সফল হয়েছে তখন বিষয়টা তেমন জটিল না মেনে নিতেই হবে।
সবার ঠিক পাগড়ী কেনার সৈভাগ্য হয় নি, তবে এখানে আসার পর প্রচুর শাড়ী কিনেছে মানুষজন, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে শাড়ী কেনা হয়েছে, সেই শাড়ীর পাগড়ী বানানোর চেষ্টা চলছে, লাল একটা ওড়না কিনেছিলো, ওটা দিয়ে প্রথম পাগড়ী বাঁধা হলো। সিস্টেম সহজ, শুধু পাগড়ীর পেছনে ঝুল থাকবে কিনা এইটা ঠিক করতে হয়, যদি ঝুল থাকে তাহলে ঐ ঝুলটা প্রথমেই পেছনে রেখে এর পর এখাতে ধরে রেখে অন্য হাতে প্যাঁচানো শুরু করতে হবে ওড়না, মাথার চারপাশে কয়েক প্যাঁচ দিয়ে যখন শেষ হয়ে আসবে তখন অন্য মাথা গুঁজে দিতে হবে এই প্যাঁচ গুলোর ভেতরে, কে কত সুন্দর করে প্যাঁচ দিতে পারে তার উপর নির্ভর করবে তার পাগড়ীর সৈন্দর্য্য, আর ঝুল ছাড়া হলে একহাতে ওড়না র এক মাথা ধরে অন্য মাথাকে একই ভাবে প্যাঁচাতে হবে।শেষ হলে প্যাঁচের ভেতরে গুঁজে দেওয়া, এই গুঁজে দেওয়ার কাজটাতে পার্ফেকশন লাগে, কারনঐ সময়টাতে প্যাঁচে গেঞ্জাম লাগার সম্ভবনা বেশি।
আমরা সবাই মেয়েদের কাছ থেকে শাড়ী ওড়না ধার নিয়ে পাগড়ি বাঁধছি নিজের মতো। এখানের বিখ্যাত উটের চামড়ার স্যান্ডেল পড়ে পাগড়ি পড়ে একটা আলাদা ভাব নেওয়ার চেষ্টা চলছে, তবে দোকানের মানুষগুলো এক্সপার্ট। ওদের পাগড়ী বাঁধতে লাগে 30 সেকেন্ড, ধামাধাম পাগড়ী বেঁধে দেয়। সে রকম একটা পাগড়ী সবাই ভাগ করে পড়ছে, ছবি তুলছে, শমিকের পেটে ভালোই জিনিষ পড়ছে, যদিও ওর ভাব নিচ্ছে ওর কিছু হয় নি, তবে কেউই নিজেকে মাতাল ভাবতে চায় না জগতে।
ট্রাইপডে ক্যামেরা রেখে অনেকক্ষন ধরে ফোকাস হলো, ছবি তোলা হবে, বিছানার উপরে সোনিয়া, হাতে একটা গেলাসে বীয়ার, তার পাশে বাবু, ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে, তার পাশে রিম্পি, বাবুর বার্গারের বন হয়ে শুয়ে আছে, ওদের সামনে মর্তুজা, রুবেল, শমিক বিছানার সামনে, ওর পাশে লুকু, ও আপাতত বন্টনের দায়িত্বে আছে, সোফার উপরে তানভীর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, মাতালের ঘুম, তার সামনে জামাল,
আমি চেয়ারে গিয়ে বসার পর আমার ডান দিকে জসিম আর বাম পাশে যুঁথি, যুঁথির হাতে জিনের গ্লাস। গসিম হালকা মাতাল, আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বসে আছে। ওর মাতলামি যত বাড়বে ওর হাত তত চঞ্চল হবে, আপাতত আমার চুল নিয়ে গুতাগুতি চলতেছে ,মাতালত্ব বাড়লে একে একে শার্টের বোতাম এর পর আঙ্গুল এইসব নিয়ে গুতাগুতি করবে, অনেক গল্প চলছে, যুঁথির কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে জোরদার, ও হাসচে, হাত এলিয়ে হাসছে, আমি কোনোটাতেই অংশগ্রহন করতে পারছি না, চুপচাপ সিগারেট টানছি, জসিমকে সিগারেট ধরিয়ে দিতে হচ্ছে, ও সিগারেট টানছে, একবার ছাই পড়লো আমার গায়ে, কিছুই বলার নাই, মাতালকে বলা যায় না ঠিক মতো ছাই ফেল ব্যাটা।
জেমস বন্ডের ছবিতে দেখায় ওরা মদের ভেতরে সিগারেটের ছাই ফেলে খায়, আমি যদিও নিশ্চিত না কারনটা কি, তবে জসিম এ চেষ্টা করছে , মদের গ্লাসে ছাই ফেলে মদ খাচ্ছে, ওটাতে নাকি পিনিক বাড়ে। কোনো রকম তর্কে যাচ্ছি না সবাই সঠিক এইখানে আজ রাতে কেউ কোনো ভুল করতেছে না।
যুঁথিকে সিগারেট ধরিয়ে দেওয়ার পর সে ছাই ফেলটে গিয়ে সমস্ত সিগারেট ফেলে দিলো পানি গ্লাসে। প্যাকেটে আমার সিগারেট কম, এখানে যাভাবে টানতেছে তাতে রাজার স্টকও কম হয়ে যাবে।
সোনিয়াকে নিয়ে ফাজলামী চলছে, ওর বাবা মা আবার একটু মুসুল্লি টাইপ, ওর বাপ যদি দেখে দুই ছেলেকে বগলে রেখে ও হাতে মদের গ্লাস নিয়ে বসে আছে তাহলে ওর বাপ হার্ট এটাকে মরে যাবে না কি ওকে ত্যাজ্য করবে এটা নিয়ে কিছুক্ষন তর্ক হলো, রিম্পি বেচারার কপাল খারাপ, ওকে কেউ মেয়ের মর্যাদা দিলো না, অবশ্য ওর প্রিয় শব্দ খাইস্টা, কিছু হইলেই সে এই কথা বলে, এখনও বলছে, কি উপলক্ষে কে জানে, খাইস্টামি করতে চাইলে অনেক রকম খাইস্টামিই করা যায়। পায়ে গুটা দেওয়া বা সুরসুরি দেওয়াও খাইস্টামির পর্যায়ে পড়ে, এখন কি কারনে এই বানী আসলো এইটা হিসাব করে দেখতে হবে।
2টা সিগারেট বিসর্জিত হওয়ার পর আমি আঁতকে উঠলাম, যুঁথিকে বললাম, এর পর যদি ছাই ফেলার ইচ্ছা হয় আমাকে বলবে, আমি তোমার হয়ে ছাই ফেলে দিবো, এইভাবে সিগারেট নষ্ট করলে টান পড়বে। আমার এক ঘাড়ে মাথা রেখে বসে আছে জসিম, আমার পা ছিলো সোফার উপরে সেখানে চামে এসে ঘুমিয়েছে তানভীর, আমার বাম ঘাড়ের উপর হেলান দিয়ে আছে যুঁথি, আজ আমার মাতালমঙ্গল কাব্য রচনা হচ্ছে,হাসির শেষ পর্যায়ে আর কিছুই খুঁজে পাওয়া গেলো না, আগামি কাল সকালে আবার কোনো এক দুর্গে যাইতে হবে। চিতোরের দুর্গ বা রানা প্রতাপের দুর্গ এমন কোনো ঐখিাসিক ব্যাক্তিত্বের বিষয়। অতএব সবাই কে যেতে হবে যার যার রূমে, যুঁথি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, একবার চেষ্টা করে আবার ধপাস করে বসলো চেয়ারে। ওকে কেউ পৌঁছে দিবে কিনা জানি না, আমাদের কয়েক রুম পরে স্যারেদের রুম, টাদের রুমের সামনে দিয়ে যেতে হবে। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলো একজন যুঁথি তুমি ঠিক মতো যাইতে পারবা তো। না কি পৌঁছায় দিবো।
না না লাগবে না আমি ঠিক আছি, হা হা হা, বাই বাই, সকালে কথা হবে, যুঁথি টলটে টলটে ঠিক মতোই তার রূমের দরজা পর্যন্ত পৌঁছালো। আইভির সাথে তমাল ছিলো, রুবেলও মাঝে কোন একটা সময় গিয়ে ঐ ঘরে ডেরা গেড়েছে, শালার অবস্থা।
সারারাত ঘুমানোর পর সকাল বেলা দুর্গ ভ্রমনে যাইতে হবে। নাস্তা করে সবাই প্রস্তুত, রাজস্থানের লোকজন সৈনিক হিসাবে বিখ্যাত, তাদের গৌরবময় অতীত আছে, তারা কখনই পদানত থাকতে চায় নি, সারাক্ষন স্বাধীনতার লড়াই করেছে তারা। দুর্গের কাছাকাছি গিয়ে মাথায় হাত দেওয়ার অবস্থা, এইটা পুরা একটা শহর, দেয়াল ঘেরা শহর। কয়েক ধাপের দেয়াল আছে, প্রথম দেয়ালটা পাহাড়ের নীচের দিকে, সেখানে প্রশস্ত রাস্তা, সামনে একটা খাল আছে, সাঁকো আছে, সেই সাঁকো তুলে ফেললে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বাইরের থেকে, মধ্যযুগীয় কামান দাগার সাথে এখনকার মিসাইল ছুড়ে মারার পার্থক্য অনেক,তবে বেছে বেছে দুর্গম এলাকাগুলোটে দুর্গ বানানোর সুবিধা হইলো বিপক্ষ শিবির নিজস্ব সামরিক স্থাপনা ঠিক মতো বসাতে পারে না, একটা সফল দুর্গের বিকল্প খাদ্য সরবরাহ রুট লাগে ,লাগে নিজস্ব পানির সরবরাহ, এই দুর্গ নিশ্চিত ভাবেই এই সব ব্যাবস্থা আছে, দুর্গ অবরোধ করে বসে থাকলে বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে অন্তত টিকে থাকার জন্য এই 2টা দ্্রব্য লাগে সৈনিকদের।
মোটা মোটা দেওয়াল দিয়ে পৃথক এই দুর্গে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে মজাই লাগছে, মনে হচ্ছে কোনো প্রাচীন রাজা সদলবলে এখানে পদার্পন করেছে, চারপাশে বিভিন্ন বাদ্য বাজছে, সবাই আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য এখানে সার বেঁধেদাঁড়িয়ে আছে, পুরবাসী সুন্দরীরা সব দেয়ালের ফাঁক দিয়ে দেখছে। এইসব রোমান্টিক কল্পনা করতে করতে উপরে উঠছি। বেশ অনেকটা হাঁটতে হলো। অবশেষে মূল ভবনে ঢুকলাম, এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে দুরে আমাদের 42 সীটের বাস, অবশ্য লাগছে খেলনা বাসের মতো।দর্শনার্থি কম নেই, অনেকেই এসেছে, গাইড দেখাচ্ছে কোথায় কে কি করতো, ঘুলঘুলি বসানো দেওয়াল, আমি শমিক লুকু ব্যাস্ত হয়ে খুঁজছি টয়লেট।
শালার রাজার বাসায় টয়লেট নাই এইটা কোনো কথা। আমার নিজের শহরে একটা রাজবাড়ী ছিলো, সেখানে আমি প্রায় 5 দিন ঘুরাঘুরি করে একটা টয়লেট খুঁজে পাই নি, ওদের রানীদের জন্য আলাদা পুকুর ছিলো, সে পুকুরের পাশে গিয়ে বসেছি, তবে জীবনে উচ্চমার্গিয় ভাবনাভাবার জন্য একটা টয়লেট দরকার, ওটার কোনো নিদর্শন চোখে পড়লো না, এখানেও তেমন কোনো নিদর্শন পেলাম না, এ ঘর ওঘর ঘুরে একটা জায়গা দেখলাম চার পাশ ঘেরা, কোনো আউটলেট নেই তবে এটা টয়লেটের সাম্ভাব্য একটা অবস্থান হতে পারে । হলে হবে না হলে নাই, আগে মুতি, বেশ আয়েশ করে দেয়লা ছবি এঁকে এঁকে মুতলাম, এর পর শমিক লুকুও একই ভাবে মহাজ্ঞানি মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন চিরস্বরনীয় পথে গিয়ে মহারাজের কল্পিত টাট্টি ঘরে মুতে নিজেকে মহারাজের সমকক্ষ করে ফেললো।
দেখার মতো কি আছে আমি জানি না। ঘরের পর ঘর, চিকন সিঁড়ি, একসাথে 2 জন উপরে উঠা যায় না এমন সংকীর্ন, মাঝে ফাঁকা, স্থান, ঐ ফাঁকা জায়গাকে ঘিরেই চারপাশে দেয়াল উঠেছে। মাঝের উঠানে সরাসরি আসা যায় সিঁড়ি বেয়ে উঠলে, হয়তো দুর্গ পতনের পর এই একটা জায়গায় শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত রাজপুত বীরেরা লড়াই করতো। অবশেষে যদি হার হতো তাহলে এদের পুরবাসীনিরা সোজা মাঝের উঠানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতো, জান দিবো তবু মান দিবো না, স্বাধীনতা দেবো না।
ওরা করতেই পারে, বড়ই তেজী জাত।
এর পর গেলাম অন্য এক জলমহালে, শালার রাজাদের এই একটা বিষয়ে আমি খুব ইর্ষাকাতর। একটা বিশাল ঝিলের মাঝে একটা সুন্দর বাসা বানিয়েছে, গরম কালে থাকার জন্য, বিহারের জন্য, সখিগনকে নিয়ে সেখানে একটু আমোদ করতো, চমৎকার জায়গা, যতদুর চোখ যায় চারপাশে পানি আর পানি, মাঝে একটা ঘর, এমনও হতে পারে ওটা ঝিলের মধ্যেই বানানো হয়েছে, অথবা অন্যটাও হতে পারে, বাসাটা বানিয়ে চারপাশ খুঁড়ে ঝিল বানানো হয়েছে, 2য়টাই সম্ভব হতে পারে। ওদের জনবলের অভাব ছিলো না, লাগিয়ে দিলো 10 হাজার লোককে, খাল খুঁড়ো, রাজার আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা কার আছে, এখানের লোকজন এসে খাল খুঁড়ে সাগর বানিয়ে ফেললো। রাজা নৌকা নিয়ে প্রসাদে গিয়ে কেলী করবে আর জনগন এপাশে দাঁড়িয়ে কলা ছিলবে, এমনটাই নিয়ম সব খানে।
আমিও যদি কোনো দিন এমন আকাশ পাতাল বড়লোক হই তাহলে আমিও এমন একটা বাসা বানাবো, চীনের সম্রাটদের গ্র ীষ্মপ্রসাদের ছবি দেখেছি, বড়ই মনোহর ছবি, এখানে দেখলাম রাজপুত রাজাদের, চারপাশে জলছলোচ্ছল শব্দ, জলবাহিত ঠান্ডা হাওয়া, আহা কবিতার মতো সঙ্গম হবে ,
বেনিয়ার জাতেরা এই জলমহালের পাশেও একটা বিশাল দোকান খুলে বসে আছে, রাজস্থানের হ্যান্ডিক্রাফটের দোকান। সেখানে হানা দিলো লোক জন, এবার চুনরি আর শাড়ির কেনা হচ্ছে, সিরিয়াস ভঙ্গিতে দামাদামি চলছে, 2500 টাকা। এই পক্ষ বলছে 500
আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি অবশেষে 700 রুপিতে আপোষ হচ্ছে। শালারা পুরা বাঞ্চোৎ দেখি, 5 গুন দাম চায়।
অনেক কেনাকাটা শেষে ভর সন্ধ্যায় আবর ফিরলাম, এখান থেকে রওনা দিতে হবে স্টেশনে, কোলকাতার ট্রেন ধরতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



