গত মাসে একটা লিখা লিখেছিলাম “প্রবাসের কষ্ট দেখুন” সবাই দু:খ করেছিল। আজ এই লিখা পড়ে হয়তো অনেকে খুশী হবেন। ১৯/০৩/২০০৯ইং তারিখে রাতে ডিনার করতে গিয়েছিলাম Mc Donald’s এ ।খানা খেয়ে বাহির হয়ে গাড়ীর কাছে আসতে দেখি আমার গাড়ীর পাশে একটা লোক গাড়ী পরিষ্কার করছে। মাথায় দেখলাম বঙ্গ বীর কাদের সিদ্দিকীর সেই প্রিয় “গামছা”টি। কাদে একটা ১০০% সুতার লাল শালু কাপড়। বুঝতে আর বাকী রইল না যে ওনি বাংলাদেশী।
হযরত আলীর কষ্টে কথা শুনলাম এবার ওনার কথা একটু শুনি ওনি কি অবস্থায় আছে। ওনার সাথে আমি ৩১ মিনিট আলাপ করে যাহা জানতে পারলাম তাহলো:
নাম:আবদুল সহিদ ,দেশের বাড়ী বি,বাড়ীয়া,বান্চারাম পুর থানায় । তার চার মেয়ে,এক ছেলে। খুব শুখেই আছেন। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমেয়ে বাকী মাএ ক্লাস নাইনে পড়ে। ছেলেটা দেশে লেখা পড়া করে না রাজনীতি করে।এস,এস,সি পরীক্ষা ও দেয় নাই।আত্নীয় স্বজন সবাই বলল বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য।তাই ১৭ বছর বয়সে ছেলেকে সৌদি নিয়ে এসেছে। ছেলে এখন ভালো চাকুরী করে।বাংলা টাকায় ৩০হাজার টাকা বেতন পাই। ছেলে এসছে আজ ২ বছর। ছেলের এখন স্বাস্থ্য হয়ে গিয়াছে। গত ৬মাস আগে ছেলেকে বিয়ে করাইয়াছি টেলিফোনের মাধ্যমে।চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। মেয়ের বাবা ও কুয়েতে থাক।
আবদুল সহিদ চাকুরী করেন রিয়াদে নাম করা কোম্পানীতে ক্লিনিয়ার হিসেবে। বেতন ৪০০ রিয়াল খাওয়া নিজের, থাকা মালীকের।২ বছর পর ছুটি পাই।দেশে না গেলে টিকিটের টাকা দিয়ে দেয়।সৌদি এসেছে ১৯৯৩ ইং সালে।এখনো এই কোম্পানীতে আছেন। বলল যে কোম্পানী খুব ভালো। আমাদেরকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়। দুপুর ২টায় অফিস ছুটি হওয়ার পর বাসায় এসে খাওয়া খেয়ে বাহির চলে আসি। রাত ৯টায় গাড়ী আসবে আবার বাসায় চলে যাব। সে মোট ১৫টা গাড়ী পরিষ্কার করে একদিন পর একদিন। একটা গাড়ী থেকে সে মাসে পাই ৫০রিয়াল(৯০০ টাকা)।২টা সৌদি বাসা ক্লিন করে মাসে পাই ৪০০ রিয়াল। সব খরচ বাদ দিয়ে তার মাসে থাকে ২০,০০০ টাকার মতো। ছেলের আর তার মোট মিলিয়ে সে প্রতি মাসে ৫০,০০০ হাজার টাকা দেশে পাঠাই। ছেলে তাকে শুধু বলছে দেশে ছলে যাওয়া জন্য। আর বিদেশ করার প্রয়োজন নেই। ছেলেই সব দেখবে।সে ও রাজী হয়েছে আর মাএ ৬ মাস সে একেবারে দেশে চলে যাবে। আর বিদেশ করবে না। যাওয়ার সময় ছেলেকে দেশে নিয়ে যাবে বড় করে অনষ্ঠান করে একসাথে ছোট মেয়ের ও বিয়ে দিয়ে দিবে। তাই তাকে আরো ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। সে যদি ও কষ্ট করে কিন্ত তার চেহারার মাঝে কোন কষ্টের দাগ নেই। সংসার আর পরিবারকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে ৫৫ বছরে চুল,দাড়ি সব সাদা হয়ে গিয়াছে। প্রবাসে যারা আছে তারা প্রাই সবাই এ রকম। ভালবাসার মানুষটিকে রেখে প্রবাসের একাকীএ জীবন কেমন তাহা বুঝানো সম্ভব না যারা প্রবাসে আছে তারাই একমাএ জানে।
আবদুল সহিদ ৬ মাস পর প্রবাসের ইতি টানতে যাচ্ছে। তাকে বললাম দেশে যাইয়া কি করবেন । তার সোজা উওর নাতী আর নতনীদের নিয়ে জীবনের বাকী সময় টুকু আনন্দ উল্লাস করে কাটিয়ে দিব। প্রবাসের টাকা দিয়ে যে জাগয়া জমি ক্রয় করেছি তাহা দেখা শুনা করলেই বাকী জীবনে কাহরো কাছে হাত পাততে হবে না।আমি জীবনে যেটা কল্পনা করি নাই তার ছেয়ে বেশী পেয়েছি আল্লাহর কাছে লাখো শোকর। আমি খুব সুখী । এর ছেয়ে বেশী সুখী আমি হতে চাই না ভাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




