somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোপেনহেগেনের লড়াই

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোপেনহেগেনের লড়াই
জলবায়ু পরিবর্তন
হুগো শাভেজ
কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের ১৫তম জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে সারাবিশ্ব এক ঐতিহাসিক লড়াই প্রত্যক্ষ করল। ডেনমার্কের অসাধারণ সুন্দর, বরফের প্রলেপ দিয়ে ঢাকা এই রাজধানীতে যে লড়াই শুরু হয়েছে তা গত ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার শেষ হয়ে যায়নি। আমি আবারও বলছি, কোপেনহেগেনে পৃথিবীকে রক্ষা করার চূড়ান্ত লড়াই কেবল শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাবনার জগতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ব্রাজিলের মহান স্বাধীনচেতা ধর্মতাত্তি্বক এবং পরিবেশ বিষয়ে কর্তৃত্বমূলক কণ্ঠস্বর লিওনার্দো বফ তার 'কোপেনহেগেনে কী ঝুঁকি রয়েছে' শীর্ষক প্রবন্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লিখেছেন : আমরা কোপেনহেগেন থেকে কী আশা করছি? শুধু একটি সামান্য স্বীকারোক্তি_ আমরা একে অব্যাহত রাখতে দিতে পারি না এবং একটি সামান্য উক্তি : এ বিষয়টিকে পরিবর্তন করতে হবে আর শুধু এ কারণেই আমরা ভেনিজুয়েলার পক্ষ থেকে, বলিভিয়ান অ্যালায়েন্সের (এএলবিএ) পক্ষ থেকে এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, মানবতাকে রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের সঙ্গে সর্বোপরি ধরিত্রী মাতাকে রক্ষার জন্য কোপেনহেগেন গিয়েছিলাম।
ইভো, যে আমাদের বলিভিয়ান অ্যালায়েন্সের অন্যতম একজন পুরোধা, তিনি বিজ্ঞের মতো বলেছেন, কী বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে, তার মাধ্যমে আমরা হয় বেঁচে থাকতে পারব অথবা মৃত্যুবরণ করব। বিশ্বের সব দৃষ্টি কোপেনহেগেনে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল : ১৫তম বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে আমরা সেই মানদণ্ড নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম, তার মাধ্যমে মহান মুক্তিযোদ্ধা সাইমন বলিভার পৃথিবীর ভারসাম্য তৈরির কথা চিন্তা করেছিলেন, যে ভারসাম্য পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় তৈরি করা সম্ভব নয়।
কোপেনহেগেনে আমাদের আসার আগে আফ্রিকান ব্লক, যারা গ্রুপ-৭৭ দ্বারা সমর্থিত, অভিযোগ তুলল_ ধনী রাষ্ট্রগুলো কিয়োটো প্রটোকল লঙ্ঘন করেছে। এটাই একমাত্র মোক্ষম অস্ত্র যার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অভিযুক্ত করা যায় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রক্ষা করা যায়।
কোপেনহেগেনের রাস্তায় যে লড়াই শুরু হয়েছে যার অগ্রভাগে তরুণরা, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আমি দেখতে এবং অনুভব করতে পারছি যে, গত ১৬ ডিসেম্বর ডেনিশ রাজধানীতে আমার আসার পর থেকে তরুণদের যে অন্য পৃথিবী তৈরির লড়াই তা শুধু সম্ভবই নয়; বরং এটা একান্ত প্রয়োজন।
কোপেনহেগেনে শুরু থেকেই যে কার্ডগুলো টেবিলে রাখা ছিল তা সবাই দেখতে পেয়েছিল। যেসব কার্ড পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার বর্বরতা এবং নির্বুদ্ধিতাকে ধারণ করে, সেগুলোকে তাদের যুক্তিতে সরানো যাবে না, যে যুক্তি পুঁজির, যা কেবল মৃত্যু এবং ধ্বংস ডেকে আনে।
অন্যদিকে জনগণের কার্ডগুলো মানব মর্যাদা ধারণ করে, পৃথিবীকে রক্ষা করতে চায়, একটি মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে যে ব্যবস্থায় পরিবেশ দূষিত হয় এবং সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসে, সেই সামগ্রিক ব্যবস্থাকেও পরিবর্তন করতে হবে।
একদিকে ব্যবসায়িক এবং উপযোগবাদী সভ্যতার জয় বা এমন এক সভ্যতার জন্ম দেয়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানবতাকে ভুলে বসা হয় এবং অস্থিতিশীল বিষয়গুলোকে অন্ধভাবে বেছে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে ওইসব 'অসভ্য' যারা ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়ায় বিশ্বাস করে এবং তাকে মৌলিকভাবে পাল্টে দেওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়, তার মাধ্যমে মানবকল্যাণের কাজকে বিস্তৃত করা হয় এবং পরিবেশ দূষণের ব্যাপারগুলোকে প্রশমিত করা যায়। এরা মানব অধিকার রক্ষার ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকে। কমরেড ইভো মোরালেস এই লড়াইকে ঊধর্ে্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, যদি আমরা ধরিত্রী মাতার অধিকারগুলো না রক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারব না।
সমাজতন্ত্রই একমাত্র সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান বিকল্প_ এ কথাটির পুনরাবৃত্তি করতে আমি কখনও ক্লান্ত হই না। এ কথাটি আমি কোপেনহেগেনে সব প্রতিনিধির সামনে প্রতিটি বক্তব্যে বলেছি, যে অনুষ্ঠানটি গত দুইশ' বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচ্য, আমরা যদি এই হৃদয়হীন এবং অধঃপতিত মুনাফার প্রতিযোগিতাকে থামাতে চাই তাহলে এর পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
'সভ্যদের কেউ' এরকম একটি প্রকল্প যার মাধ্যমে সুখের অংশীদার হওয়া যায়, তাতে ভীত কেন? তারা ভীত, কেননা এরকম সুখের অংশীদারিত্ব কখনও মুনাফা উৎপাদন করতে পারে না। এ সত্যটি কোপেনহেগেনের রাস্তায় অংশগ্রহণকারী বিক্ষোভকারীদের স্লোগানে মূর্ত হয়ে উঠেছে : 'যদি জলবায়ু ব্যাংক হতো, তাহলে তারা এটি রক্ষা করত।'
তথাকথিত 'সভ্যদের কেউ' বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে; কেননা এটি তাদের জীবনের সর্বগ্রাসী রূপ পরিবর্তিত করবে, তাদের আত্মকেন্দ্রিক ভোগ বিতাড়িত করবে। তাই তো তাদের কঠিন হৃদয়কে স্পর্শ করা যায় না; কেননা তা অর্থের স্পন্দন ছাড়া কোনো কিছুতেই সাড়া দেয় না।
সে কারণেই মার্কিন সাম্রাজ্য দেরি করে ১৮ ডিসেম্বর হাজির হলো, প্রতারণার শামিল সামান্য কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল এবং তাদের মুখে যে দোষের চিহ্ন ছিল তা মুছে ফেলার চেষ্টা করল। এই হীন কৌশলের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় চিন্তাবিদ বন্দনা শিবা স্পষ্টত এবং সাহসিকতার সঙ্গে বড় সত্যটি বলে ফেলেছেন : 'আমি মনে করি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে দাতা হিসেবে উপস্থাপন করা বন্ধ করুক এবং নিজেকে দূষণকারী হিসেবে পরিচিত করুক। একজন দূষণকারীকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং অবশ্যই তা তার প্রতিবেশগত ঋণের মাধ্যমে। এটি কোনো বদান্যতা নয়, এটি ন্যায়সঙ্গত।'
আমি অবশ্যই বলব : কোপেনহেগেনে ওবামামোহ চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হওয়া উচিত। তিনি সাম্রাজ্যের প্রধান হিসেবে এবং নোবেলযুদ্ধ পুরস্কারের বিজেতা হিসেবে নিজের অবস্থানকে নিশ্চিত করেছেন। দুই ওবামার বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে।
শুক্রবার ১৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের শেষ দিনে ওবামা উপস্থিত হলেন এবং গণতান্ত্রিকভাবে একমত হলেন না_ ওবামা এই মঞ্চে আলাদাভাবে আরোহণ করলেন। জাতিসংঘের কার্যপ্রণালি আবারও লঙ্ঘন করলেন এবং কিয়োটো প্রটোকলের বৈধতাকে অস্বীকার করলেন। কিয়োটো আমাদের কাছে অতি সম্মান এবং মূল্যবান ব্যাপার।
ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে কোপেনহেগেনে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলো না। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশগুলো নিজেদের উৎপাদন এবং ভোগের পদ্ধতি পাল্টাতে চায় না যা অনেকটা আত্মহত্যার মতো চেতনাহীন কাজ_ 'পৃথিবী গোল্লায় যাক, তা যদি আমার প্রাধান্য এবং জীবনপদ্ধতির জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে।' এটাই তাদের পথচলার নির্দেশনা। এটাই কঠিন সত্য যে, যাদের ঐতিহাসিক এবং অপরিহার্য অবদানের ওপর তারা টিকে আছে, তাদের কোনো কথাই তাদের কানে যায় না।
কোপেনহেগেনে শেষ হয়ে যায়নি, আমি পুনরাবৃত্তি করে বলছি, এটি কেবল শুরু হলো : পৃথিবীকে রক্ষার বিতর্কের জন্য দরজা উন্মুক্ত হলো। লড়াই চলবে।
আমরা আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা সাইমন বলিভারের ১৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি। আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর আমাদের বলিভিয়ান অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ডেনমার্কে অবস্থানকারী বিশ্ব সামাজিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সভা করেছি। সেখান আমি অনুভব করলাম, বলিভার কেবল ভেনিজুয়েলা এবং আমাদের আমেরিকার নিজস্ব সম্পদ নয়, তিনি ক্রমেই বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন।
এটি বাস্তব এবং সত্য যে, বলিভার বেঁচে আছেন! কোপেনহেগেনে এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে, তার অনুপ্রেরণা আমাদের এখনও সাহস জোগাবে।
এবং এবার তিনি বিজয়ী হবেন।
এবার আমরা বিজয়ী হবো।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×