somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লবী রবি নিয়োগীর জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধাঞ্জলি
বিপ্লবী রবি নিয়োগীর জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

রতন সিদ্দিকী | তারিখ: ২৯-০৪-২০১০
আজ ১৬ বৈশাখ। ২৯ এপ্রিল। অগ্নিযুগের বিপ্লবী আজীবন সংগ্রামী কমরেড রবি নিয়োগীর এক শত অথবা এক শত একতম জন্মবার্ষিকী। ১৯১০ বা ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি শেরপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরেই তিনি অতিবাহিত করেন তাঁর আনন্দময় শৈশব, দুরন্ত যৌবন, বার্ধক্যসহ কারামুক্ত সমগ্র জীবন।
দীর্ঘ কারাবাসে নির্যাতিত, ত্যাগী বিপ্লবী রবি নিয়োগী ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে শেরপুরের জিকেপিএম ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন। এ সময় কলেজ ছাত্রদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা প্রবল হয়েছিল। তা হলো শরীরচর্চা ও কুস্তির অনুশীলন করা। রবি নিয়োগী ময়মনসিংহ শহরে শরীরচর্চা করা ও কুস্তি শেখার কেন্দ্রে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন কেন্দ্রে গিয়ে কুস্তি করতেন। এখানে কুস্তি করতে করতে পরিচয় হয় ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের গুপ্ত সংগঠন যুগান্তর সমিতির সদস্যদের সঙ্গে। ফলে ময়নসিংহ শহর তাঁর লেখাপড়ার কেন্দ্র থাকল না। একসময় হয়ে উঠল রাজনীতিচর্চার কেন্দ্র। যে ধীরেন সেনের আখড়াই ছিল কুস্তির কেন্দ্র তা হয়ে গেল ব্রিটিশ শাসন উত্খাতের গোপন পরামর্শ কেন্দ্র। এখানেই তিনি দীক্ষিত হন সর্বোচ্চ ত্যাগের মন্ত্রে গড়ে ওঠা গুপ্ত বিপ্লবী দল যুগান্তর সমিতির আদর্শে। বিপ্লববাদী ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার কারণে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত রবি নিয়োগী তখন বাধ্য হয়ে চলে যান কলকাতায়। ভর্তি হন বিদ্যাসাগর কলেজে।
কলকাতায় বসবাস করার সুবাধে যুগান্তর সমিতির সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি যোগাযোগ রক্ষা ও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পান। এখানে তিনি পরিচিত হন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রসিদ্ধ নেতাদের সঙ্গে। সান্নিধ্য লাভ করেন সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ, জীবন চ্যাটার্জির মতো সশস্ত্র বিপ্লবীদের। দলের নিয়মিত বৈঠকে অংশগ্রহণ, প্রাত্যহিক কাজ এবং অগ্রজ ত্যাগী বিপ্লবীদের সাহচর্য ও সান্নিধ্য তাঁকে খাঁটি বিপ্লবীতে রূপান্তর করে। তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করে, ভোগ-সুখ ও কামনা-বাসনা বিসর্জন দিয়ে, চরম বিপজ্জনক অভিযানে নিঃশেষে জীবন উত্সর্গ করার মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই যুগান্তরের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
এই আত্মনিবেদিত বিপ্লবীর কলেজে লেখাপড়া করা হলো না। মনে হলো যে জাতি পরাধীন, শৃঙ্খলিত, সে জাতির একজন হয়ে লেখাপড়া করে ব্যক্তিগত সুখে মগ্ন থাকায় আনন্দ নেই। ভোগে তৃপ্তি নেই। পরম শান্তি দেশের জন্য জীবন উত্সর্গ করার মধ্যে। তাই রবি নিয়োগী পরীক্ষা দিলেন না। ফিরে এলেন জন্মভূমি শেরপুরে। শুরু করলেন সার্বক্ষণিক রাজনীতি। জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দেশের স্বার্থে নেমে পড়লেন পথে।
শেরপুরে এসে সংগঠিত করতে লাগলেন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন। যুক্ত হলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে সে কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সেই তাঁর প্রথম কারাবাস। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে তিনি কারাগারে থেকেছেন জীবনের ৩৪টি বছর। বস্তুত রবি নিয়োগী আনন্দমোহন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থা থেকে ক্রমাগত বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর ফলে তিনি বারবার মামলায় পড়েছেন। কারারুদ্ধ হয়েছেন। তিনি আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে বন্দি থেকেছেন। কালাপানি নামে খ্যাত ওই জেলে থেকে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি আন্দামান থেকে প্রেরিত হন কলকাতার আলিপুর জেলে। পরে সেখান থেকে যান ময়মনসিংহ কারাগারে। মেয়াদান্তে একসময় মুক্তি পান কিন্তু মুক্তিপ্রাপ্তির পরদিনই আবার গ্রেপ্তার হন এবং দিনাজপুর কারাগারে বন্দী থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই বছর নিজগৃহে অন্তরীণ থেকেছেন। পাকিস্তান শাসনামলসহ বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সরকারের আমল ছাড়া আর প্রায় সব সরকারই তাঁকে কারারুদ্ধ করেছিল। বলা যায় একসময় কারাগারই ছিল তার স্থায়ী ঠিকানা।
উল্লেখ্য, অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা স্বামী বিবেকানন্দের ত্যাগ ও সেবার আদর্শ দ্বারা এবং গীতার ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত নিষ্কাম কর্মের ধারণা দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত ছিলেন। কিন্তু এ বিপ্লবীরা যখন মার্কসবাদে দীক্ষিত হয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন তখন তাঁরা এমন এক সমাজ পদ্ধতির কথা ভেবেছেন যেখানে মানুষ অন্যের উদ্দেশ্য সাধনের যন্ত্র হয়ে কিংবা করুণার বা সেবার পাত্র হয়ে থাকবে না। দরিদ্র নারায়ণ ধারণা থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসেন। তাঁরা ফলাকাঙ্ক্ষার বা ফল অর্জনের পূর্ণ স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম করেছেন। গুপ্ত সমিতির বিপ্লবীদের মতো কমিউনিস্ট পার্টিতে সংসার করার নিয়ম রুদ্ধ ছিল না। অনুমতির প্রয়োজন ছিল মাত্র। তিনি অনুমতি নিয়ে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে জ্যোত্স্না রানী মজুমদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরপরই আবার কারারুদ্ধ হন। এরপর যত সংগ্রাম—সব স্বামী-স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের নিখিল ভারত কৃষক সভার ঐতিহাসিক সম্মেলন, তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক প্রথাবিরোধী আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের সংগ্রামসহ মেহনতি মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। যার কারণে তিনি নির্যাতিত হয়েছেন। তিনি সব নির্যাতন সহ্য করেই সমাজ বদলের সংগ্রাম করেছেন।
রবি নিয়োগী খুদে জমিদার পরিবারে জন্ম নিয়েও বসবাস করেছেন সাধারণ মানুষের মতো। আজীবন থেকেছেন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। স্বীয় বিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিরানব্বই ছুঁয়ে ছিলেন। এমন দীর্ঘ বিশ্বাসী মানুষের বড় অভাব এখন। এমন পরচিন্তায় ক্লিষ্ট মানুষের খুব আকাল এখন। তাই তাঁর জন্ম দিবসে প্রত্যাশা করি দেশ ও জাতির স্বার্থে অসংখ্য রবি নিয়োগীর। জানাই তঁকে লাল সালাম। বিপ্লবী রবি নিয়োগী লাল সালাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×